জার্মানি, ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় জার্মান চ্যান্সেলরের আসন্ন চিন সফর প্রবল বিতর্কের মুখে পড়েছে৷ এক সংবাদভাষ্যের মাধ্যমে শলৎস বিতর্ক উপেক্ষা না করেই এই সফরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন৷ মাত্র ১১ ঘণ্টার জন্য চিন সফরে যাচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ কিন্তু তার এই সংক্ষিপ্ত সফরকে ঘিরে দেশে-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া পরিবর্তিত বিশ্বের বাস্তবতা তুলে ধরছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ানের প্রতি হুমকির মতো কারণে আজ রাশিয়া ও চিন আন্তর্জাতিক আঙিনায় কতটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ শলৎস বেইজিং যাওয়ার আগে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জার্মানিকে সতর্ক করে দিল৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বৃহস্পতিবার জার্মানিতে জি-সেভেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের পর তিনিই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম শীর্ষ নেতা হিসেবে চিন সফরে যাচ্ছেন৷হামবুর্গ শহরের বন্দরের তিনটি টার্মিনালের বেসরকারি মালিকানায় এক চিনা কোম্পানির অংশগ্রহণের মতো আপাতদৃষ্টিতে ‘তুচ্ছ' বিষয়ও পশ্চিমা বিশ্বে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বুধবার জার্মানিকে সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ জার্মানির মধ্যেও জরুরি অবকাঠামোর ক্ষেত্রে চীনের আদৌ কোনও ভূমিকা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ এমনকি জোট সরকারের মধ্যেও চিনা কোম্পানির অংশগ্রহণের তীব্র বিরোধিতা দেখা গিয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত নিজস্ব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে জার্মান চ্যান্সেলরকে বাধ্য হয়ে কসকো কোম্পানির মালিকানার অনুপাত ২৪.৯ শতাংশে কমিয়ে আনতে হয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না৷এমন প্রেক্ষাপটে চিন সফরের আগে চ্যান্সেলর শলৎস বুধবার জানিয়েছেন, তিনি মোটেই এ বিষয়ে বিতর্ক এড়িয়ে যাচ্ছেন না৷ ফ্রাংকফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং সংবাদপত্রে তিনি চিন সম্পর্কে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন৷ শলৎসের মতে, দুই পক্ষের স্বার্থ পূর্ণ হলে জার্মানি তবেই সহযোগিতা চায়৷ কিন্তু বিতর্কও এড়িয়ে যাওয়া হবে না৷ বেইজিং সফরে তিনি এমন বিতর্কিত বিষয়গুলি তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন৷ নাগরিক স্বাধীনতা, চিনের শিংচিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং মুক্ত ও অবাধ বিশ্ব বাণিজ্যের মতো বিষয় তিনি আলোচনার সূচিতে রাখবেন বলে জানিয়েছেন শলৎস৷ চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেচিয়াং-এর সঙ্গে মুখোমুখি সংলাপ অত্যন্ত জরুরি বলে জার্মান চ্যান্সেলর মনে করেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, যে কোভিড মহামারির কারণে তিন বছর ধরে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের আলোচনা সম্ভব হয়নি৷জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে জার্মান শিল্পবাণিজ্য জগতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলও চিনে যাচ্ছে৷ সে দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও জার্মানি তথা ইউরোপে সংশয় বাড়ছে৷ ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে জার্মানি রাশিয়ার জ্বালানির উপর অতিরিক্ত নির্ভর করে আজ যেভাবে বেকায়দায় পড়েছে, ভবিষ্যতে চিনের ক্ষেত্রেও একই আশঙ্কা বাড়ছে৷ জার্মানির একাধিক শিল্পক্ষেত্র ইতোমধ্যেই চিনের সঙ্গে বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে৷ শলৎস অবশ্য সমালোচকদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, তিনি চিনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমান পারস্পরিক অধিকারের উপর জোর দেবেন৷ তিনি জার্মানির সংকীর্ণ স্বার্থে ইউরোপের স্বার্থ খর্ব না করারও অঙ্গীকার করেছেন৷