শিশির গুপ্তপ্যাংগং সো লেকে অচলাবস্থা কাটানোর জন্য চিন যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটায় রাজি হবে না ভারত। এমন কথাই জানা গিয়েছে সূত্রের মাধ্যমে। চিনের সেনা কম্যান্ডাররা চায় যে ভারত ফিঙ্গার ওয়ান অবধি পিছিয়ে যাক। প্যাংগং লেকের উত্তর কূলে সিরজাপ পাহাড় থেকে যে আটটি অংশ বেরিয়ে আছে, সেগুলিকেই আটটি ফিঙ্গার হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে চিনা কম্যান্ডাররা চায় যে ভারতীয় সেনা ফিঙ্গার এক অবধি পিছিয়ে যায় অন্যদিকে লাল ফৌজ চলে যাবে ফিঙ্গার আটে। মাঝের অংশটিকে বাফার জোন বা নো ম্যানস ল্যান্ড করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। কিন্তু চিন লাদাখ সীমান্তে চুক্তিভঙ্গ করার আগে অবধি ভারতীয় সেনা ফিঙ্গার ফোরে অবস্থিত ছিল ও তারা ফিঙ্গার এইট অবধি টহল দিতে যেত। বর্তমানে ভারত ও চিনের সেনা ফিঙ্গার ফোরে মুখোমুখি অবস্থিত। অন্যদিকে চিন পরিকাঠামো উন্নতি করছে ফিঙ্গার এইট অবধি। গোগরা-হট স্প্রিংস এলাকায় মুখোমুখি দুই দেশের সেনা অবস্থিত, অন্যদিকে আকসাই চিনে পরিকাঠামো উন্নতি করছে বেজিং। কিন্তু চিনের প্রস্তাব যে ভারত খারিজ করে দিচ্ছে সেটি জানিয়েছেন এক মিলিটারি কম্যান্ডার। তিনি জানান যে চিনকে অনুপ্রবেশের জন্য পুরস্কার দেবে না ভারত। এপ্রিলের আগের পরিস্থিতি (স্ট্যাটাস কো আন্তে) ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই ভারত চাপ সৃষ্টি করবে বলে তিনি জানান। সেনা প্রধান নারভানে পূর্ব লাদাখের ফরওয়ার্ড এলাকায় গিয়ে চলতি সপ্তাহে সেনাদের মনোবল বৃদ্ধি করে এসেছেন। বুধবার যে সব অঞ্চলে সেনাপ্রধান গিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হল কৈলাশ পর্বতের ওপর রেজাং লা ও রেচিন লা চূড়ো। এগুলি ২৯ অগস্ট আগেভাগে দখল করে নেয় ভারত যাতে কোনও ভাবে চিন সেখানে না আসতে পারে। চিনের ১৯৫৯-এর দাবি হিসেবে যে সব অঞ্চল তারা নিজের বলে মনে করে, সেগুলিতে প্রবেশ করার পথ আটকাতেই ওই স্থানগুলির ওপর দখল জমায় ভারত। এদিন সেনাপ্রধান প্যাংগংয়ের দক্ষিণ কূলে সেনাদের সঙ্গে কথা বলেন। এই শীতে তাদের জন্য করা যাবতীয় বন্দোবস্ত নিজে পরখ করে দেখেন তিনি। বরিষ্ঠ সেনা অফিসার বলেন যে চিনের প্রস্তাব মানলে কার্যত ভারতের অঞ্চলের ওপর দখল ছেড়ে দিতে হবে যেখানে টহল দিত আইটিবিপি ও ভারতীয় সেনা। যেভাবে চিন আক্রমণাত্মক ভাবে জায়গা দখল করতে চেয়েছে, তার জেরেই প্যাংগং লেকে প্রথম দুই দেশের সেনার মধ্যে হাতাহাতি হয় ৫ মে। তারপর ধীরে ধীরে উত্তেজনা বেড়ে তা পূর্ব লাদাখের অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এই সাত মাসে একেবারেই পিছু হটেনি চিন। তারা চায় যে দুই দেশ একসঙ্গে সেনা পিছিয়ে নিক। ভারত যদিও বলছে যে লাল ফৌজ যখন এই পুরো ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের আগে সেনা পিছিয়ে দেওয়া উচিত। দুই দেশের মধ্যে যেটুকু বিশ্বাসের জায়গা ছিল, গালওয়ান সংঘর্ষের পর সেটুকুও নেই। দুই দেশের জেনারেলদের মধ্যে শান্তি সম্পর্কিত আলোচনার দশ দিনের মাথায় ওরকম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পথে যায় চিনা সেনা যাতে কুড়িজন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু হয়। চিনের দিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায়নি। বরিষ্ঠ এক সেনা অফিসার জানিয়েছেন যে এখনও পর্যন্ত চিনের তরফ থেকে যা প্রস্তাব এসেছে সবই কার্যত তাদের অনুপ্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়ে যাবে। এপ্রিলে সেনা যে অবস্থানে ছিল, সেটা ফেরানোর দাবিতে অনড় ভারত।