রামমন্দির উদ্বোধনের প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অভিযোগ করেছিলেন, তামিলনাড়ুতে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার লাইভ সম্প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেখানকার রাজ্য সরকার। সেই দাবি ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল দক্ষিণী রাজনীতি। একদিকে ডিএমকে-কে 'হিন্দু বিরোধী' আখ্যা দিয়ে তোপ দাগছিল বিজেপি। অপরদিকে ডিএমকে পালটা দাবি করছিল, তাদের নামে মিথ্যা প্রচার হচ্ছে। এই সবের মাঝেই অবশ্য এই মামলা গড়ায় আদালতে। এই আবহে সুপ্রিম কোর্ট এবং মাদ্রাস হাই কোর্টে পৃথক জনস্বার্থ মামলা হয়। জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় তামিলনাড়ু সরকারকে। অভিযোগ, তামিলনাড়ু পুলিশ নাকি রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানের লাইভ স্ক্রিনিং এবং এই সম্পর্কিত ধর্মী আচার-অনুষ্ঠান পালনের ওপর 'পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা' চাপিয়েছিল। এই আবহে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে 'নির্মম' আখ্যা দেয় শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বারণ করে আদালত। (দেখুন ভিডিয়ো: 𝔍জনসাধারণের জন্য খুলল রামলালার দরজা, কাকভোরে অযোধ্যার রামমন্দিরে চরম বিশৃঙ্খলা)
আরও পড়ুন: 𒊎'৪৯৬ বছরের অপেক্ষা', বাবরি মসজিদ… বিতর্ক… রামমন্দির… উলটে দেখুন ইতিহাসের পাতা
ꦑএদিকে মাদ্রাস হাই কোর্টেও এই সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল ২২ জানুয়ারি। সেখানেও তামিল সরকারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করা হয়। চেন্নাই নিবাসী এল গণপতি নিজের আবেদনে দাবি করেন, পুলিশ কমিশনারেট তাঁকে বিয়েবাড়ি ভাড়া করে সেখানে ভজন-কীর্তন করার অনুমতি দেয়নি। সোমবার মাদ্রাস হাই কোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর আগে নিজের চেম্বারেই আবেদনটি শোনেন বিচারপতি ভি আনন্দ ভেঙ্কটেশ। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে উপস্থিত আইনজীবীর তরফ থেকে আদালতকে বলা হয়, রামমন্দির সংক্রান্ত উৎসবে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। তবে এই সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান যাতে ধর্মী রীতি মেনে শান্তিতে পালন করা হয়, সেই সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিগড়ে না যায়, তার দিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। এই আবহে বিচারপতি নিজের পর্যবেক্ষণে বলেন, 'কোনও ভুল বা ভুয়ো তথ্য যাতে ছড়িয়ে না পড়ে। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের এটা মনে রাখতে হবে। আখেড়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি শুধুমাত্র শান্তি ও সুখের জন্য। সমাজে বিরাজমান ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করার জন্য এই ভক্তি প্রদর্শন করা যায় না।'
আরও পড়ুন: ♕রামের বাড়ির ‘কার্পেট এরিয়া’ কত জানেন? একনজরে দেখুন রামমন্দিরের ‘ফ্লোরপ্ল্যান’
෴এর আগে গত রবিবার এক সোশ্যাল মিডিয়া বার্তায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ডিএমকে সকারকে তোপ দেগে লিখেছিলেন, 'অযোধ্যা রামমন্দির অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তামিলনাড়ু সরকার। তামিলনাড়ুতে শ্রী রামের ২০০টিরও বেশি মন্দির রয়েছে। রাজ্য সরকার পরিচালিত মন্দিরগুলিতে শ্রী রামের নামে কোনও পুজো, ভজন করার অনুমতি নেই। মন্দিরে প্রসাদ, অন্নদানম বিলি করার অনুমোদনও নেই। পুলিশ গিয়ে গিয়ে মন্দিরগুলিকে অনুষ্ঠান আয়োজন করা থেকে বিরত রাখে। তারা আয়োজকদের প্যান্ডেল ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এই হিন্দু বিরোধী, ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। অযোধ্যার অনুষ্ঠানের লাইভ সম্প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে যুক্তি দিতে তামিলনাড়ু সরকার অনানুষ্ঠানিকভাবে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার কথা উল্লেখ করছে। এই দাবি ভুয়ো ও ভ্রান্তিমূলক! অযোধ্যা রায়ের দিন কোনও আইনশৃঙ্খলার সমস্যা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেদিন রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন, সেদিনও কোনও সমস্যা হয়নি। তামিলরা স্বেচ্ছায় রামের উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। হিন্দু-বিরোধী ডিএমকে-কে এই বিষয়টা নাড়িয়ে দিয়েছে।'
🐟এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তামিলনাড়ুর হিন্দু ধর্মীয় দাতব্য মন্ত্রী শেখর বাবু পালটা বলেন, 'তামিলনাড়ুর কোনও মন্দিরে রামের নামে পুজো করতে, ভজন করতে বা প্রসাদ দেওয়ার ওপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর মতো উচ্চ পদে থেকে নির্মলা সীতারামন এই অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা বার্তা ছড়াচ্ছেন!' প্রসঙ্গত, এর আগে সনাতন ধর্মকে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন ডিএমকে নেতা তথা সেই রাজ্যের মন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিন। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে জোর বিতর্ক শুরু হলেও মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের পুত্র নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছিলেন। পরবর্তীকালে সনাতন ইস্যুতে ডিএমকে-র অবস্থানকে হাতিয়ার করে হিন্দি বলয়ে ইন্ডিয়া ব্লককে তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি নেতারা। ডিএমকে-র সনাতন বিরোধী অবস্থানে অস্বস্তিতে পড়েছিল ইন্ডিয়া ব্লকের অন্যান্য জোটসঙ্গীরাও। আর এবার রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হল তামিলনাড়ুতে।