শিল্পী হলে কি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে? নেদারল্যান্ডসের এক ডিজাইনার নিজের সৃষ্টির মাধ্যমে জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের নানা সমাধানসূত্র তুলে ধরছেন৷ প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য তার মূলমন্ত্র৷ নেদারল্যান্ডসের ডিজাইনার মারিয়ান ফান আউবেলের কাছে সূর্যই মূল প্রেরণা৷ জানালার আলোকিত সজ্জার মতো এমন ডিজাইনের মূলে রয়েছে সোলার সেল৷ জ্বালানির উৎস হিসেবেও সেগুলি কাজ করে৷ মারিয়ান বলেন, ‘সৌর প্যানেল অদৃশ্য করে তোলার বদলে দেখাতে চাই, যে এটা সত্যি আমাদের ভবিষ্যৎ৷ আমার কাজে নান্দনিকতা যোগ করে৷ শিল্পকর্ম হিসেবে এটির নিজস্ব শক্তি রয়েছে৷'এই সব সোলার উইন্ডো প্যানেল দেখতে স্টেন্ড গ্লাস মনে হলেও এর একটি কার্যকারিতাও রয়েছে৷ আর ‘সানে' নামের এই সৌরশক্তিচালিত ঝুলন্ত বাতি সূর্যাস্তের নকল করে৷ মারিয়ান বলেন, ‘সুন্দর বস্তু হিসেবে সূর্যকে আমরা সবাই চিনি৷ সমুদ্রতটে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখলে জাদুময় মুহূর্ত মনে হয়৷ সেটাই আমি আলোর বাতির মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে চাই৷ সূর্য ডুবে গেলেও ‘সানে' চালু থাকে৷ সূর্যের সঙ্গে প্রত্যেকের একটা ব্যক্তিগত সমীকরণ রয়েছে৷ এটাও সত্যি যে সূর্য বিভিন্ন বস্তুকে শক্তি দেয় এবং সেটির আলো সত্যি মুগ্ধ করে৷'আমস্টারডামের এই স্টুডিও থেকেই মারিয়ান ফান আউবেলের সৃষ্টিকর্ম আসে৷ তিনি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এমন বস্তু তৈরি করেন, যা জ্বালানিও সাশ্রয় করে৷ যেমন একটি টেবিল, যা ডকিং স্টেশন হিসেবেও কাজে লাগানো যায়৷দুবাই এক্সপো ২০২০-এ তাঁর বড় আকারের প্রকল্প শোভা পেয়েছে৷ নেদারল্যান্ডসের প্যাভিলিয়নের জন্য তিনি রঙিন সৌর প্যানেল সৃষ্টি করেছিলেন৷ সেই সোলার ছাদ প্যাভেলিয়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে এবং ভিতরের গাছপালার জন্যও যথেষ্ট সূর্যের আলোর ব্যবস্থা করেছে৷ মারিয়ান ফান আউবেলের ডিজাইন সোলার প্যানেলের বৈচিত্র্য তুলে ধরে৷ তিনি বলেন, ‘এগুলি অরগ্যানিক ফটোভোল্টাইক, যেগুলি প্যাডের উপর প্রিন্ট করা হয়৷ এর মধ্যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হেভি মেটাল ব্যবহার করা হয় না৷ সম্পূর্ণ গোলাকার হওয়ায় অত্যন্ত হালকাও বটে৷ সৌর প্রযুক্তির নতুন প্রজন্ম বলা চলে৷'ফান আউবেল স্বচালিত গ্রিনহাউসে খাদ্য উৎপাদনের এক সমাধানসূত্রও ডিজাইন করেছেন৷ নেদারল্যান্ডসে ফ্লোরিয়াড হর্টিকালচার এস্কপোয় সেটি প্রদর্শিত হচ্ছে৷ যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ বা চাষের জায়গার অভাব রয়েছে, সেখানে এই পাওয়ার প্লান্ট খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করে৷ মারিয়ান বলেন, ‘কৃষিকাজের ভবিষ্যতের খাতিরে এটা আমার সৃষ্টি৷ এর নাম পাওয়ার প্ল্যান্ট৷ আসলে যে কোনও জায়গায় খাদ্য উৎপাদন সম্ভব৷ নিজের ছাদেই সেটা করা যায়৷ অর্থাৎ পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে খাদ্য উড়িয়ে আনার প্রয়োজন নেই৷ নিজের বাসার মধ্যেই সেটি উৎপাদন করা যায়৷ ভার্টিকাল ফার্মিং ও সোলার গ্লাসের কল্যাণে সেই কাজ সম্ভব৷'পেশায় ডিজাইনার হলেও বিজ্ঞান ও বিকল্প জ্বালানির উৎস নিয়েও চর্চা করেন তিনি৷ মারিয়ান মনে করেন, ‘উদ্ভাবনের সময় থেকেই সোলার সেলের বিকাশ হয়ে চলেছে৷ আমার মনে হয়, মাটি না খুঁড়ে এবার আকাশের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সময় এসে গিয়েছে৷ প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে বাঁচতে এবং অফুরন্ত উৎস কাজে লাগাতে পারলে পৃথিবীটা খুব সুন্দর জায়গা হয়ে উঠতে পারে বলে আমি মনে করি৷' মারিয়ান ফান আউবেলের মতে, সৌর প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল৷(বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)