ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্ব বাজারে তেল, গ্যাস-সহ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে আপাতত ভর্তুকি দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখবে সরকার, জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী৷ তবে জ্বালানির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি, বলছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী৷ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা৷ টিসিবির ট্রাক এসেছে রাজধানীর মৌচাক মোড়ে৷ ট্রাক দেখতেই ছুটোছুটি৷ এই ছুটোছুটি লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে৷ বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামের কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ এখন টিসিবির পণ্যের অপেক্ষায় থাকেন৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন টিসিবির ট্রাক আসে, তখন শুরু হয় হুড়োহুড়ি৷ অনেকে আবার লোকলজ্জার কারণে লাইনে দাঁড়াতে না পারলেও অন্য কাউকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পণ্য কেনেন৷ ফলে যেখানে টিসিবির ট্রাক দেখেন, সেখানেই হুমড়ি খেয়ে পরে মানুষ৷কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে দেখা গেল, লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করছেন অনেকে৷ বিশেষ করে সমস্যায় পড়ছেন নারীরা৷ কাউকে কাউকে লাইন ছেড়ে যেতেও দেখা যায়৷ সেখানে থাকা এক নারী বলেন, সকাল আটটা থেকে অপেক্ষা করছেন অনেকে৷ কিন্তু টিসিবির ট্রাক আসে দেরিতে৷টিসিবির ডিলার মিন্টু এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী শফিকুজ্জামান বলেন, ‘বরাদ্দ পেতে দেরি হওয়ায় আসতে দেরি হয়েছে৷ এরমধ্যে শত শত লোক জমে গিয়েছে৷ এখন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না পরিস্থিতি৷ যতক্ষণ ট্রাকে জিনিসপত্র থাকে, ততক্ষণ দেওয়া হবে৷' তুলনামূলক কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর পেতে অনেকেই এমন মরিয়া৷ এ অবস্থায় আবার যদি পণ্যের দাম বাড়ে তবে কী হবে? ইউক্রেনে আক্রমণ করার কারণে রাশিয়ার উপর এরইমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকা অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়েছে৷ সেই অবরোধ কঠোরতর হতে পারে৷ এর প্রভাব এরইমধ্যে জ্বালানির বাজারে পড়তে শুরু করেছে৷ যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যোর দাম বাড়তে থাকলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে৷ এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারেরই বা প্রস্তুতি কী?জানতে চাইলে সরকারের দু'জন মন্ত্রী দু'ধরনের কথা বলছেন৷ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও সরকার ভর্তুকি দিয়ে আপাতত বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখবে৷' এছাড়া যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানান তিনি৷ ‘বাজার অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে,' যোগ করেন মন্ত্রী৷অন্যদিকে, এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘শুধু তেলের দাম না, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দামও বাড়ছে৷ তবুও আমাদের আমদানি করতে হবে৷ এই উচ্চমূল্যে আমদানি করে বিক্রি করতে হলে দুটো উপায় সামনে আছে৷ হয় ভর্তুকি দিতে হবে, না হলে জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে৷ কী করা হবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷' তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির দাম নতুন করে বেড়ে গেলেও আমদানি অব্যাহত রাখবে সরকার৷ এখন ডিজেলে প্রতিদিন প্রায় ১৩ কোটি টাকার মতো লোকসান দিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)৷ ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল বিক্রি করেছে প্রায় ৬৩ লাখ মেট্ট্রিক টন, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশই ডিজেল৷ সরকারের ধারণা এখন যেভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, সেই দামে তেল আমদানি করলে বিপিসির প্রতিদিনের লোকসান ২০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে৷এদিকে, কোভিড মহামারীর দুর্দশা থেকে অর্থনীতি গতিশীল হওয়ার এই সময়কালে লোকসান বাড়লেও এখনই মূল্য সমন্বয়ের পথে না হাঁটার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের৷বিশ্বব্যাঙ্ক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপাতত ভর্তুকি দিয়েই সামলাতে হবে৷ কারণ গত নভেম্বরেই জ্বালানি তেলের দাম এক দফা বাড়ানো হয়েছে৷ এমনতিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ ফলে এখনই জ্বালানি তেলের দাম আবারও সমন্বয় করতে গেলে মানুষের উপর চাপ বাড়বে৷ সরকারকে এখন বাংলাদেশের ব্যাঙ্কের রিজার্ভ বাড়াতে হবে৷ বলা হচ্ছে, আমরা বিশাল রিজার্ভের উপর বসে আছি৷ কিন্তু এটা এখন অন্য কোনও খাতে বিনিয়োগ করা যাবে না৷ বাজার নিয়ন্ত্রণ এটার প্রয়োজন৷' সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অথবা শুল্ক ছাড় দিয়েও পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেতে পারে৷ তেলের দামের পর এখন কিন্তু সরকারকে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে৷ আবার এই অর্থবছরে সারের ভর্তুকির জন্য সরকার ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে৷ এখন তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সারের দামও বাড়ে৷ এখন যে দাম তাতে সরকারকে ২০-২২ হাজার কোটি টাকা সারে ভর্তুকি দিতে হবে৷ ফলে মূল্য সমন্বয় ছাড়া এটা তো সামাল দেওয়া মুশকিল৷ তবে পরিস্থিতি যাই হোক, ধীরে-সুস্থে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷'(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)