শর্তসাপেক্ষে পুরীর রথযাত্রায় অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার জেরে সোমবার রাত ন'টা থেকে বুধবার দুপুর দুটো পর্যন্ত পুরোপুরি তালাবন্ধ থাকবে পুরী। জানিয়েছে ওড়িশা সরকার।সোমবার প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, প্রতিটি রথ ৫০০ জনের বেশি টানতে পারবেন না। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ১,৫০০ জন রথ টানতে পারবেন। তাঁদের প্রত্যেকের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে হবে। দুটি রথ পৌঁছানোর মধ্য়ে এক ঘণ্টার অন্তর থাকবে। তার আগে সুপ্রিম কোর্টে জনসমাগম ছাড়া রথযাত্রা আয়োজনের সওয়াল করে কেন্দ্র এবং ওড়িশা সরকার। তাদের বক্তব্য, এটা কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাসের বিষয়। কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়, মঙ্গলবার যদি ভগবান জগন্নাথ না বেরোন, তাহলে প্রচলিত ধারা অনুযায়ী আগামী ১২ বছর তিনি বেরোতে পারবেন।এর আগে, বৃহস্পতিবার এবারের পুরীর রথযাত্রা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। যদিও পুরোপুরি স্থগিতাদেশ না দিয়ে রথযাত্রা জনসমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার আর্জি জানিয়েছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘রথযাত্রার অনুমতি দিলে প্রভু জগন্নাথ আমাদের ক্ষমা করবেন না। জনস্বাস্থ্য ও নাগরিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ বছর ওড়িশায় রথযাত্রার অনুমতি দেওয়া যাবে না।' সেই রায় পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। যন্ত্রচালিত রথযাত্রার আবেদন জানিয়েছিলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবাইত। রথযাত্রার আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্রও। যিনি গত লোকসভা নির্বাচনে পুরী থেকেই লড়েছিলেন। সোমবার কেন্দ্র এবং ওড়িশা সরকারের সওয়ালে তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, 'যদি এটা নিশ্চিত করা যায় যে কোনও জনসমাগম হবে না, তাহলে আমরা কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না, যে জন্য সুরক্ষিতভাবে এক মন্দির থেকে অপর মন্দির পর্যন্ত নির্দিষ্ট রুট মেনে রথযাত্রার আয়োজন করা যাবে না।'একইসঙ্গে নিজেদের রায়ে সতর্কতার বাণী শুনিয়েছে শীর্ষ আদালত। অষ্টাদশ-উনবিংশ শতকে এরকম একটি যাত্রার কারণে কীভাবে 'দাবানলের মতো' কলেরা এবং মড়ক ছড়িয়ে পড়েছিল, তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। এবারে সেরকম ঘটনা রুখতে রাজ্য সরকারকে রথের সময় পুরী শহরে কার্ফু জারির নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। রায়ে বলা হয়, 'যদি সতর্কতা এড়িয়ে যাওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই রায়ে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি আমরা।'শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সুরক্ষা বিধি মেনে প্রাথমিকভাবে রথযাত্রার আয়োজনের দায়িত্ব পুরী জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের কমিটির প্রধানের। রাজ্য সরকার যে আধিকারিককে দায়িত্ব দিয়েছে, তাঁর উপরও দায়িত্ব বর্তাবে। একইসঙ্গে কেন্দ্রকেও যাবতীয় সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।সেই রায়ের পরই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রস্তুতি শুরু করে ওড়িশা সরকার। বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। পুরী পৌঁছান মুখ্যসচিব এ কে ত্রিপাঠী এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি অভয়। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মতো সন্ধ্যার দিকে ওড়িশা সরকারের তরফে জানানো হয়, সোমবার রাত ন'টা থেকে বুধবার দুপুর দুটো পর্যন্ত পুরোপুরি তালাবন্ধ থাকবে পুরী। এদিকে, শীর্ষ আদালতের রায়ের পরই বিজেপি সরকারের ঢাক পেটাতে নেমে পড়েন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কীভাবে ওড়িশার মানুষের ভাবাবেগ ‘বুঝে’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে তিনি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়, একাধিক টুইটবার্তায় সেই খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি। শাহ বলেন, 'আমাদের সকলের জন্য বিশেষ দিন, বিশেষত ওড়িয়া ভাইবোনে এবং শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভুর ভক্তদের জন্য। রথযাত্রার আয়োজন নিশ্চিত করে মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পুরো দেশ আনন্দিত। জয় জগন্নাথ।' যদিও বিজেপির এই সাফল্যের ঢাক পেটানোর পিছনে স্পষ্ট রাজনৈতিক সমীকরণ দেখছেন রাজনৈতিক কারবারিরা। তাঁদের বক্তব্য, ওড়িশায় বিজু জনতা দলের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক ভালো হলেও রাজ্যে ধীরে ধীরে নিজেদের পায়ের তলায় জমি শক্ত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আর ওড়িশাবাসীর ভাবাবেগে ভর করে সেই কাজটা করার সেরা সময় তো এটাই। তাই রথ আয়োজনে কেন্দ্রের সেই সাফল্য জাহির করতে ময়দানে নেমে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। যাতে পরবর্তী বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে সেই লাভের গুড় পাওয়া যায়।