আত্মহত্যার চেষ্টাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা সত্ত্বেও ২০১৭ সালে মানসিক চিকিৎসা আইনে তা কার্যত নস্যাৎ করা হয়েছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রের জবাব তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৭ সালের ওই আইন পাশ হওয়ার ফলে আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে অভিযুক্তের ‘তীব্র মানসিক চাপ’ জনিত আচরণ বলে বিচার করে তা অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি শীর্ষ আদালতের। প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চায়, ‘আপনারা কী করে মানসিক চিকিৎসা আইন প্রণয়নের নামে ভারতীয় দণ্ডবিধি সংশোধন করে কার্যত ৩০৯ ধারাকে নস্যাৎ করলেন?’দুই আইনের মধ্যে সংঘাত সম্পর্কে জবাবদিহি করে অ্যাটর্নি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে নোটিশ জারি করেছে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ। সেই সঙ্গে এই মোকদ্দমায় সহায়তা করার জন্য শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী এএনএস নাদকার্নিকে অ্যামিকাস ক্যিউরি (আদালত বান্ধব) হিসেবে নিয়োগ করে বেঞ্চ। এই আইনি সংঘাতের দিকে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রেজ লিঙ্কস কনফেডারেশন নামে এক সংস্থার দায়ের করা আবেদন। আবেদনে জানতে চাওয়া হয়, চিড়িয়াখানায় বন্দি পশুদের খাঁচায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করে যাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় অপরাধ মামলা দায়ের করা যায় কি না। আত্মহত্যায় ব্যর্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই ধারায় করা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আবেদনে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশ করা মানসিক চিকিৎসা আইন উল্লেখ করে বলা হয়, এই আইনে আত্মহত্যা ব্যর্থ ব্যক্তির ‘তীব্র মানসিক চাপের’ কারণে শাস্তি মকুবের নির্দেশ রয়েছে।এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ রাজস্থানের সানতারা ঐতিহ্যের উদাহরণ দেয়। প্রাচীন এই ঐতিহ্য অনুসারে, অভুক্ত থেকে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করার প্রথা চালু রয়েছে ওই রাজ্যের জনজাতির মধ্যে। আদালত জানায়, ‘এই প্রচেষ্টাকে কোনও মতেই মানসিক অস্থিরতা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। বরং সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত হিসেবেই তাকে ধরা হবে।’উল্লেখ্য, সানতারা প্রথাকে ২০১৫ সালে অবৈধ ঘোষণা করে রাজস্থান হাই কোর্ট। কিন্তু পরে সেই নির্দেশ স্থগিত রেখে প্রাচীন প্রথা বহাল রাখার পক্ষে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের যুক্তি, এই প্রথা মেনে ব্যক্তিগত মোক্ষলাভের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার ব্যক্তির রয়েছে।