মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল, কংগ্রেস না সিপিএমের মতোই একটা সময় বাঙালির তর্কের বিষয় ছিল উত্তম না সৌমিত্র? বেশ কয়েকটা বছর পিছিয়ে শুরু করলেও উত্তম কুমার যুগেও নিজের আলাদা ছাপ তৈরি করেছিলেন সৌমিত্র- একান্তই নিজের দক্ষতা ও ক্যারিশ্মায়। উত্তম বনাম সৌমিত্র দ্বন্দ্ব যে বিদ্যমান ছিল সেকথা অস্বীকার করবার কোনও জায়গা নেই। তবে সৌমিত্রর কথায় এটা নেহাতই 'কম্পিটিটিভনেস'। কোনও টেনশন বা ইনসিকিউরিটি নয়। আর ‘কম্পি🅺টিটিভনেস না থাকলে কি জীবনে এগোনো যায়?’ এই প্রশ্ন পালটা ছুঁড়ে দিতেন তিনি। সৌমিত্র এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন আসলে ‘বাঙালি তার স্বভাবসুলভ প্রবণতা অনুযায়ী আমাদের লড়িয়ে দিয়েছিল, আর কিচ্ছু না’।
সমালোচকদের কথায় উত্তম কুমার বাংলা ছবির মহানায়ক, তাঁর সাম্রাজ্য ছিল গোটা টলিগঞ্জ জুড়ে। যেখানে ভাগ বসানো সহজ ছিল না। অনেকের মতেই সৌমিত্র হির♕ো নন, অভিনেতা। যে কোনও ভূমিকায় ফিট হয়ে যেতেন। তবে উত্তমকুমার-মহানায়ক। তাঁর ম্যানারিজম, স্টাইল, স্টারডম- ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই তুলনা আজীবন চলছে। সত্যজিত রায় যখন নায়ক ছবিতে পছন্দের অভিনেতা সৌমিত্রকে ছেড়ে উত্তম কুমারকে বেছে নিয়েছিলেন তখনও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল সৌমিত্রকে। তবে তিনি দমে যাননি। ‘কম্পিটিটিভ স্পিরিট' নিয়ে লড়ে গিয়েছেন ম🌟াঠ দখলের লড়াইয়ে।
সৌমিত্রর কথায় তাঁদের পেশাদারি লড়াই জবরদস্ত ছিল। ছবিটা অনেকখানি বদলে যায় ঝিন্দের বন্দীর পর। এই ছবি🎃তে প্রথমবার একসঙ্গে অভিনয় করলেন সৌমিত্র- উত্তম।
একজন মৃদুভাষী রোম্যান্টিক হিরোর পক্ষে কী এক লহমায় ভিলেন হয়ে উঠা সম্ভবপর? তাঁর নাম যদি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হয়- তাহলে তো একশো শতাংশ সম্ভবপর। এই ছবিতে বাঙালির মহানায়ক উত্তম কুমারকে টক্কর দিয়েছিলেন সৌমিত্র।সশরদিন্দু বন্দ𓆉্যোপাধ্𝐆যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত পরিচালক তপন সিনহা এই ছবিতে লম্পট, সুদর্শন ময়ূরবাহন, অর্থাত্ সৌমিত্র চোখ টেনেছেন পুরোমাত্রায়।
সবমিলিয়ে ন'টি ছবিতে উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ ক🌳রেছেন সৌমিত্র। যা𒁏র মধ্যে ঝিন্দের বন্দী ছাড়াও দর্শক মনে চিরকাল ঠাঁই পেয়েছে স্ত্রী ও দেবদাস। এছাড়াও রয়েছে 'অপরিচিত', 'যদি জানতেম', 'দর্পচূর্ণে'র মতো ছবি। প্রতিটি ছবিতেই উত্তম কুমারকে আগাগোড়া ফাইট দিয়ে গিয়েছেন সৌমিত্র, ওই 'কম্পিটিটিভনেস' সত্ত্বা সঙ্গে নিয়েই।
উত্তমপন্থীরা বলেন ‘উ🦄ত্তম উত্তমই, সৌমিত্র অনেক বেশি সময় ধরে বাংলা চলচ্চিত্রে থেকেও ওঁনাকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি’। তবে স্টারডমের পিছু ধাওয়া বোধহয় কোনওদিন করেননি সৌমিত্র। তিনি চরিত্র ཧঅভিনেতা হতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজের মুখে একথা বলেছেন তাঁর বিশ্বাস ছিল উত্তম কুমারের চরিত্রাভিনয়ে আরও জোর দেওয়া উচিত ছিল। তবে উত্তম কুমার হয়ত বুঝেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের একজন প্রকৃত ‘নায়ক’ দরকার। তবে উত্তম-সৌমিত্রের শিল্পীসত্ত্বা বরাবর একে অপরকে শ্রদ্ধা করে গিয়েছে। ঝিন্দের বন্দীর সেটে বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল, তাতে চড়াই-উতরাই এসেছে তবে প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা প্রতিস্পর্ধীর বাইরে তিক্ততা তাঁদের ঘিরে ধরেনি।
দু-জনের মধ্যে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে সেই প্রশ্ন বরাবরই বড়ই বেমানান। কাউকেই এগিয়ে রাখার দরকার নেই। দুজনেই বাংলা সিনেমার এক-একটা অধ্যায়। একটা সিলেবাস। অভিনয় শেখার আলাদা এক-একটা প্রতিষꦆ্ঠান। ‘তিন ভুবনের পারে’ হয়ত আজ দু-জনার ফের আড্ডার আসর জ🌠মেছে…. পুলুটাকে আদর করে কাছে টেনে নিচ্ছেন উত্তমদা।