বর্তমান ও প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধজনিত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বিশেষ আদালতের সংখ্যা বাড়ানো। বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। বিজেপি নেতা অশ্বিনী কুমার উপাধ্যায়ের দায়ের করা এই বিষয়ক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করেছে বিচারপতি এন ভি রামানা সূর্য কান্ত এবং হৃষীকেশ রায়ের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশে ১২টি বিশেষ আদালত গঠন করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই মতো সাংসদ ও বিধায়কদের বিরুদ্ধে থাকা অপরাধমূলক মামলার বিচার সেই সমস্ত আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় হাই কোর্টগুলিকে।কেন্দ্রীয় সরকারের এই পরিকল্পনায় রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির আদালতে ৬৫ বা তার বেশি মামলা জমে গেলে সেগুলি বিশেষ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এর জন্য অন্ধ্র প্রদেশ, বিহার, কর্নাটক, মধ্য প্রদেশ, তামিল নাডু, তেলাঙ্গনা, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গে একটি করে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। এ ছাড়া মহারাষ্ট্র, কেরালা ও দিল্লিতে বিচারপতি স্তরে তিনটি বিশেষ আদালত স্থাপন করা হয়। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ অ্যামিকাস কিউরিয়ে (আদালত বান্ধব) আইনজীবী বিজয় হনসারিয়াকে বলে, ‘ভারত সরকার আগে ১২টি আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন কেন সেই সংখ্যা বৃদ্ধির কথা ভাবা হচ্ছে না? এখন যখন জেলা-ভিত্তিক পরিসংখ্যান জানা গিয়েছে, সেই প্রেক্ষিতে আমাদের বলুন আরও কতগুলি আদালতের প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি আমরা আগামী বুধবার বিবেচনা করব।’আমাদলত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে বর্তমান ও প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মোট ৪,৪৪২টি ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। হনসারিয়ার হিসেবে, এর মধ্যে ২,৫৫৬টি মামলা রয়েছে বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এবং বাকিগুলি প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তার মধ্যে ৪১৩টি মামলায় দোষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে আবার ১৭৪টি মামলায় জনপ্রতিনিধিরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বর্তমানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন আইন, আর্থিক তছরুপ দমন আইন, অস্ত্র আইন, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস বিরোধী আইন এবং মানহানি, প্রতারণা ও ইচ্ছাকৃত সরকারি কর্মচারীর আদেশ অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে।হনসারিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, এর মধ্যে বেশ কিছু মামলায় এখনও চার্জশিট গঠন হয়নি। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে ১৯৮১ সালে দায়ের করা পশ্চিমবঙ্গের এক রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা ও ১৯৮৩ সালে পঞ্জাবে এক রাজনীতিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যামামলা। পাশাপাশি, বেশ কিছু মামলায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে উচ্চতর আদালত। মোট ৩৫২টি মামলায় হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। বিষয়টি আগামী বুধবারের শুনানিতে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। তবে হনসারিয়ার রিপোর্ট বলছে, নাগাল্যান্ড ও সিকিম রাজ্য এবং দাদরা ও নগর হাভেলি আর দমন ও দিউ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে জনপ্রতিনিধদের বিরুদ্ধে আদালতে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই।