সকাল ১১ টার ট্রেন্ড অনুযায়ী সামান্য পিছিয়ে তৃণমূলের সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। ৭০৮ ভোটে এগিয়ে বিজেপির সৈকত পাঁজা। বেলা বাড়তেই যদিও পরিস্থিতি বদলায়। আসতে আসতে খেলায় ফেরেন সিদ্দিকুল্লা। শেষ খবর পাওয়া অনুযায়ী, তিনি ১৭ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন। শেষ পর্যন্ত, ৩১৮০৫ ভোটে জয়যুক্ত হয়েছেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।এই কেন্দ্রে এবারের তৃণমূলের প্রার্থী হলেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। এই আসনে বিজেপির তরফে দাঁড়িয়েছেন সৈকত পাঁজা। অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে এই কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন সিপিএম প্রার্থী অনুপম ঘোষ।মন্তেশ্বর হল বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার মন্তেশ্বর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটি গ্রাম তথা গ্রাম পঞ্চায়েত। রাঢ় বাংলায় দামোদর নদ ও অজয় নদের মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চলটি মূলত গোপভূম নামে পরিচিত। বাংলায় মুসলিম আগমনের আগে এই অঞ্চলটি বহু বছর ধরে সদগোপ রাজাদের দ্বারা শাসিত হত। পরবর্তীকালে এই গোপভূম অঞ্চলটিকে শেরগড়, সেলিমপুর, সেনপাহাড়ী পরগণা ইত্যাদি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত করা হয়। তারা অমরারগড় থেকে রাজ্য শাসন করলেও পরবর্তীকালে তাদের থেকে দু’টি অংশ বিচ্ছিন্ন হর দামোদর নদের তীরে ভরতপুর ও কাঁকসাতে নতুন রাজবাড়ী তৈরী করেন। শূরা রাজারা কোনোভাবে এই অঞ্চলে পৌরাণিকভাবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মনে করা হয় যে, তাঁরা খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে একাদশ শতাব্দী অবধি এই অঞ্চলে শাসন করেছিলেন। তারা উত্তর রাঢ়ের সিংহেশ্বর ও গড় মান্দারণে বসতি স্থাপন করেছিলেন বলেও মনে করা হয়। এই পরিবারেরই আরেকটি শাখা বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলা বর্ধমানে এসে বসতি গড়ে তোলে। শূর বংশের প্রবর্তক আদি শূরের পুত্র ভূ শূরের রাজধানী ছিল বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার অন্তর্গত শূরনগর বা সুরোগ্রামে।মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রটি বাঘসান, ভাগড়া, মুলগ্রাম, দেনুর, জামনা, কুসুমগ্রাম, মাঝেরগ্রাম, মামুদপুর-১, মন্তেশ্বর, পিপলান ও শুশুনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি মন্তেশ্বর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এবং বড়পলাশন-১, বড়পলাশন-২, বোহার-১, বোহার-২, বিজুর-১, বিজুর-২ এবং সাতগাছিয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি মেমারি-২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলির অন্তর্গত। মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রটি বর্ধমান-দূর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রেরঅ ন্তর্গত। আগে এই কেন্দ্রটি কাটোয়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছিল।২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সজল পাঁজা জয়ী হয়েছিলেন৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৪,১৩৪৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সিপিএম প্রার্থী চৌধুরী মহ. হেদায়াতুল্লাহ। তাঁর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৮৩, ৪২৮৷ তৃণমূল প্রার্থী সজল পাঁজা তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী চৌধুরী মহ. হেদায়াতুল্লাহকে ৭০৬ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের চৌধুরী মহ. হেদায়াতুল্লাহ মন্তেশ্বর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের নারায়ণ হাজরা চৌধুরীকে পরাজিত করেছিলেন তিনি।২০০১, ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালে সিপিআইএমের আবু আয়েশ মণ্ডল যথাক্রমে তৃণমূল কংগ্রেসের নারায়ণ হাজরা চৌধুরী, কংগ্রেসের দেবব্রত রায় ও কংগ্রেসের বিশেশ্বর ভট্টাচার্যকে এই আসনে পরাজিত করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে সিপিআইএমের হেমন্ত রায় কংগ্রেসের গৌরগোপাল রায় ছাড়াও ১৯৮২ ও ১৯৭৭ সালে কংগ্রেসের তুহিন সামন্তকে পরাজিত করেছিলেন।১৯৭২ সালে কংগ্রেসের তুহিন সামন্ত এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭১ ও ১৯৬৯ সালে সিপিআইএমের কাশিনাথ হাজরা চৌধুরী জিতেছিলেন। ১৯৬৭ সালে এই আসনে কংগ্রেসের এন.সি. চৌধুরী জয়ী হয়েছিলেন। তারও আগে ১৯৬২ সালে সিপিআইয়ের সৈয়দ আবুল মনসুর হাবিবুল্লাহ এই আসনে জিতেছিলেন। ১৯৫৭ সালে নির্দলের ভক্তচন্দ্র রায় এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৫১ সালে দেশের প্রথম নির্বাচন কংগ্রেসের আনন্দপ্রসাদ মণ্ডল মন্তেশ্বর আসনে জয়ী হয়েছিলেন।