ইলেক্ট্রনিক্সের ছাত্রছাত্রীদের একটি নির্ভরযোগ্য স্বনিযুক্তি প্রকল্প হল এল.ই.ডি. লাইটিং শিল্প। ইউ.জি.সি. এবং এম.এইচ.আর.ডি. সাম্প্রতিক আলোচনায় উচ্চশিক্ষা ও চাকরির পাশাপাশি স্বনিযুক্তি প্রকল্পের উপরেও সমান জোর আরোপ করেছে। ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সন্দীপ দে এবং প্রিয়দর্শী মজুমদার জানিয়েছেন, ইলেক্ট্রনিক্সের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগেই বাজারচলতি বিভিন্ন ধরনের এল.ই.ডি. দিয়ে লাইটিং তৈরি করতে পারেন। এল.ই.ডি. লাইটিংয়ের কথা বললে প্রথমেই মনে পড়ে বারোয়ারি (দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী) পুজো এবং বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের কথা। এই ধরনের লাইটিং দু'রকমের হতে পারে - স্থায়ী বা অস্থায়ী। স্থায়ী লাইটিংয়ের মধ্যে পড়ে বিভিন্ন দোকানের বা বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ড, ঘর সাজানোর ছোটো মাপের এল.ই.ডি. আলো। আবার পুজোর মণ্ডপ বা বিয়েবাড়ির লাইটিং - যেহেতু অস্থায়ী (একদিন বা কয়েকদিনের মধ্যেই খুলে নেওয়া হবে) তাই এগুলিকে প্রোডাক্ট না ভেবে পরিষেবা ভাবাই যুক্তিযুক্ত হবে।এল.ই.ডি. লাইটিং নিয়ে কিছু বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় চন্দননগর ও সেখানকার জগদ্ধাত্রী পুজোর কথা। বিগত ৬০ বছর ধরে সেখানকার ফ্রেঞ্চ কলোনির শিল্পীরা অপূর্ব শিল্প গুণে অসাধারণ লাইটিং তৈরি করে চলেছেন। এই লাইটিং শিল্প আজ শুধু চন্দননগরেই সীমাবদ্ধ নেই। বংশপরম্পরায় এই শিল্পীদের হাত ধরে তা পুরো পশ্চিমবঙ্গ, ভারত এমনকী পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও লাইটিং স্থান করে নিয়েছে। এই ধরনের লাইটিং দুই মাত্রা (শুধু দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ) বা তিন মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা) - দু'রকমই হতে পারে। এই প্রজেক্টগুলির জন্য সঠিক ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট এবং সুনির্দিষ্টভাবে সংযোগকারী ইলেকট্রনিক সার্কিটের পরিকল্পনা করা জরুরি। এই ধরনের প্রজেক্টের পিছনে থাকে এক বা একাধিক আইসি চিপ। এই আইসি চিপ দু'রকম হতে পারে, এক যেগুলি বাইরে থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে কিছু বিশেষ নির্দেশ পাঠানো যায় এবং দুই যেগুলির ক্ষেত্রে এরকম কোনও নির্দেশ পাঠানো সম্ভব হয়না। বোঝাই যাচ্ছে, দ্বিতীয় ধরনের চিপগুলি দিয়ে খুব উন্নতমানের পছন্দসই লাইটিং তৈরি করা সম্ভব না। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রথম ধরনের চিপ ব্যবহার করতে হবে। বাইরে থেকে কন্ট্রোল করা এই চিপগুলির নাম মাইক্রোকন্ট্রোলার বা আরডুইনো। এগুলি হল - উন্নতমানের ইলেকট্রনিক লাইটিংয়ের চাবিকাঠি। শুধুমাত্র লাইটিংই না, যে কোনও ধরনের উন্নতমানের ইলেকট্রনিক প্রজেক্টে আরডুইনো ব্যবহার করতেই হয়। নাহলে প্রজেক্টটা নিজের ইচ্ছামতো কন্ট্রোল করা যায় না। ইলেকট্রনিক্সের যেসব ছাত্রছাত্রী আর্টিস্ট, তাঁরা নিজেরাই অথবা কোনও আর্টিস্টের সঙ্গে জুটি বেঁধে ইলেকট্রনিক লাইটিংয়ের প্রোডাক্ট অ্যান্ড সার্ভিস ব্যবসাকে নিজের পেশা হিসাবে বেছে নিতেই পারেন। তবে প্রফেশনাল কাজ শুরু করার আগে প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে হাত পাকানো অতি আবশ্যিক। এক্ষেত্রে প্রথমেই পুজোমণ্ডপ বা অনুষ্ঠানের লাইটিংয়ের মতো বড়োসড়ো সার্ভিসের দিকে না এগিয়ে ঘর সাজানোর ছোটো লাইটিংয়ের মতো প্রোডাক্ট তৈরি আর অনলাইনে বিক্রি শুরু করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ নিজেকে লাইটিং-সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে তুলে ধরার আগে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা জরুরি।