অতিরিক্ত ছোঁয়াচে হলেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত অনেকের মধ্যে মৃদু উপসর্গ অথবা উপসর্গের অভাব দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে তা বিপজ্জনক মনে হলেও এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসের এই প্রবৃত্তিই বিশ্বজুড়ে তার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলছে।স্যান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রকমিত রোগ বিশেষজ্ঞ মোনিকা গান্ধীর মতে, ‘উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধি ভালো লক্ষণ। ব্যক্তিবিশেষ থেকে সমাজ, এর সুফল লাভ করবে।’তাঁর দাবি, উপসর্গহীন সংক্রমণের মধ্যে রয়েছে নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীগত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা সামাজিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার চাবিকাঠি। এই ধারণার পিছনে রয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ।সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য মানুষের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বিশ্বের জনসংখ্যার বড় অংশে উপস্থিত থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত সমীক্ষায় মানবদেহের ‘টি সেল’ জনিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হিসেব রাখা হয়নি।বিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘমেয়াদী টি সেল-ই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। কোভিড রোগীদের সেরে ওঠার পিছনে রয়েছে এই টি সেলের কেরামতি। এই বিষয়ে গত মে মাসে স্যান ডিয়েগো-র লা জোলা ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনোলজি-র বিশেষজ্ঞরা ‘সেল’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন। গবেষণায় কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের রক্তের নমুনার সঙ্গে ২০১৫-২০১৮ সালের মধ্যে ব্লাড ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া নমুনার তুলনা করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, ৪০%-৬০% পুরনো নমুনাগুলিতেও উপস্থিত রয়েছে নোভেলকরোনাভাইরাস, যার নাম সেই সময় বিশ্ববাসীর কাছে অজানা। একই ভাবে সিঙ্গাপুরে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৫০% নমুনায় ভাইরাসের বিরুদ্ধে টি সেলগুলিকে প্রভাবিত হতে দেখা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণে সার্স ও মের্স-এর মতো সংক্রমক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময়েই মানবদেহে টি সেলগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। আবার এই গবেষণায় যুক্ত অন্য এক গবেষক আলেসান্দ্রো সেট জানিয়েছেন, সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাসের সঙ্গেো লড়াই করার সুবাদেই টি সেলগুলি কাজ করতে শুরু করে। ক্লিভল্যান্ডের মেয়ো ক্লিনিকের গবেষক অ্যান্জ্রু ব্যাডলে বলছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম টি সেল।