লকডাউনের সময় যারা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া মোরেটোরিয়ামের সুযোগ নিয়েছিলেন, তাদের জন্য সুখবর। ওই মেয়াদকালে মোরেটোরিয়ামের সুযোগ নিয়ে যারা ইএমআই দেননি, সেই অদেয় টাকার ওপর অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে না। কেন্দ্রের তরফ থেকে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দাখিল করা হয়েছে যে তারা সুদের ওপর সুদ, অর্থাৎ কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট নেবেন না। প্রাথমিক ভাবে কিন্তু কেন্দ্রের অবস্থান ভিন্ন ছিল। পরে প্রাক্তন সিএজি রাজীব মেহর্ষির কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নিল মোদী সরকার। এতে শুধু ব্যক্তি গ্রাহক নয় ছোটো ব্যবসারাও উপকৃত হবেন। কারণ দুই কোটি টাকার কম সমস্ত ঋণের ওপর এই ছাড় দেওয়া হল মার্চ থেকে অগস্টের মেয়াদকালে। হলফনামায় কেন্দ্র বলেছে যে ছোটো ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর যে ট্র্যাডিশন, সেটা বজায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যারা লকডাউনের জেরে অসুবিধায় পড়েছিলেন তাদের সমস্যা লাঘব করার জন্যেই এই সিদ্ধান্ত। এই সুদ মুকুবের আওতায় পড়বেন মধ্য, ক্ষুদ্র ও ছোটো ব্যবসায়ীরা, ক্রেডিট কার্ডের ইএমআই যারা চোকাননি, যারা পার্সোনাল লোন বা বাড়ি, গাড়ি, শিক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কিত ঋণ নিয়েছিলেন তাঁরা। এমনকী যাদের অনেক টাকা বকেয়া ছিল ও ধাপে ধাপে মেটাচ্ছিলেন, তারাও এই সুবিধা পাবেন। প্রসঙ্গত লকডাউনের সময় আরবিআই এই সিদ্ধান্ত নেয় যে আপাতত তিনমাস ইএমআই না দিলেও চলবে। তার কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে না ক্রেডিট স্কোরে, দিতে হবে না অতিরিক্ত অর্থ। এরপর অগস্টের শেষ অবধি বাড়ানো হয় মোরেটোরিয়ামের মেয়াদকাল। কিন্তু পরে বোঝা যায় ব্যাঙ্কগুলি অদেয় অর্থের ওপর এই মোরেটোরিয়ামের মাসগুলিতে অতিরিক্ত সুদ বসাচ্ছে। অর্থাৎ ( সুদ + আসলের) ওপর সুদ দিতে হচ্ছে, ফলত সুদের ওপর সুদ দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এর বিরোধিতা করে জনস্বার্থ মামলা করেছেন গজেন্দ্র শর্মা নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন যে লকডাউনের সময় মানুষের পক্ষে রোজগার করা সম্ভব নয়। তাহলে সুদ নেওয়া হচ্ছে কেন। একটি দোকান চালান গজেন্দ্র। তাঁর আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে ৩৭ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া আছে। এই পিটিশনের ভিত্তিতে আরবিআইকে নোটিস দেয় সুপ্রিম কোর্ট।আরবিআই নিজেদের উত্তরে বলে যে তারা মনে করে না যে জোর করে সুদ মুকুবের পথে যাওয়া উচিত। এতে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক অবস্থা বেহাল হবে ও লগ্নিকারীরা সংকটে পড়বেন বলে মনে করে আরবিআই। যারা টাকা রেখেছেন তাদের স্বার্থ রক্ষা করা ও ব্যাঙ্কদের আর্থিক স্থায়িত্ব দেখার কাজ তাদের, জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। এই দ্বিতীয় কাজের জন্য এটা প্রয়োজনীয় যে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও তারা লাভ করে। ঋণের ওপর সুদ ব্যাঙ্কগুলির আয়ের একটি বড় পথ যেটা তাদের আর্থিক ভাবে স্থিতিশীল ও লাভজনক হতে সাহায্য করে বলে জানায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। তবে তাদের কথায় সন্তুষ্ট হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রকে নিজেদের অবস্থান পৃথক ভাবে জানাতে বলা হয়। সুদের ওপর সুদ নিলে আদপে মোরেটোরিয়ামের কি অর্থ, সেই কথাও ওঠে। এই মামলায় যুক্ত হন নির্মাণ ক্ষেত্র, এমএসএমই সহ আরও পিটিশনকারী। গত শুনানিতে কেন্দ্র জানায় যে খুব দ্রুতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শুক্রবার হলফনমায় জানা গেল নিজেদের অবস্থান বদলেছে কেন্দ্র।