কোরবানি ইদের সময় রেড মিট বা লাল মাংস খাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায় বাংলাদেশে৷ এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রাক🍬্তন পরিচালক 𝓰অধ্যাপক ড. খুরশিদ জাহান৷
ডয়চে ভেলে: কোরবানির ইদে বাংলাদেশের মানুষ প্রচুর মাংস খেয়ে থাকেন৷ বিღষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
ড. খুরশিদ জাহান: কোরবানির ইদ হল মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ এই সময়ে বিভিন্ন পশু যেমন, গরু, ছাগল, মহিষ, উট, দুম্বা জবাই করার মাধ্যমে উৎসবটা পালন করা হয়৷ এগুলো কিন্তু রেড মিটের উৎস৷ আমি বলব, গরুর মাংস বা রেড মিট খাওয়ার আগে অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করে নিতে হবে৷ বছরে একটা দিন আমরা কোরবানির মাংস খাব, এটা অনেকে আশা করে 🍬থাকে৷ কোরবানির মাংসকে অনেকে পবিত্রও মনে করেন৷ এই গরুর মাংসের অনেক উপকারিতা আছে। কিন্তু বেশি খাওয়ার ঝুঁকিও রয়ে গিয়েছে৷ মাংসের ক্ষতিকারক দিক মূলত চর্বি৷ খাওয়ার পর এই চর্বি বাসা বাঁধে রক্তে এবং এটা ক্ষতিকারক কোলস্টেরল বাড়িয়ে দেয়৷ যার কারণে হৃদরোগ, উচ্চ রকܫ্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ আরও অনেক সমস্যা শরীরে হতে পারে৷
মানবদেহের জন্য লাল মাংসের প্রয়োজনীয়তার দিকটি নিয়ে কী বলবেন?
পুষ্টির দিক থেকে রেড মিট কিন্তু অনেক গুণে গুণান্বিত৷ এটা হাই কোয়ালিটির প্রোটিনের উৎস৷ এরমধ্যে অনেক ভিটামিন, মিনারেল রয়ে গিয়েছে৷ আয়রন আছে, যেটা রক্তশূন্যতা দূর করে৷ রেড মিট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হাড় ও দাঁতের গঠনে ভূমিকা রাখে, চুল-নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে৷ তারপর বাচ্চা বয়স থেকে শুরু করে সবারই শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়া♎তে সাহায্য করে৷ আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, অতিরিক্ত অসারতা দূর করতে সহায়তা করে৷ এসব স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় ভালো উৎস হল রেড মিট৷
যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, কোলেস্টরেল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ আছে- তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
তাঁরা রেড মিট খেতে পারবেন কিনা, কতটুকু খেতে পারবেন- এর জন্য অবশ্যই তাঁদের বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে৷ কোরবানির ইদে সবাই মাংসটা খেতে চায়৷ যাঁদের কোনও সমস্যা নেই, তাঁরা দিনে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত খেতে পারবে, যেটা সপ্তাহে সবমিলিয়ে ৩০০-৫০০ গ্রাম হতে পারে৷ কিন্তু যাঁরা অসুস্থ: বিশেষ ✨করে হৃদপিণ্ডে সমস্যা আছে, যাদের কিডনির সমস্যা আছে, যাদের ওজন অনেক বেশি, আর্থারাইটিস আছে- তাঁদের বুঝেশুনে খেতে হবে, পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে৷ তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোরবানির ইদের সময় পাওয়া পশুর পাঁজর বা সিনার মাংসে চর্বি কম থাকে, সেখান থেকে কিছুটা হয়তো খাওয়া যাবে৷ কিন্তু বেশি খাওয়া যাবে না, সীমিত আকারে- সেটা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী৷
গরু ও খাসির মাংস যাঁদের বারণ, তাঁরা সাধারণত মুরগির মাংস খেয়ে থাকেন৷ এই বিকল্প ঠিক কিনা?
হাই কোলেস্টরেলের কারণে যাদের গরুর মাংস খাওয়া নিষেধ, তারা ঝুঁকি কমাতে মুরগির মাংস খেয়ে থাকেন৷ মুরগির মাংসেওꦺ কিন্তু গরুর মাংসের মতোই হাই কোয়ালিটির প্রোটিন থাকে৷ যাদের সমস্যা তাদের প্রোটিন কম খাওয়া উচিত, কিডনি রোগীদের এমনিতেই কম খাওয়া উচিত৷ ফুড ডাইভারসিফিকেশন বলে কিন্তু একটা কথা আཧছে৷ আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই, তারমধ্যে অনেক ধরনের খাবার যুক্ত করা উচিত৷ এই খাবারের সঙ্গে আমরা যদি শাকসবজি, ফলমূল, দানাদার খাবার যুক্ত করি- তাহলে আমাদের মাংসের পরিমাণটা কম হয়ে যায়৷ সব খাবার মিলিয়ে খেলে সমস্যা কমে যায়৷
আরও পড়ুন: World Famous Indian Dips: বিশ্ব সেরা কাঁচা🔥 আম ও ধনে পাতার 𝓡চাটনি! এইভাবে বানালে হাত চাটবেন ১০ বার
আমিষের চাহিদা পূরণে মাছ, মাংস ছাড়া আর কোন কোন খাবার গ্রহণ করা যায়?
দু'রকম উৎস থেকে আমরা আমিষ পেতে পারি৷ একটা হল, প্রাণিজ উৎস যেমন, মাছ-মাংস৷ আরেকটা হল ভেজিটেবল৷ দেশে আমরা যত সমীক্ষা করেছি, সেখানে আমরা বেশিরভাগই পেয়েছি সিরিয়াল প্রোটিন৷ বিভিন্ন ধরনের ডাল হলো আমিষের ভালো উৎস৷ ডাল ও চাল মিলিয়ে যদি আমরা ✃খাবার খাই, তাহলে কিন্তু হাই কোয়ালিটির প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়৷ ডালে যে অ্যামিনো অ্যাসিড কম থাকে, সেটা চালে থাকে৷ আবার চালে যে অ্যামিনো অ্যাসিড কম থাকে, সেটা ডালে থ꧑াকে৷ এখন যদি মিলিত খাবারটা খাই, তাহলে এটা পরিপূর্ণ হাই ক্লাস অ্যামিনো অ্যাসিড যুক্ত খাবার হয়৷
ছোটবেলা থেকেই শাকসবজি খাওয়ার প্রতি কিছু অনীহা দেখা যায়৷ এর কারণ কী? সমাধান কীভাবে হতে পারে?
বাচ্চাদের যখন সাপ্লিমেন্ট ফুড দেওয়া হয়, তখন থেকে যদি আমরা এমন খাবারে অভ্যস্ত করি, যಌেটা তাদের উপযোগী এবং তাদের টেস্ট অনুযায়ী, যা ভেজিটেবলস ও অ্যানিমেল সোর্সের মিলিত খাবার- এভাবে দিলে বাচ্চারা এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে উঠবে৷ কিন্তু অনেক মাকেই দেখি, তাঁরা এত ঝামেলার মধ্যে যায় না৷
আরও পড়ুন: Instant Noodles: চটজলদি পেট ভরে, তবু এই 🦄পাঁচটি কারণে রোজ খাওয়া যায় না ইনস্ট্যান্ট নুডুলস
তাঁরা বাচ্চাদের সিরিয়াল জাতীয় খাবার দেন, যেটাতে হয়তো অনেক ভিটামিন মিক্সড থাকে৷ একটু বড় হতে হতেই দেখি, তাদের বাইরে থেকে প্রসেস ফুড কিনে এনে দেন৷ তারা আর কখনোই শাকসবজি খেতে চায় না৷ তারা প্রসেস ফুডেই ঝুঁকে যায়৷ আমাদের বড় পড়ুয়াদের মধ্যে দেখেছি একই অ💃বস্থা৷ খাবারের তো একটা অভ্যেস গড়ে তুলতে হয় ছোটবেলা থেকে, সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হꦓয় না৷
কোরবানির ইদের সময় খাবার গ্রহণ নিয়ে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
ধর্মীয় উৎসব তো আমরা পালন করবই৷ যেভাবেই খাই, কিছু হলেও মাংস খাব৷ তবে এই সময়ে মাংস খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত৷ প্রয়োজন বুঝে খেতে হবে৷ বেশি মাংস থাকলে, বেশি রান্না হলে অতিরিক🥂্ত খাওয়া হয়৷ আমি বলব, মাংস রান্না করার আগে চর্বিযুক্ত অংশগুলো ফেলে দেওয়া উচিত৷ মাংস রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল বা ঘি ব্যবহার না করাই ভালো৷ কোরবানির সময় মাংসটাই মেইন মিল হিসেবে না খেয়ে সঙ্গে যদি শাকসবজি, দানাদার খাবার, বিভিন্ন ধরনের স্যালাড খাই, তাহলে কিন্তু মাংসের পরিমাণ কম হয়ে যায়৷
আরও পড়ুন: Avian flu: ভারতে বার্ড ফ্লু নি⛎য়ে ভয় কতটা? দুশ্চিন্তার কারণ আছে কি? বলে দিলেন চি🌄কিৎসকরা
এছাড়া আঁশযুক্ত খাবার অতিরিক্ত খাওয়া উচিত৷ কারণ এই সময় দেখা যায় অতিভোজনে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাসট্রিক সমস্যা, ডায়েরিয়া༒ অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে৷ যাঁদের স্বাস্থ্যগত সমস্𝔍যা আছে, তাঁদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে৷ ইদের আগে তাদের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে নিতে হবে৷ যেহেতু রেড মিট হৃদরোগ, স্ট্রোক, আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়- সেজন্য আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই ত𓆏ুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)