না ফেরার দেশে একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, বাংলাদেশের প্রখ্যাত গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে গত চার দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন করোনা আক্রান্ত এই শিল্পী। শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন তাঁর পুত্র মাশুক আলমগীর রাজিব। ফকির আলমগীরের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। বাঁ ফুসফুসে নতুন করে শুক্রবার সংক্রমণ ধরা পড়ে, তার মধ্যেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। শেষরক্ষা হয়নি। করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও গত ১৪ জুলাই এই সংগীত শিল্পীর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকলে পরদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেখান থেকে তার আর ঘরে ফেরা হল না। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রাধনমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর শোকবার্তায় বলেন, 'এ দেশের সংগীতাঙ্গনে, বিশেষ করে গণসংগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে'। শহীদ মিনারে বরেণ্য কোনও ব্যক্তির শেষ শ্রদ্ধার অনুষ্ঠান আয়োজনে ফকির আলমগীর থাকতেন উদ্যোগী ভূমিকায়। আর শনিবার সেই শহীদ মিনারেই শেষবারের মতো এল এই গণসঙ্গীত শিল্পীর নিথর দেহ। গণসংগীতে তিনি যে ‘মশাল’ জ্বালিয়ে গেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা ধরে রাখার আহ্বানে শনিবার বৃষ্টিভেজা এক দুপুরে ফুলেল শ্রদ্ধায় তাকে চির বিদায় জানানো হল। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এদিন খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানে গোরস্থ করা হয় শিল্পীকে।দুপুর পৌনে ১২টায় ফকির আলমগীরের মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে ফকির আলমগীরের স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর বলেন, ‘সে যেই বিপ্লবী কণ্ঠে গানগুলো লিখে গেছে, গণসঙ্গীতের প্রজ্জলিত মশাল রেখে গেছে, আগামী প্রজন্ম যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম গানগুলোকে ছড়িয়ে দেয়। কৃষক-শ্রমিকের গান, স্বাধীনতার গান যেন সংরক্ষিত হয়। তাহলে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে। ফকির আলমগীর ছিলেন গণমানুষের শিল্পী। তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই’।বাংলাদেশের গণআন্দোলনের ইতিহাসে ফকির আলমগীরের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ফকির আলমগীরের চলে যাওয়া একজন কিংবদন্তির প্রস্থান।