ইতিমধ্যে একাধিকবার চিনা অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার সেই নিষিদ্ধ তালিকায় যুক্ত হল আলি এক্সপ্রেস, আলিবাবা ওয়ার্কবেঞ্চ-সহ ৪৩ টি চিনা অ্যাপ।তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯এ ধারায় সেই কঠোর পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।মঙ্গলবার কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, সেই অ্যাপগুলি ভারতের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলার পক্ষে ক্ষতিকারক কার্যকলাপে যুক্ত বলে খবর মিলেছিল। তার ভিত্তিতেই ৪৩ টি মোবাইল অ্যাপকে ‘ব্লক’ দেওয়া হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ তালিকায় আছে আলিসাপ্লায়ার্স মোবাইল অ্যাপ (AliSuppliers Mobile App), আলিবাবা ওয়ার্কবেঞ্চ ওয়ার্কবেঞ্চ (Alibaba Workbench), আলিএক্সপ্রেস (AliExpress), আলিপে ক্যাশিয়ারের (Alipay Cashier) মতো অ্যাপ। কেন্দ্রের এক আধিকারিক ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-কে বলেন, ‘এবার যে অ্যাপগুলি ব্যান করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল - আলিবাবা গ্রুপের অ্যাপ, ছোটো ভিডিয়ো শেয়ারের অ্যাপ স্ন্যাক অ্যাপ, বিজনেস কার্ড রিডার অ্যাপ ক্যাম কার্ড, ট্রাক এবং চালকদের সমষ্টিগত লালামুভ।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে আগেই কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত। এবারও আলিপে ক্যাশিয়ারের মতো অ্যাপ ‘ব্লক’ নিজেদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে দিল নয়াদিল্লি। তবে অ্যাপে নিষেধাজ্ঞা চাপানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন ট্রাস্টি’-র অপর গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘নয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাপ ব্যানের নির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট কারণও বলা হয়নি। শুধুমাত্র আগের নির্দেশগুলিকে উত্থাপন করা হয়েছে। অ্যাপ ব্যান করার বিষয়টি একেবারে সাধারণ ধারায় পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক অগ্রগতি।’ এর আগে, গালওয়ান সংঘর্ষের ঠিক ১৪ দিনের মাথায় অর্থাৎ গত ২৯ জুন টিকটক-সহ ৫৯ টি অ্যাপ ব্যান করে প্রথম ‘ডিজিটাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল ভারত। সেই কড়া পদক্ষেপের পর দ্বিতীয় দফায় ২৮ জুলাই আরও ৪৭ টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছিল কেন্দ্র। সেবার মূলত আগের ৫৯ টি অ্যাপের ক্লোন ছিল। সেই তালিকায় ছিল - Tiktok Lite, BIGO LIVE Lite, VFY Lite, Helo Lite, SHAREit Lite-এর মতো অ্যাপ। পরে ২ সেপ্টেম্বর আরও ১১৮ টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই তালিকায় ছিল জনপ্রিয় গেমিং অ্যাপ ‘পাবজি’। তখন বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, ‘ঝুঁকির মাত্রা’ বিবেচনা করে ১১৮ টি মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। যা ‘ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, ভারতের প্রতিরক্ষা, দেশের সুরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলার পক্ষে ক্ষতিকারক’।মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অ্যাপের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছিল। অ্যান্ড্রয়েড ও iOS-তে কয়েকটি অ্যাপের অপব্যবহারের খবরও আসছিল। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি থেকে শুরু করে গোপনে অবৈধভাবে ব্যবহারকারীদের ডেটা ভারতের বাইরের কোনও সার্ভারে পাঠানোর অভিযোগও উঠেছে। যা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় বলে জানিয়েছিল কেন্দ্র।বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, সেইসব বিষয়ে বিবেচনা করে অ্যাপ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে, ‘এই পদক্ষেপের ফলে কোটি কোটি ভারতীয় মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং ভারতের সাইবার জগতের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।’