বীরভূমের জেলা রাজনীতিতে একদা যে অনুব্রত মণ্ডলের একাধিপত্য ছিল প্রশ্নাতীত, এবার কি সেই তাঁরই ক্ষমতায় রাশ টানার ব্যবস্থা পাকা করা হল? প্রায় দু'মাস পর শনিবার বীরভূমে দলের জেলা কার্যালয়ে কোর কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।প্রায় একঘণ্টা ধরে চলা রুদ্ধদ্বার সেই বৈঠকে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার জেরে প্রশ্ন উঠছে, এবার কি তবে 'বীরভূমের বাঘ' সর্বত্রগামী অনুব্রত মণ্ডলের চারপাশে একটি অদৃশ্য ঘেরাটোপ তৈরি করে দেওয়া হল?সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, শনিবারের বৈঠকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির সদস্য হিসাবে অনুব্রত মণ্ডলকে জায়গা করে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, গরু পাচার কাণ্ডে অনুব্রতর গ্রেফতারি ও হাজতবাসের জেরে এই কোর কমিটি গঠন করা হয়েছিল।ফলত, অনুব্রত এই কোর কমিটির সদস্য ছিলেন না। কিন্তু, জেলে থাকাকালীনও বীরভূমে তৃণমূল জেলা সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরায়নি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।যদিও, লক্ষ্যণীয় বিষয় হল - অনুব্রত যখন বীরভূমে কার্যত 'শেষ কথা' ছিলেন, সেই সময়েই শাসকদলের জেলা সংগঠনে 'কোণঠাসা' কাজল শেখকে সংশ্লিষ্ট কোর কমিটির সদস্য করা হয়েছিল।অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে এই কাজল শেখ ও তাঁর অনুগামীরা দু'টি ভোট বৈতরণী সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়েছেন এবং বর্তমানে এই কাজল শেখই বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি।অনুব্রতর জেলে যাওয়া এবং সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। যার জেরে বীরভূমের জেলা রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক চালচিত্রও বদলেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।অন্যদিকে, অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে বীরভূমে তৃণমূলের যে কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার আহ্বায়ক ছিলেন বিকাশ রায়চৌধুরী। আনন্দবাজার পত্রিকায় (অনলাইন সংস্করণ) প্রকাশিত খবর অনুসারে, শনিবারের বৈঠকের আগে এই বিকাশের সঙ্গে সরাসরি ফোনে কথা বলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।দলনেত্রী নির্দেশ দেন, অনুব্রতকে সংশ্লিষ্ট কোর কমিটির সদস্য করতে হবে। প্রসঙ্গত, জেলযাত্রার আগে পর্যন্ত বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রতই যে মমতার সবথেকে বড় ভরসা ছিলেন, একথা কারও অজানা নয়।কিন্তু, দিদির সেই স্নেহের কেষ্টই বর্তমানে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির একজন সাধারণ সদস্য। অন্যদিকে, কাজল শেখ এই কোর কমিটির সদস্য হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক পদে আসীন। আর বিকাশ রায়চৌধুরী কোর কমিটির আহ্বায়ক এবং তিনি সেই পদে বহাল থাকবেন। এছাড়াও, এই কোর কমিটির অপর এক সদস্য চন্দ্রনাথ সিংহ রাজ্যের মন্ত্রী।এই প্রেক্ষাপটে শনিবারের বৈঠকে স্থির করা হয়েছে, দলের জেলাস্তরের নেতাদের মধ্যে যাঁরা যে এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন, কোর কমিটির কোনও সাধারণ সদস্য যদি সেই এলাকায় যেতে চান, তাহলে সেই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় নেতাকে তা জানিয়ে তবেই সেখানে যাওয়া যাবে।প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এবার থেকে অনুব্রত মণ্ডলকেও জেলার কোনও অংশে যেতে গেলে এই নিয়ম মানতে হবে?অন্যদিকে, প্রশাসনিক পদে থাকায় কাজল শেখ এবং চন্দ্রনাথ সিংহ যদি জেলার কোথাও যেতে চান, তাহলে তা জানাতে হবে বিকাশ রায়চৌধুরীকে।তাহলে কি তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পদে থাকা সত্ত্বেও কাজল, চন্দ্রনাথ কিংবা বিকাশের তুলনায় অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষমতা কমে গেল?