আর কতদিন? আর কটা প্রজন্ম সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় সংরক্ষণ পাবে, তাই নিয়ে এবার সরাসরি প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। মরাঠা সংরক্ষণ মামলার শুনানিতে শুক্রবার মহারাষ্ট্রকে বেজায় চাপে ফেলল শীর্ষ আদালত।স্বাধীনতার এত বছর পড়েও অনগ্রসর শ্রেণিকে কেন সংরক্ষণ দিতে হচ্ছে, তা জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃ্ত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এদিন সংরক্ষণের ফলে বৈষম্য বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মোট ৫০% পর্যন্ত সংরক্ষণের মাত্রাটুকুও তুলে দেওয়ার দাবির কি যুক্তি, তা জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট।এর উত্তরে মহারাষ্ট্রের পক্ষের আইনজীবী মুকুল রোহাতগি বলেন, 'মন্ডল কমিশন ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেটা ১৯৩১ সালের জনগণনার উপর ভিত্তি করে ভাবা হয়েছিল। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটা নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।' মহারাষ্ট্রের আইনজীবী জানান, সংরক্ষণের বিষয়টি রাজ্যগুলির উপর ছেড়ে দেওয়াই ভাল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটাই শ্রেয় হবে বলে জানান তিনি।শুধু এতেই থামেননি মহারাষ্ট্রের পক্ষের আইনজীবী। তিনি বলেন, 'মন্ডল রায়- যেটি কিনা ইন্দ্র সাহনি মামলা নামেও পরিচিত, সেখানেও কিন্তু কেন্দ্র আর্থিকভাব পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠীদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রেও সেই ৫০%-এর মাত্রাটা পার করাই হয়েছিল।'মহারাষ্ট্রে মারাঠাদের পক্ষে ১৬% সংরক্ষণের দাবিতে অনড় থাকেন মুকুল রোহাতগি। এরপরেই পাল্টা প্রশ্ন করে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ।'যদি ৫০% মাত্রাটাও না থাকে, তাহলে সাম্য বলে তো কিছুই থাকছে না। আমাদের তো এই সংরক্ষণ প্রথা নিয়ে একটু ভাবা প্রয়োজন। আপনার এ বিষয়ে কী মত? সংরক্ষণের ফলে যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে তাই নিয়ে আপনার মত কী? আর কত প্রজন্ম ধরে এভাবে সংরক্ষণের সুবিধা চলবে?' পাল্টা প্রশ্ন করে বেঞ্চ।তবে এর উত্তরেও সংরক্ষণের পক্ষেই যুক্তি দেখান মহারাষ্ট্রের আইনজীবী। তিনি বলেন, মন্ডল রায়ের সালটা ১৯৩১ । তারপর থেকে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ।প্রত্যুত্তরে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলে, 'স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও রাজ্যগুলি এত সুবিধা দিয়ে চলেছে। তাহলে কি আমরা এটা ধরে নেব বিন্দুমাত্র উন্নয়নই হয়নি এতদিনে? কোনও অনগ্রসর গোষ্ঠীই এগিয়ে যেতে পারেনি?'এর উত্তরও তৈরি ছিল মুকুল রোহাতগির। কালবিলম্ব না করে তিনি বলেন, 'অবশ্যই আমরা এগিয়েছি। তবে তার মানে তো এই নয় যে অনগ্রসর জাতি ৫০ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। আমি বলছি না যে মন্ডল রায় সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি খালি বলছি যে বহু বছর পার হয়েছে। আইন বদলেছে, জনসংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে অনগ্রসর জাতির মানুষের সংখ্যাও।'শুক্রবার এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি শীর্ষ আদালত। পুনরায় সোমবার এই মামলার শুনানির নির্ঘণ্ট দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।