নাম তাঁর অমর মল্লিক, বয়স ৯০-এর কোটায়, ৯২। তবে এই ব🔯য়সেও তিনি দিব্যি তরতাজা। এখনও নিয়মিত কলেজস্ট্রিটের সেই বিখ্যাত কফি হাউসে গিয়ে সময় কাটান অমরবাবু। কফি হাউসে এখন যাঁরা আড্ডা দিতে, কফি খেতে আসেন তাঁরা সকলেই অমর মল্লিকের থেকে অনেকটাই ছোট, হাঁটুর বয়সী। ব্যক্তিগত জীবনে অমর মল্লিকের পরিবারে রয়েছেন তাঁর ছেলে, নাতি, এবং নাতির ছেলে,অর্থাৎ চতুর্থ জেনারেশন চলছে।
সংবাদ প্রতিদিনকে অমর মল্লিক নিজেই জানিয়েছেন, তিনি প্রায় ৭১ বছর কফিহাউসে আসছেন। 🧜তিনিই এখন কফি হাউসের বর্তমান আড্ডায় প্রবীণতম ব্যক্তি। তাঁর সমবয়সীরা সকলেই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন। রতু সরকার লেনের বাসিন্দা তিনি। বয়সের ভারে শারীরিক সক্ষমতা কমেছে ঠিক, তবে ইচ্ছে একটুও কমেনি। অমর মল্লিকের কথায়, আগে তাঁর বাড়ি থেকে ১০ মিনিট হেঁটেই তিনি কফি হাউসে পৌঁছে যেতেন। এখন তাঁর সেখানে পৌঁছতে প্রায় আধঘণ্টা লাগে। বয়সের কারণেই দ্রুত হাঁটতে পারেন না, হাঁপিয়ে যান। যদিও তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তাঁর বয়স ৯২।
এই কফি হাউসের সঙ্গে কাটানো বহু বর্ষীয়ান অমর মল্লিককে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে রেখেছে। বিখ্যাত কফি হাউসের যে গল্প তিনি শুনিয়েছেন, তাতে গানের লাইন ধরে বলাই যায়, 'কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই…।' কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখোমুখি বসার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোর কথাও এখনও অমরবাবুর মনের স্মৃতিতে লেগে রয়েছে। জানাচ্ছেন, সেসময় মাত্র দেড় টাকাতেই ১ কাপ কফি মিলত, সঙ্গে দুধ। নকশল পিরিয়ডে, একটি ছেলের ভোজালি হাতে কফি হাউসে ঢুকে পড়ার স্মৃতিও এখ🐻ন তাঁর মনে টাটকা। তবে সেসবই এখন অতীত, বহু পুরনো ইতিহাস।
অমর মল্লিক জানাচ্ছেন তিনি মোহনবাগান সমর্থক। নিয়মিত খেলা দেখতে যেতেন মাঠে। অমর😼বাবুর কথায়, তাঁর পাড়ার খুদেরা এখন তাঁর কাছে দেশ স্বাধীনের গল্প শোনে। যখন দেশ স্বাধীন হয়, তখন অমরবাবু ছিলেন বছর ১৫-র কিশোর। সে অনুভূতি অন্য কোনও আনন্দের সঙ্গে মেলাতে পারেন না অমরবাবু। জানান, বাবার কোলে চেপে নেতাজির বাড়িতেও নাকি তিনি গিয়েছেন। অমরবাবুর মনে আছে যে কীভাবে স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো থেকে ফিরে আসার পর ছি ছি করেছিল সংস্কারবাদীরা। তখন কালাপানি পার হওয়াকে সহজ চোখে দেখত না অনেকেই। অমরবাবু জানাচ্ছেন তাঁর ঠাকুরদার মামা গোপাললাল শীল স্বামী বিবেকানন্দকে অনেকไদিন চন্দননগরের বাড়িতে রেখে দিয়েছিলেন।
এখানেই শেষ নয়, অমর মল্লিকের স্মৃতিতে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। বলেন, রবীন্দ্রনাথের চলে যাওয়ার দিন💮 তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। তাঁর কথায়, অমন শোভাযাত্রা আর কখনও হয়নি। একসময়, বেঙ্গল ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক ছিলেন অমর মল্লিক। সেসময় তরুণ ব্যাডমিন্টন শিক্ষার্থীদের অনুশীলন চলত নেতাজি ইন্ডোরে। একবার নাকি আকাশছোঁয়া ইলেকট্রিক বিল এসেছিল, যা নিয়ে তিনি জ্যোতিবাবুর সঙ্গে দেখা করতেও যান। তৎকালীন মুখমন্ত্রী ২টো শব্দ বলেছিলেন। তারপর আর সেই ইলেকট্রিল বিল দিতে হয়নি।