ভয়াবহ বন্যা এবং Covid-19 সংক্রমণের মাঝেও আট মাস পরের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে অসমে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। রাজ্যের ২.১৭ কোটি ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রচারের রমরমা আর কাদা ছোড়াছুড়ির পালা। বিধানসভা নির্বাচনের আর মাত্র ৮ মাস বাকি। তাই চড়তে শুরু করেছে উত্তেজনার পারদ। একদিকে যেমন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে, অন্য দিকে পুরনো জোট শরিকরা আবার ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি, নতুন জোটের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চমকে দিয়েছিলেন রাজ্যের ভোটাররা। ১৫ বছরের মজবুত কংগ্রেস শাসনকে উলটে দিয়ে অসম গণ পরিষদের সঙ্গে আঁতাত গড়ে ক্ষমতার লসিংহাসনে অভিষেক হয় বিজেপি-র। এবারও সেই গাঁটছড়া অটুট থাকছে। তবে এখনও পর্যন্ত অবস্থান স্পষ্ট হয়নি বোড়ো অধ্যুষিত এলাকায় নৌরসিপাট্টা গেড়ে বসা বিপিএফ-এর। কোভিড অতিমারীর দোহাই দিয়ে বিপিএফ শাসিত বোড়োল্যান্ডে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে রাজ্যপালের শাসন জারি করার কারণে বিজেপি-র উপরে দারুণ খাপ্পা এই দলের পাল্লা শেষমেষ কোনদিকে ঝুঁকবে তা বলা যাচ্ছে না। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ১২৬টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৬০টি এবং অগপ ও বিপিএফ যথাক্রমে ১৪ ও ১২টি। কংগ্রেস ২৬টি আসন পেয়েছিল আর নিখিল ভারত সংযুক্ত গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) ১৩টি আসনে জিতেছিল।‘২০২১ সালে অগপ, বিপিএফ বা অন্য যে কোনও দলের সঙ্গে জোটে আমাদের নিশানায় রয়েছে ১০০ এর ওপরে আসন জয়। জোটসঙ্গী বাছা এবং আসন বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব,’ জানিয়েছেন অসম বিজেপি-র সভাপতি রণজিৎ কুমার দাস।ক্ষমতার মসনদ ফের দখল করার পরিকব্পনায় যখন ব্যস্ত বিজেপি, তখন বিরোধী কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ শনিবার মহাজোট ঘোষণা করেছে। তাদের আশা, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে লড়তে বাম দলগুলিকেও পাশে পাওয়া যাবে।কংগ্রেসের এই জোট যে নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়বে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত রাজ্যের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এই জোটকে ‘অপবিত্র’ বলার পাশাপাশি তাঁর পূর্বাভাস, অচিরে গুয়াহাটির কংগ্রেস কার্যালয়ের নাম বদলে রাজীব ভবন থেকে এআইইউডিএফ প্রধান বদরুদ্দিন আজমলের নামানুসারে ‘আজমল ভবন’ রাখা হবে। জবাবে এআইইউডিএফ সম্পাদক মহম্নমদ আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচনে তাঁদের তরফে কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মনোনীত করা হবে না। ওই পদে তাঁরা কংগ্রেস প্রার্থীকেই সমর্থন জানাবেন। শাসক বিজেপি ও বিরোধী কংগ্রেস ছাড়াও অসম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা যাবে বেশ কিছু সদ্য গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক দলকে। বিশেষ করে সংশোধিত নাগরিক আইন বিরোধী আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভোট ময়দানে ফায়দা তুলতে কোমর বেঁধেছে বেশ কিছু সংগঠন। এদের মধ্যে অগ্রণী অল বঅসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ (এজেওয়াইসিপি)। সক্রিয় রাজনৈতিক দল গঠন করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ১৬ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গড়ে ফেলেছে দুই ছাত্র সংগঠন। এ ছাড়া ভোট রাজনীতির ময়দানে হাতেখড়ি হতে চলেছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে তাদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন গত ডিসেম্বর মাস থেকে জেলবন্দি দলীয় প্রধান অখিল গগৈ। আবার সাংবাদিক থেকে রাজনীতিকে রূপান্তরিত হওয়া অজিত ভুঁইয়া, যিনি ২০১৯ সালে কংগ্রেসের সংর্থন পেয়ে রাজ্য সভার সাংসদ হয়েছেন, তিনিও আঞ্চলিক গণ মোর্চা (এজিএম) নামে একটি দলের আনুষ্ঠানিক অভিষেক ঘোষণা করতে চলেছেন কিছু দিনের মধ্যেই। সব মিলিয়ে ২০২১ সালের অসম বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে বিচিত্র পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে, প্রতিদিন যার প্রেক্ষিত ও চরিত্রে অবিরত রদবদলের উপরে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।