নিয়মিত আয়ের জন্য ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট রাখার অর্থের সুদের উপরে বর্ষীয়ান নাগরিকরা নির্ভরশীল। কিন্তু করোনাভাইরাসের দাপটে এফডি-তে সুদের হার কমে বর্তমানে ৭% এর নীচে নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের জন্য দুটি আকর্ষণীয় পেনশন প্রকল্প- সিনিয়র সিটিজেনস সেভিংস স্কিম এবং এলআইসি প্রধানমন্ত্রী ব্যয় বন্দনা যোজনা। প্রধানমন্ত্রী ব্যয় বন্দনা যোজনা অথবা PMVVY প্রকল্প:এই প্রকল্পে সম্প্রতি সুদের হারে সংশোধন এনেছে এলআইসি। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে PMVVY প্রকল্পে পাওয়া যাবে স্থায়ী সুদের হার। পলিসির মেয়াদ নির্দিষ্ট হয়েছে ১০ বছর। পেনসনভোগী মাসিক, ত্রৈমাসিক, দ্বিমাসিক ও বাৎসরিকের মধ্যে যে কোনও একটি সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। ফিক্সড ডিপোজিটের উপরে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার দেওয়া সুদের হারের চেয়ে বেশি সুদ মিলবে এই প্রকল্পে। ২০২১ অর্থবর্ষে বাৎসরিক ৭.৪০% সুদ পাওয়া যাবে PMVVY প্রকল্পে। দশ বছর মেয়াদে এই সুদ মাসিক ব্যবস্থাতেও পাওয়া যেতে পারে। ৬০ বছর বা তার বেশি বয়েসিরা এই প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে ন্যূনতম কোনও বয়েসের উল্লেখ এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে করা হয়নি। PMVVY প্রকল্প কেনা যায় লাইফ ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এলআইসি) থেকে। অফলাইন ও অনলাইন, দুই প্রক্রিয়াতেই এই নশন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যায়। বর্ষীয়ান নাগরিকরা মাসে ন্যূনতম ১,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৯,২৫০ টাকা পেনশন তুলতে পারবেন। এই পেনশন প্রকল্পে মাথাপিছু সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে। পরিবর্তিত হয়েছে ন্যূনতম বিনিয়োগ অর্থের সীমাও। বছরে ১২,০০০ টাকা সুদ পেতে গেলে কমপক্ষে ১,৫৬,৬৫৮ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অন্য দিকে, ১,৬২,১৬২ টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে ১,০০০ টাকা সুদ পাওয়া যাবে, জানিয়েছে এলআইসি।বিনিয়োগকারী অথবা তাঁর স্বামী বা স্ত্রী মারাত্মক অসুস্থ হলে মেয়াদ ফুরানোর আগে PMVVY সারেন্ডার করা যাবে। সে ক্ষেত্রে পলিসি হোল্ডার ৯৮% অর্থ ফেরৎ পাবেন।সিনিয়র সিটিজেনস সেভিংস প্রকল্প:সবচেয়ে সহজ বিনিয়োগ প্রকল্প হিসেবে খ্যাত এই প্রকল্প একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিস থেকে কেনা যায়। ৬০ বা তার বেশি বয়েসি নাগরিকরা এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে ভিআরএস নেওয়া ৫৫ বছর ও ৬০ বছরের মধ্যে বয়েসিরাও এই প্রকল্পের অধীনে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকরাও এই প্রকল্পে বিনিয়োগের সুবিধা পান।ন্যূনতম ১,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে এই প্রকল্পের অধীনে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। মোট ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। তবে বিনিয়োগ করতে হবে ১,০০০ টাকা গুণিতকে। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ছাড়া স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ অ্যাকাউন্টও এই প্রকল্পের অধীনে খোলা যায়।বাজারচলতি অন্য সব ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পেদর তুলনায় বেশি সুদ পাওয়া যায় সিনিয়র সিডিজেনস সেভিংস প্রকল্পে। বর্তমানে এপ্রিল থেকে জুন ২০২০ ত্রৈমাসিকের জন্য সুদের হার ৭.৪% নির্দিষ্ট করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। প্রতি ত্রৈমাসিকে এই সুদের হার পর্যালোচনা করে নির্দিষ্ট করা হয়। বিনিয়োগকারীদের সুদ দেওয়া প্রতি ত্রৈমাসিকে, এপ্রিল, জুলাই, অক্টোবর ও জানুয়ারি মাসের প্রথম কাজের দিনে। এই প্রকল্পের অধীনে অ্যাকাউন্ট খুললে তার মেয়াদ ৫ বছর। ম্যাচিওর করার পরে আরও ৩ বছর অ্যাকাউন্ট চালু রাখা যায়। একবছর পরে এবং দুই বছর সম্পূর্ণ হওয়া আগে কেউ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলে জরিমানা হিসেবে ১.৫% জমা দেওয়া বিনিয়োগ অর্থ বাদ যায়। দুই বছর পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলে ১% জমা দেওয়া অর্থ থেকে জরিমানা বাবদ বাদ পড়ে।আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় ছাড়ের সুবাদে মোট ১.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যায়। তবে প্রকল্প বাবদ পাওয়া সুদ পুরোটাই করযোগ্য। এক অর্থবর্ষে ৪০,০০০ টাকার বেশি সুদ পাওয়া গেলে তার উপর টিডিএস প্রযোজ্য।