‘আমার ভাই ছ'ঘণ্টা জিন্দা (বেঁচে) ছিল, ওরা ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছিল না, কাউকে ছাড়ব না আমি, কাউকে না’- ব্যারিকেডের বেড়া পেরিয়ে এসে আচমকা চিৎকার করে বলতে শুরু করলেন তিরিশের কোঠায় থাকা এক ব্যক্তি। যাঁর ভাইয়ের নাকি আজ সকালে ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে বের করা হয়েছে। সারি-সারি বাড়ির মধ্যে যে অল্পবিস্তর ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানে কথাগুলো মিলিয়ে যাওয়ার আগেই ব্যারিকেডের ওপাশ থেকে আচমকা কালো জামা পরিহিত এক তরুণ হাতে আধলা ইট নিয়ে বেরিয়ে এসে দুর্ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মুখে বলতে থাকেন যে ইট নিয়ে এমনি যাচ্ছেন দুর্ঘটনাস্থলে। যদিও আশপাশে যে স্থানীয় বাসিন্দারা ছিলেন, কিছু একটা সন্দেহ করে তাঁকে দ্রুত জাপটে ধরেন। আর তাঁদের সন্দেহ যে ঠিক ছিল, সেটা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায়। স্বজন হারানোর যন্ত্রণাটা চূড়ানꦕ্ত রাগে♏ পরিণত হয়েছিল। সেই রাগ সামলাতে না পেরে সম্ভবত কাউকে একটা মারতে উদ্যত হয়ে পড়েছিলেন। চার-পাঁচজন কোনওক্রমে তাঁকে সামলে ভিতরে পাঠিয়ে দেন।
মঙ্গলবার সকাল-দুপুরে গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা বাগান এলাকার ছবিটা ঠিক এরকমই ছিল। সবটা প্রকাশ্যে আসছিল না। কিন্তু ক্ষোভের আগুনের আঁচটা পুরোপুরি চেপে রাখা যাচ্ছিল না কোনওভাবেই।🦩 ‘আগুন’ যাতে সংবাদমাধ্যমের কাছে ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে কোনও কসুর ছাড়ছিলেন না এলাকার ‘দাদা’-রা। কেউ ‘ভালোবাসা’-র ডাক দিয়ে বলছিলেন যে ‘আসুন না, ইন্টারভিউ করিয়ে দেব।’ কেউ-কেউ আবার সরাসরি হুমকি দিলেন, ‘ফোন যেন বের করা না হয়। ফোন নিয়ে নেওয়া হবে। ফেরত পাওয়া যাবে﷽ না আর।’
তাতে ছবি তোলার কিছুটা আটকানো গেলেও একটি বাড়ি থেকে যে আর্তির স্বর শোনা যাচ্ছিল, সেট দমানো যায়নি। বাড়ির ভিতরে ঢোকার তো ‘পারমিশন’ ছিল না। তবে নাম গোপান রাখার শর্তে দু'📖একজন দাবি করলেন যে ওখানে নাকি আহতদের পরিবারের সদস্যরা আছেন। কেউ-কেউ আবার দাবি করলেন যে ওখানে নাকি মৃতদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কান্না জড়ানো গলায় তাঁদেরও কিছু বলতে শোনা যায়। তবে ঠিক কী বলছিলেন, তা বোঝা যায়নি। আজহার মোল্লা বাগানের ছোট্ট গলির বিভাষিকীয় তা চাপা পড়ে গিয়েছিল।
তবে রবিবার গভীর রাতে যা ঘটেছে, সেটির বীভৎসতা অবশ্য শুধুমাত্র আজহার মোল্লা বাগানের ছোট্ট গলিতেই আটকে নেই। যে রাস্তাটা দিয়ে ওই গলিতে ঢুকতে হয়, সেখানকার অধিকাংশ মানুষের চোখে-মুখেও আতঙ্ক লেগেছিল। এক যুবকের বাবা জানালেন, রবিবার রাত থেকেই চোখের সামনে বীভৎসতা দেখেছেন ছেলে। যতটা সাহায্য করা যায়, করেছেন। সামনে থেকে 𒀰দেখেছেন মৃতদেহ। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে যাওয়া মানুষদের বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছেন। তার ফলে মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। মঙ্গলবার কাজে যেতে পারেননি ছেলে।