রেজাউল এইচ লস্করএখনও লাদাখ সীমান্তে প্রশমিত হয়নি উত্তেজনা। তারইমধ্যে অরুণাচল প্রদেশ লাগোয়া ভারত ও ভুটানের বিতর্কিত সীমান্তে একাধিক গ্রাম তৈরি করেছে চিন। এখনও পর্যন্ত সেই এলাকায় মানুষ বসবাস করতেন না। উপগ্রহ চিত্রে এমনই ছবি ধরা পড়েছে।প্রকাশ্যে প্রাপ্ত সেই গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞের (টুইটারের নাম @detresfa_) শেয়ার করা ছবি অনুযায়ী, ভারত, ভুটান এবং চিনের সীমান্তে অবস্থিত বুম লা'তে পাঁচটি নয়া গ্রাম গড়ে উঠেছে। যে গিরিপথ অরুণাচল প্রদেশ এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত এলাকার কোনা কাউন্টির মধ্যে অবস্থিত। একটি টুইটে ওই বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ‘ভুটানের প্যাঙ্গদা গ্রামের যেমন বাসস্থান দেখা যাচ্ছে, সেরকমই নয়া গ্রাম এবং ঘর’-এর প্রমাণ আছে। সেই গ্রামবাসীদের জায়গা পরিবর্তনের ফলে সীমান্তে নজরদারি এবং টহলদারির সুযোগ বেড়েছে চিনের।‘প্ল্যানেট ল্যাব’ নামে বেসরকারি মার্কিন সংস্থার উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, বুম লা'র পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি গ্রাম তৈরি হয়েছে। সেই ছবি অনুযায়ী, লাদাখ সেক্টরে সংঘাতের মধ্যেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে অর্থাৎ চিনের দিকে সেই গ্রামগুলি তৈরির কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। ‘প্ল্যানেট ল্যাব’-এর উপগ্রহ চিত্রে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র একটি গ্রাম দেখা গিয়েছিল। সঙ্গে ধরা পড়েছিল ২০ টি কাঠামো। ২৮ নভেম্বরের ছবিতে আরও তিনটি গ্রাম ধরা পড়েছে। একইসঙ্গে আছে ৫০ টির মতো কাঠামো। প্রতিটি গ্রামের দূরত্ব এক কিলোমিটারের মতো। সেগুলি নয়া সড়কপথে যুক্ত।গত মাসে যে উপগ্রহ চিত্র সামনে এসেছিল, তাতে দেখা গিয়েছিল, ডোকলাম মালভূমিতে ভুটানের ভূখণ্ডের দু'কিলোমিটারের মধ্যে প্যাঙ্গদা নামে একটি গ্রাম তৈরি করেছে চিন। একইসঙ্গে সেখানে একটি রাস্তাও তৈরি করা হয়েছিল। যা ভুটানের ভূখণ্ডের ন'কিলোমিটার ভিতরে প্রবেশ করেছে। ২০১৭ সালে যেখানে ভারত এবং চিনের সংঘাতে জড়িয়েছিল, সেখান থেকে ১০ কিলোমিটারের মতো দূরে অবস্থিত প্যাঙ্গদা।চলতি বছর অগস্টে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, অরুণাচল প্রদেশ লাগোয়া সীমান্তে গ্রামগুলির পরিকাঠামো উন্নত করা হয়েছে। তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়াদং কাউন্টির প্রশাসনকে উদ্ধৃত করে সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’ দাবি করেছিল, 'সেপ্টেম্বরে ইয়াদং কাউন্টি থেকে প্যাঙ্গদা গ্রামে স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিলেন’ ১২৪ জন। বিষয়টি নিয়ে বেলজিয়ামের ‘ফোর্স অ্যানালিসিস’-এর সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ সিম ট্র্যাক জানান, ‘চিনের উপস্থিতি জানান দিতে এবং বিতর্কিত এলাকায় নিজেদের দাবি জোরদার করার’ কৌশল হিসেবে যে নয়া গ্রাম তৈরি করা হয়েছে, তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘কম জনবহুল এবং বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ অন্য দেশের ক্ষেত্রে দেখেছি আমরা। উদাহরণ হিসেবে পশ্চিম সাহারায় মরক্কো তা করেছিল। চিনারাও একই কাজ করেছে। যাতে সীমান্ত লঙ্ঘন করতে পারে এবং নিজেদের আঞ্চলিক দাবি করতে পারে।’