সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমসের হাতে এসেছে এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্রের বিশ্লেষণ। 'প্ল্যানেট ল্যাব'-এর থেকে পাওয়া সেই উপগ্রহ চিত্রের বিশ্লেষণ থেকে দেখা গিয়েছে, হোতান, নগারি গুনসা এবং লাসায় বায়ুসেনা ঘাঁটিকে আরও উন্নত করেছে। ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে এই তিনটি বায়ুসেনা ঘাঁটি খুব কাছে।
রেজাউল লস্কর: বিগত তিনবছর ধরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় অস্থির পরিস্থিতি। ভারত ও চিনা সেনা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দিনরাত। এরই মধ্যে বারংবার ফুটে উঠেছে চিনের আগ্রাসী মনোভাব। সীমান্তে শান্তি ফেরাতে যেখানে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আচোলনা চলছে, সেখানে চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার খুব কাছেই বায়ুসেনা ঘাঁটি বানিয়ে চলেছে। এই আবহে আকাশে চিনা বায়ুসেনার শক্তি ক্রমেই বেড়েছে এই অঞ্চলে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মে মাস থেকেই চিন বায়ুসেনা ঘাঁটি তৈরির দিকে নজর দিয়েছিল এই অঞ্চলে। শুধু এয়ারফিল্ড নয়, লাদাখের আশেপাশে হেলিপ্যাড, রেললাইন, মিসাইল বেস, সড়ক, সেতু নির্মাণ করে চলেছে 𒈔চিন। সযার স্পষ্ট ইঙ্গিত, সেনা মোতায়েনের জন্যই এসব নির্মাণকাজ।
সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমসের হাতে এসেছে এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্রের বিশ্লেষণ। 'প্ল্যানেট ল্যাব'-এর থেকে পাওয়া সেই উপগ্রহ চিত্রের বিশ্লেষণ থেকে দেখা গিয়েছে, হোতান, নগারি গুনসা এবং লাসায় বায়ুসেনা ঘাঁটিকে আরও উন্নত করেছে। কোথাও রানওয়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে তো কোথাও বেস পাকা করা হয়েছে। ২০২০ সালের ২৩ জুন হোতান বায়ুসেনা ঘাঁটির উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা গিয়েছে যে এর আশেপাশে সেনার কোনও পাকা বাড়ি নেই। তবে ২০২৩ সালের ১৮ 🦩মে-এর চিত্রে দেখা গিয়েছে, সেখানে নতুন এয়ার বেস গড়ে তোলা হয়েছে। মিলিটারি অপারেশনের জন্যও নয়া বিল্ডিং তৈরি হয়েছে। আরও বেশি সংখ্যক যুদ্ধবিমান রাখার জন্য নয়া 'অ্যাপ্রন' তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই হোতান হল আকসাই চিনের উত্তরে শিনজিয়াং প্রদেশে অবস্থিত। সেখান থেকে লাদাখ খুবই কাছে।
এদিকে উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা গিয়েღছে যে নগারি গুনসা এয়ার বেসেও নতুন করে নির্মাণ কাজ চালিয়েছে চিন। ২০২০ সালের ১০ জুনের উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে এই ঘাঁটিতে একটি মাত্র রানওয়ে রয়েছে। সঙ্গে নির্মাণরাজ শুরু হয়েছে আশেপাশে। ২০২৩ সালের ১৬ মে-এর চিত্রে দেখা গিয়েছে, এই ঘাঁটিতে নয়া রানওয়ে এবং ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে যুদ্ধবিমান রাখার জন্য পাকা হ্যাঙার তৈরি করা হয়েছে আরও একটি। এছাড়াও মিলিটারি ও এয়ার অপারেশনের জন্য নয়া সামরিক বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে সেখানে। উল্লেখ্য, এই নগারি গুনসা ঘাঁটি লা⛎দাখের দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তরাখণ্ডের পূর্বে অবস্থিত। ভারতীয় ভূখণ্ডের বেশ কাছে অবস্থিত এই বিমানঘাঁটি। এছাড়া তিব্বতের রাজধানী লাসাতে অবস্থিত চিনা বায়ুসেনা ঘাঁটির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে গত তিন বছরে।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে এই তিনটি বায়ুসেনা ঘাঁটি খুব কাছে। যেকোনও সময় এই ঘাঁটি থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা চালাতে পারে চিন। এই তিন ঘাঁটির সাহায্যে লাদাখ, উত্তর ভারত এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ওপর চোখ রাঙাতে পারে চিনা সেনা। ভারতের সঙ্গে স্ট্যান্ডঅফের সময় এই তিন ঘাঁটির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। হোতান এয়ারবেস লেহ থেকে মাত্র ৪০০ কিমি দূরে। উল্লেখ্য, এর আগে শেষবার ২০০২ সালে হোতান এয়ারবেসে কোনও নির্মাণকাজ করেছিল চিন। তবে ২০২০ সা🎃লের পর তারা এই ঘাঁটিকে অত্যাধুনিক রূপে সাজিয়ে তুলেছে। এই বিমান ঘাঁটিতে চিনের অত্যাধুনিক জে-২০ যুদ্ধবিমান রয়েছে। তাছাড়া অনেক ড্রোনও রয়েছে এখানে। এদিকে তিব্বতে অবস্থিত নগারি গুনসা বেসটি ভারতের প্যাংগং সো থেকে মাত্র ২০০ কিমি দূরে অবস্থিত। ২০১০ সালে এই বায়ুসেনা ঘাঁটি চালু করেছিল চিন। ২০১৭ সালে দোকলাম সংঘাতের পরে এই ঘাঁটিতে সম্প্রসারণের কাজ হয়। ২০২০ সালের পরে আরও অত্যাধুনিক করে তোলা হয় এটিকে। বর্তমানে সেখানে যুদ্ধবিমান রাখার জন্য ১৬টি পাকা আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এদিকে লাসা বিমানবন্দরটিকে সামরিক কজেও ব্যবহার করে থাকে চিন। এটি অরুণাচলের তাওয়াং থেকে মাত্র আড়াইশো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২০২০ সালের পর এখানেও নয়া রানওয়ে তৈরি করা হয়েছে। এখানে যুদ্ধবিমান রাখার জন্য ৩০টি নতুন আশ্রয়কেন্দ্র বানানো হয়েছে। নতুন সামরিক বিল্ডিংও গড়ে উঠেছে। এদিকে লাসা এয়ারফিল্ডের দক্ষিণে ভূগর্ভ নির্মাণও চালাচ্ছে চিন। সম্ভবত সেখানে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বসাচ্ছে তারা।
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের তরফে এই উপগ্রহ চিত্রের প্রেক্ষিতে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল ভারতীয় সেনার কাছে। তবে সেনা আধিকারিকরা এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তবে ভারত বিগত দিনে বিভিন্ন ভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সীমান্তে পরিস্থিতি শন্ত না হলে দুই দেশের সম্পর্ক ফের স্বাভাবিক হবে না। যদিও বিষয়টিকে লঘু করে দেখাতে চেয়েছে চিন। তবে ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড়। তবে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল মনমোহন বাহাদুর হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, এর আগে চিনের থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার বেশি প্রভাব ছিল এই অঞ্চলে। তবে ধীরে ধীরে চিন নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে এই সব নির্মাণ কাজের মাধ্যমে। এই আবহে ভারতীয় বায়ুসেনার হাম꧒লা প্রতিহত করার জন্য কৌশলগত ভাবে এই সব বায়ুসেনা ঘাঁটিকে অত্যাধুনিক করে তুলেছে তারা। উল্লেখ্য, কোনও যুদ্ধবিমান যখন ভারী মিসাইল নিয়ে টেকঅফ করে, তখন রানওয়ে লম্বা হতে হয়। আগে এই সব অঞ্চলে চিনা বায়ুসেনা ঘাঁটির রানওয়ে লম্বা ছিল না। তবে তারা সেই সমস্যা দূর করেছে বিগত কয়েকไদিনে।