শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা চলছেই। কিন্তু এই বাতাবরণের মধ্যে অন্য একটি বিষয় অনেকেরই অলক্ষ্যে থেকে যাচ্ছে। তা হল ওই দেশের বিরাট অংশের মানুষের রোজগারের বিষয়। কীভাবে একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের অস্বস্💯তি সংকটর মুখে দাঁড়িয়েছে, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্যই এই লেখা।
বিশ্বের ১৫৭ কোটি মানুষ কোনও পাকা চাকরি করেন না। তাঁরা ফ্রিল্যান্সিং কর⭕ে জীবনধারণ করেন। তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছর বা তার নীচে। এমনই বলছে পরিসংখ্যান। সর্বশেষ সমীক্ষা অনুসারে, গ্লোবাল ফ্রিল্যান্স বাজার ২০২২ সালে ছিল ৪৯৪২.৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি ২০২৮ সালের মধ্যে ১১৭৩৩.৩৪ মিলিয়নে পৌঁছোবে বলে আশা। খুব আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের ফ্রিল্যান্সিংয়ের ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের। বাংলাদেশের বিরাট সংখ্যক ছেলেমেয়ে দেশে বসে অনলাইনে বিভিন্ন কাজ করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটিই সংকটের মুখে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ের অনেক বিশেষজ্ঞ এবং উদ্যোগপতিরাই জানাচ্ছেন যে অস্থিরতার সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে ৪০০ কোটিﷺ টাকার বেশি লোকসান হয়েছে।
বাংলাদেশে কত জন ফ্রিল্যান্সার আছেন, তার নির্ভরযোগ্য কোনও তথ্য নেই। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, সে দেশ থেকে ১৫৩টি মার্কেট প্লেসে কাজ করা হয়। সেগুলি হিসাব করলে দেখা যা𒅌চ্ছে দেশজুড়ে ফ্রিল্যান্সার সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ। যাঁরা বছরে ১০০ কোটি আয় করছেন। ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত কোনও পূর্ব নোটিশ ছাড়াই সম্পূর্ণ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের কারণে সমগ্র ফ্রিল্যান্সার সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। এটির প্রভাব শুধু আজকের দিনে নয়, আগামী দিনেও মারাত্মক ভাবে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
১৮ জুলাই সন্ধ্যায় যখন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়, কেউই বুঝতে পারেননি যে ইন্টারনেট বিভ্রাট পাঁচ দিন অব্যাহত থাকবে। ইন্টারনেট ফিরে আসবে বলে প্রতি দিন হাপিত্যেশে সবাই অপেক্ষা করেছেন, আর বিফল মনোরথ হয়ে বিনিদ্🦋র রজনী যাপন করেছেন। অনেকেই বলেছেন, তাঁরা যখন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শুরু করেন, কখনও এমন ব্ল্যাকআউটের মুখোমুখি হতে হয়নি।
নিয়মিত ক্লায়েন্টদের মোবাইলে টেꩵক্সট করা শুরু হয়, উলটো দিক থেকেও বার্তা আসতে শুরু করে। কিন্তু কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ফলস্বরূপ, প্রত্যেককে রিফান্ড এবং নতুন প্রকল্প অনুপস্থিত-সহ একটা বড় অঙ্কের ক্ষতি গুনতে হয়েছে। ফলত সার্বিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে অকল্পনীয়ভাবে।
যে কোনও দেশের অর্থনীতিতে ফ্রিল্যান্সার সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই কথা আরও বেশি করে প্রযোজ্য। ফ্রিল্যান্সিং নিরবচ্ছিন্ন অনলাইন অ্যাক্সেসের উপর নির্ভরশীল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত আইসিটি বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, তাঁরা ২০২৬ সালের মধ্যে ১০০০ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সিং শিল্পের প্রত্যাশা করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, ছাত্র হত্যা, ইন্টারনে𒁏ট বন্ধ এবং মানুষের দুর্ভোগ সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে দিচ্ছে।
২০১৭ থেকে বারবার ওপার বাংলায় যাওয়ার সূত্রে দেখেছি, এত মানুষ সে দেশে ফ্রিল্যান্সিং-নির্ভর হওয়া সত্ত্বেও সরকারের সুপরিকল্পিত তেমন কোনও রূপরেখা নেই। সরকারকে এই জন্য আরও বেশি পরিকল্পিত, বলিষ্ঠ, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকমানের উদ্যোগ গ্র🃏হণ করতে হবে। শিক্ষানীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। বুঝতে হবে, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া দুনিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা যাবে না।
পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বর্তমানে বাংলাদেশে মাত্র ১১টি খাতে ফ্রিল্যান্সিং করে। অথচ ফ্রিল্যান্সিং করা🔥 যেতে পারে ১ হাজার ২৩টি বিভাগে। প্রয়োজন স্কিলড রিসোর্সে-এর। চাই সরকারের উৎসাহ। হওয়া উচিত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে। রাজনৈতিক সমস্যা সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান না হলে ফ্রিল্যান্সিং-সহ সব রফতানিমুখী শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
বর্তমানে, বাংলাদেশে যা চলছে, তা সে দেশের সকলের জন্য ব্যক্তিগতভাবে, পেশাগতভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে একটি চাপের পরিস্থিতি। এই জায়গা থেকে মানুষের যত্ন নেওয়ার এবং একে অপরকে সমর্থন করার সময় এসেছে। মানুষের অধিকার এব🍬ং প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে সরকার অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং-ইমারত খুব তাড়াতাড়ি মুখ থুবড়ে পড়বে।
এবার শেষ প্রশ্ন। এই যে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিংয়ের বা🎐জারে ধস, তা কি এপার বাংলার মানুষকে পেশাগতভাবে সাহায্য করতে পারে? বাংলাদেশের মানুষ যে কাজগুলি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বা টালমাটাল পরিস্থিতির কারণে করে উঠতে পারছেন না, ꦕসেই কাজগুলি কি এপার বাংলার মানুষের হাতে আসতে পারে? সে সম্ভাবনা উজ্জ্বল। অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের হাতে এনে দিতে পারে কিছু অতিরিক্ত কাজ। তবে সেই কাজের পরিমাণ কতটা তার হিসাব এখন থেকেই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। আগামী দিনে তা টের পাওয়া যাবে।
(লেখক একজন ডিজিট্যাল কনটেন্ট স্ট্রাটেজিস্ট। ওয়ার্ডপ্রেস কমিউনিটিতে কর্মরত। ভারত-সহ নানা দেশে কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি, ব্র্যান্ডিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার, এবং রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত। মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)