পুরীর কোনারক মন্দির নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বহু রহস্যের তত্ত্ব উঠে এসেছে। ১২৪৩ থেকে ১২৫৫-এর সময়কালে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল বলে ধারণা পাওয়া যায়। রাজা প্রথম নরসিংয়ের আমলে সূর্যদেবতাকে অর্পণ করে এই বিশালাকার মন্দির নির্মিত হয়েছিল। তবে বর্তমানে কোনারক মন্দিরের যে রূপ দেখা যায়, তার থেকে বাদ গিয়েছে এই মন্দিরের মূল অংশ। ত্রয়োদশ শতাব্দীর এই মন্দিরের মূল অংশের ভগ্নাবশেষ বর্তমানে প্রমাꦐণ দেয় যে সেই এলাকায় আরও এক তাক লাগানো ইমারত ছিল। প্রশ্ন থেকেই যায় বাস্তুবিদ্যার অনন্য সাধারণ এই নিদর্শনধারী মন্দিরের মূল অংশ কীভাবে ভেঙে যায়?
মন্দিরের মূল অংশ ভেঙে যাওয়ার কারণ নিয়ে গবেষণা করেছেন আইআইটি খড়গপুরের বেশ কয়েকজন গবেষক। আইআইটির জিওলজি ও জিওফিজিক্সের অধ্যাপক শৈবাল গুপ্ত ও অধ্যাপক উইলিয়াম কুমার মোহান্তি এই উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়েছেন তাঁদের গবেষণা দিয়ে। আইআইটির এই গবেষকদের মতে, কোনও নিওটেকটোনিক কার্যকলাপের জেরে মন্দিরের মূল অংশটি ধ্বংস হয়। অধ্যাপক উইলিয়াম কুমার মোহান্তি বলছেন,' কীভাবে মন্দিরের মূল অংশ ভেঙে গিয়েছে তা নিয়ে বহু জল্পনা ও তত্ত্ব ছিল। তবে কেউ বিজ্ঞানসম্মত তত্ত্ব দিতে পারেনি। আমাদের গবেষণায় পুরনো ঐতিহাসিক সমস্যাকে ভূতত্ত্বের যুক্তি দিয়ে দ✨েখা হয়েছে। যা কিছু জানা যাচ্ছে, তার থেকে মনে করা হচ্ছে, কোনও নিওটেকটোনিক কার্যকলাপই মন্দির এমনভাবে ভেঙে পড়ার জন্য দায়ী।' অধ্যাপক শৈবাল গুপ্ত বলছেন, ' এলাকায় অল্প থেকে মাঝারি পরিমাণের ভূমিকম্প যা রয়েছে সিসমিক জোন টু ও থ্রিতে, এর থেকে বার্তা পাওয়া যাচ্ছে যে, বেসমেন্টে (টেকটোনিক ক্রিপ) তাৎপর্যপূর্ণভাবে ধীর গতির একটি চলন হয়েছে। যা ইন্ডিয়ান প্লেটের উত্তরমুখী চলাচলের ফল। কোনারক মন্দিরের মূল মন্দিরের ধ্বংসের নেপথ্যে নেওটেকটোনিক গতিবিধি থাকতে পারে।' উল্লেখ্য, কোনারক মন্দিরের রহস্য ঘিরে এই গবেষণা-দলে রয়েছেন শুভময় জানা ও প্রকাশ কুমার।
উল্লেখ্য, ওড়িশার উপকূলীয় এলাকায় এখনও টেকটোনিক কার্যকলাপ চলে। মহানদী ব-দ্বীপের নিচের বেশ কিছু অংশ তার প্রমাণ দিয়ে থাকে। এর আগে ২০১৬ সালে, ইউনেস্কোর এই ওয়ার্ল্ড হের🐠িটেজ কোনারক মন্দিরের কাছে রহস্যময় চন্দ্রভাগা নদীর প্রমাণ পান বেশ কয়েকজন গবেষক। এক্ষেত্রে সেবার বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট ছবি তাঁদের গবেষণাকে সাহায্য করে। এদিকে, মনে করা হয় টেকটোনিক কার্যকলাপের ফলে বহু নদীর গতিপথ ব্যাহত হয়েছে। মনে কর হয় এই কার🐻ণে বহু নদীর গতি অবলুপ্তও হয়েছে। এমনই এক ঘটনা চন্দ্রভাগার সঙ্গেও ঘটেছে বলে মনে করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। উল্লেখ্য, কথিত রয়েছে চন্দ্রভাগা নদী কোনারক মন্দিরের উত্তরের অংশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে। তবে বর্তমানে তার অস্তিত্ব পাওয়া না যেতেই বহু গবেষণা শুরু হয়। আর চন্দ্রভাগা নিয়ে ২০১৬ সালে উঠে আসে ওই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা।