‘উই আর ইউনাইটেড’ থেকে ‘আমরা একা চলব’- সাত মাসেই আমূল পালটে গেল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্র𝓀ী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুর। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ওই দুটি মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেল যে কীভাবে শুরুতেই শেষের পথে ইন্ডিয়া জোট? কিন্তু সাত মাসের ব্যবধানে এমন কী হল যে ইন্ডিয়া জোটে ভাঙন শুরু হয়ে গেল? নরেন্দ্র মোদীকে হ্যাটট্রিক আটকানোর স্বপ্ন নিয়ে যে জোট তৈরি হয়েছিল, সেই জোটের এরকম পরিণতি কোন পথে হল, তা দেখে নিন।
২৩ জুন, ২০২৩: লোকসভা নির্বাচনের জন্য পাটনায় বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বলেছিলেন, 'আমরা তিনটি বিষয়ের উপর জোরܫ দিয়েছি। প্রথমত, উই আর ইউনাইটেড। দ্বিতীয়ত, আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। তৃতীয়ত, আমাদের বিরোধী বলবেন না। আমরাও এই দেশের নাগরিক। আমরাও দেশপ্রেমিক। আমাদের রক্ত 𒐪গেলে যাবে। কিন্তু আমরা দেশের জন্য লড়াই করব।'
১৭ এবং ১৮ জুলাই, ২০২৩: পাটনার বৈঠকের থেকেও বেশি সংখ্যক বিরোধী দলের নেতারা বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। বৈঠকে মোট ২৬টি বিরোধী 🎀দলের নেতারা ছিলেন। নরেন্দ্র মোদীর হ্যাটಞট্রিক আটকাতে ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছিল যে কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হবে। তৈরি করা হবে সচিবালয়।
সেই বৈঠকেই বিরোধীদের জোটের নাম দেওয়া হয় ‘ইন্ডিয়া’ জোট। যা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরই মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল। সেই রꦛেশ ধরেই মমতা বলেছিলেন, ‘যদি কেউ আমাদের চ্যালেঞ্জ করতে চান, তাহলে ক্যাচ আস ইফ ইউ ক্যান (যদি ক্ষমতা থাকে আমাদের ধ♑রে দেখাও)। ভারতকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হবে।’ সেইসঙ্গে মমতা বলেছিলেন, 'আওয়ার ফেভারিট রাহুল গান্ধীজি।'
১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩: বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের ১৩ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে ছিলেন তৃণ🦩মূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩ ডিসেম্বর, ২০২৩: ইন্ডিয়া জোটে ভাঙনের সূত্রপাতটা মূলত হয় ৩ ডিসেম্বর থেকেই। যেদ༒িন দেশের চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে ভরাডুবির মুখে পড়ে কংগ্রেস। হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যে পুরোপুরি ধসে যায়। রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়। মধ্য়প্রদেশে উড়ে যায়। তেলাঙ্গানা অবশ্য ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস। কিন্তু হিন্দি বলয়ের রাজ্যে যে ধাক্কা খায়, তাতে ইন্ডিয়া জোটের অন্দরে কংগ্রেসে🔴র ভিত টলমল হয়ে যায়। স্পষ্ট হয়ে যায় যে জোটে কংগ্রেসের আধিপত্য মেনে নেবে না আঞ্চলিক দলগুলি।
৪ ডিসেম্বর, ২০২৩: ৬ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের কথা ছিল। তার আগে মমতা বলেছিলেন, ‘ইন্ডিয়া জোটের মিটিংয়ের জন্য় কেউ জানায়নি। আমি জানিও না। আমার কাছে কোনও ইনফরমেশন নেই। আমি যদ🥀ি জানতাম, তাহলে তো সেই বুঝে সূচি তৈরি করতাম।’
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩: ছোটখাটো ‘মনকষাকষি’-র মধ্যেই বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবে, তা নিয়ে মাস্টারস্ট্🏅রোক দিয়েছিলেন মমতা। ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম প্রস্তাব করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। যে প্রস্তাব পরবর্তীতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
মমতাকে ধারাবাহিক আক্রমণ অধীরের: দিল্লিতে যখন রাহুল গান্ধী, সোনিয়া꧟ গান্ধীদের সঙ্গে জোটের কথা চলছেিল, তখন রাজ্যে লাগাতার মমতাকে আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি দাবি করতে থাকেন যে বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছেন ম🐭মতা। রাজ্যে লড়াইটা দ্বিমুখী করতে চাইছেন। সেই লড়াইটা হবে তৃণমূল এবং বিজেপির।
তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, দিল্লিতে ১৯ ডিসেম্বরের বৈঠকে মমতা জানিয়েছিলেন যে বহরমপুর এবং দক্ষিণ মালদা লোকসভা আসন ছাড়তে তৈরি আছেন। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস নে🍃তারা ১০-১২টি আসনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেইসঙ্গে মমতাকে 🌄লাগাতার আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছিলেন। যা তৃণমূলের পক্ষে কোনওভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। এমন একটা দল রাজ্যে ১২টি আসনের দাবি করছিল, যে দলের একটাও বিধায়ক নেই।
২৩ জানুয়ারি, ২০২৪: মঙ্গলবার অসমে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আসন সমঝোতা নিয়ে আমাদের মধ্যে চলছে। শীঘ্রই সামনে আসবে সেটার ফলাফল। এই বিষয়ে এখানে কিছু বলব না আমি। তবে ব্যক্তিগতভাবে মমতাজির সঙ্꧅গে এবং পার্টির সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক আছে। কখনও আমাদের কেউ কিছু বলে দেন (অধীরের মতো নেতা সম্ভবত), কখনও ওদের কেউ কিছু বলে দেন। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। আসন বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে সেইসব বিষয় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’
২৪ জানুয়ারি, ২০২৪: মঙ্গলবার মমতা বলেন, 'আমার কোনও কথা হয়নি। কারও সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি🐓। আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ওরা প্রথম দিন🌟েই প্রত্যাখান করেছে। তখন থেকেই আমার দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বাংলায় আমরা একা চলব। এই যে ওরা মিছিল করছে, সৌজন্যতার খাতিরে সেটা আমায় একবারও জানিয়েছে? আমিও তো ইন্ডিয়া জোটের সদস্য। (ওরা কি বলেছে নাকি) যে দিদি, আপনার রাজ্যে যাচ্ছি?'
তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং বাংলার বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। পুরো ভারতে কী করব, সেটা নির্বাচনের পরে ভাবব। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দল। আমরা বিজেপিকে হারানোর জন্য যা করার করব। কোনও আলোচনা হয়নি। মিথ্যা কথা। অ্যাবসোলিউটলি রং। মিথ্যাটা আমি বলব না বলতে। অ্যাবসোলিউটলি রং🉐।’
তাহলে ইন্ডিয়া জোটের কী হবে? মমতা সাফ বলেন, ‘জোটটা কারও একার নয়। আমরা আঞ্চলিক দলগুলো এক থাকব। আমরা তো বলেছি যে ৩০০টি আসনে একা লড়াই করুক🐽 (কংগ্রেস)। বাকি আসনে আঞ্চলিক দলগুলি লড়াই করবে। সেখানে হস্তক্ষেপ করবে না। সেখানে যদি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে আমরা বুঝে নেব।’