বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের সকলের মনে ও মননে চিরস্থায়ী। তাঁর সাহিত্য ও সংগীতের আনন্দধারায় আমরা সকলেই ভেসে চলেছি প্রতিনিয়ত। কবিগুরু তাঁর গোটা জীবনে অজস্র স⭕্বজন পরিজনের মৃত্যু দেখেছেন। অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন জাগে যে, কীভাবে রবীন্দ্রনাথের বংশধারা শেষ হয়েছিল? তাহলে চলুন আজকের সেই বিষয়ে আলোচনা করা যাক🐼। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ‘জমিদারপুত্র’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাত্র ২২ বছর বয়সে খুলনার দক্ষিণ ডিহির মেয়ে ৯ বছরের ভবতারিণীকে বিয়ে করেছিলেন, পরবর্তীকালে যাঁর নাম দেন মৃণালিনী দেবী।
তিনি আড়ম্বরহীন জীবনযাপন করতেন এবং দিনের বড় একটা সময়টাই তাঁর হেঁশেলেই কাটত, কারণ ভোজনরসিক রবীন্দ্রনাথের জন্য মৃণালিনীকে নিত্য🧸নতুন পদ রান্না করতে হতো। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তিন কন্যা ও দুই পুত্রসন্তানের পিতা ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর দাম্পত্যজীবন ছিল মাত্র ১৯ বছরের। আসলে মৃণালিনী অসুখে পড়েন, তখন রবীন্দ্রনাথ তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। তখন চিকিৎসকেরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। অবশেষে মাত্র ২৯ বছর বয়সে কবি পত্নী পরলোক গমন করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর মৃত্যুর পর তিনি কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন ফিরে যান। সেইসময় তিনি তাঁর নব প্রতিষ্ঠিত বিদ্যায়তনের শিক্ষাদানপদ্ধতি নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছিলেন।
আরও পড়ুন: (ডায়াবেটিস হলে কি রুটি খাওয়া ঠিক নয়? কী বলছে✱ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা?)
কাজে এতটাই মগ্ন হয়ে গেলেন, যেন কোনো কিছু ভাবার তাঁর🔯 সময় নেই, তবে বাইরে থেকে মানুষটিকে বেশ শক্ত মনে হলেও হৃদয়ে চলছিল রক্তক্ষরণ। তাঁর কবিতায়, লেখায় সেই বিচ্ছেদ ও একাকিত্বের গভীর বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো। স্ত্রীর মৃত্যুর পরই মেজ কন্যা রানী অর্থাৎ রেনুকা দেবী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। আর সেইসময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। তখন, কবিগুরু তাঁর মেয়েকে নিয়ে প্রথমে হাজারিবাগ, পরে আলমোড়ার পাহাড়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে কন্যার খানিক স্বাস্থের উন্নতি দেখে রানীকে কলকাতায় নিয়ে আসেন কবি, তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের যক্ষ্মা দেখা দেয় কবি কন্যার, যেখানে রা🍬নীকে আর বাঁচানো যায় না। স্ত্রীর মৃত্যুর ৯ মাসের মাথায় রবীন্দ্রনাথ হারালেন তাঁর মেয়ে রানীকে। মাত্র ১২ বছর ৭ মাস বেঁচে ছিলেন কবি কন্যা। এরপর কবি শান্তিনিকেতনে ফিরে এসে স্কুলের কাজে মনোনিবেশ করেন।
এরপর হঠাৎ পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসুস্থতার খবর পান রবীন্দ্রনাথ। তখন দ্রুত কলকাতায় আসেন রবীন্দ্রনাথ, কিন্তু বাঁচানো গেল না দেবেন্দ্রনাথকে। মহর্ষির মৃত্যুর পর ঠাকুর পরিবারের কেউ আর একসঙ্গে থাকতে চাইলেন না, তাই যৌথ পরিবারটি গেল ভেঙে। রবীন্দ্রনাথের ছেলে রথীন্দ্রনাথ যখন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে জন, তখন ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ও ছোট কন্যা মীরা দেবীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে🎃 ছিলেন। ছেলে শমীন্দ্র ছিলেন কল্পনাপ্রবণ। তিনিও একদিন তাঁর বাবার মতই হবে বলে সবা🃏র আশা ছিল, তবে সব আশা যে শেষপর্যন্ত পূর্ণতা পায়না। আসলে ছুটি কাটাতে বন্ধুদের সঙ্গে মুঙ্গেরে গিয়ে কলেরায় আক্রান্ত হয়েছিলেন শমীন্দ্র। আর তখনকার দিনে কলেরা ও যক্ষ্মার মতো রোগের কোনোরকম চিকিৎসা ছিল না।
আরও পড়ুন: (ဣলাঞ্চবক্স দেখলেই বাচ্চার মুখ ভার? ট্রাই করে দেখুন এই মজাদার রেসিপিগুলো)
রবীন্দ্রনাথের মুঙ্গের পৌঁছানোর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই শমীন্দ্রর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ১১ বছর। রবীন্দ্রনাথের বড় কন্যা বেলাও রানীর মত যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। তাঁকেই বাঁচানো যায়নি। মৃত্যুর সময় বেলার বয়স হয়েছিল ৩১ বছর ৬ মাস। তাঁর মৃত্যু রবীন্দ্রনাথকে বড় আঘাত দিয়েছিল। একের পর এক ঘটে চলা মৃত্যু রবীন্দ্রনাথের কলম থামাতে পারেনি। কবির পাঁচ পুত্র-কন্যার মধ্যে বেলা, রানী ও শমীন্দ্র কবির জীবদ্দশাতেই মারা গেছিলেন। বেঁচে ছিলেন পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও কন্যা মীরা দেবী। কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথের সন্তান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিলনা, তাই রথীন্দ্রনাথ নন্দিনী নামের একটি ꧃মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন। তিনিও নিঃসন্তান ছিলেন। অপরদিকে রবীন্দ্রনাথের মেয়ে মীরা আর জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র নীতিন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর বোন নন্দিতা গঙ্গোপাধ্যায় সেইসময় রবীন্দ্রনাথের একমাত্র জীবিত বংশধর ছিলেন।
এরপর জার্মানিতে পড়াশোনাকালে নীতিন্দ্রনাথ মারা যান। এদিকে নন্দিতাও নিঃসন্তান ছিলেন। ১৯৪১ সালে পরলোক গমন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর ঠিক কুড়ি বছর পর ১৯৬১ সালে পুত্র রথীন্দ্রনাথ মারা যান। রথীন্দ্রনাথ ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এরপর নাতনি নন্দিতা ১৯৬৭ সালে মারা যান। সেইসময় কবির বংশধর বলতে কেবল কন্যা মীরা দেবী জীবিত ছিলেন। তবে, তিনিও তাঁর মেয়ে নন্দিতার ম🐼ৃত্যুর ঠিক দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৯ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এইভাবে কবির সকল বংশধর একে একে শেষ হয়ে যায়।