'একদিন ক্যালকাটা (অধুনা কলকাতা) হয়ে ওঠার ক্ষমতা আছে সিঙ্গাপুরের' - ১৮১৯ সালে যে শহরের (বর্তমা🅺নে স্বাধীন দেশ) বিষয়ে এমনই আশাপ্রকাশ করেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক শীর্ষকর্তা, আজ সেই দেশ সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। সেখানে অনেকটাই পিছনে পড়ে আছে কলকাতা। অথচ ১৯৬৫ সালে যখন মালয়েশিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন সমস্যায় গভীর সাগরে নিমজ্জিত ছিল সিঙ্গাপু𝔉র। কিন্তু মাত্র ৫৮ বছরেই সেই সিঙ্গাপুর এখন অনেকের কাছে ‘স্বপ্নের শহর’ হয়ে উঠছে। পরিণত হয়েছে ‘গ্লোবাল সিটি’-তে। যে শহর (এখন দেশ) প্রায় ২০০ বছর আগে বাংলা প্রেসিডেন্সির অংশও ছিল। আর সেই দেশের ‘জন্মদিন।’
ইতিহাসের পাতা ওলটালে দে💟খা যাবে, ১৮১৯ সালে সিঙ্গাপুরের (শহর ছিল সেইসময়) পত্তন করেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্যার থমাস স্ট্যামফোর্ড র্যাফেলস। সেইসময় কলকাতায় (তৎকালীন ক্যালকাটা) নিজের উচ্চপদস্থ আধিকারিককে তিনি লিখেছিলেন যে 'একদিন ক্যালকাটা হয়ে ওঠার ক্ষমতা আছে সিঙ্গাপুরের।' সেইসময় সিঙ্গাপুর নেহাতই কলকাতার একটি বাণিজ্যিক 'দ্বার' ছিল। ১৮৫১ সাল পর্যন্ত বাংলা প্রেসিডেন্সির অংশও ছিল সিঙ্গাপুর। তারপর বাংলা প্রেসিডেন্সি থেকে আলাদা হয়ে গেলেও ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত কলকাতা থেকেই সিঙ্গাপুরের শাসন চালানো হত।
২০২২ সালে নেতাজির জন্মবার্ষিক♌ীর সময় একটি সেমিনারে সিঙ্গাপুরের লেখক আসাদ লতিফ জানিয়েছিলেন, প্রাথমিকভাবে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অংশ ছিল সিঙ্গাপুর। সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি বলেছিলেন যে 'তাৎপর্যপূর্ণভবে ১৮৬৭ সালের মধ্যে ক্যালকাটার পর ভারত সরকারের দ্বিতীয় গুরুত্ব🌠পূর্ণ বন্দর হয়ে উঠেছিল সিঙ্গাপুর। সোজা ভাষায় বলতে গেলে ঔপনিবেশিক ভারতের সম্প্রসারিত অংশ ছিল সিঙ্গাপুর।' তিনি আরও জানিয়েছিলেন, সিঙ্গাপুর গঠনের ক্ষেত্রে ভারতের যে ছাপ আছে, তা কখনও ভোলা যাবে না। লন্ডনের পরিবর্তে কলকাতা থেকেই সিঙ্গাপুরের শাসন করত ব্রিটিশরা।
পরবর্তীতে অবশ্য অনেক উত্থাল-পাতালের সাক্ষী থাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ১৯৫৯ সালের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছিল সিঙ্গাপুর। ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়ায় যোগ দিয়েছিল। কিন্তু দু'বছর পরেই মালয়েশিয়া থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল সিঙ্গাপুর। ১২৬-০ ভোটে সিঙ্গাপুরকে আলাদা করে দেওয়ার প্রস্তাব পাশ করেছিল মালয়েশিয়া। আর তারপর থেকেই সিঙ্গাপুর এবং কলকাতার ভাগ্য আলাদা খাতে বইতে শুরু করেছিল। অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকলেও ধীরে-ধীরে উন্নয়নের পথে হাঁটতে শুরু করেছিল সিঙ্গাপಞুর। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে আজ বিশ্বের অন্যতম স্বপ্নের দেশ হয়ে উঠেছে। অথচ কলকাতা পিছিয়ে পড়েছে।
যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, সিঙ্গাপুর এবং কলকাতাকে স্রেফ খালি চোখে বিচার করতে বসলে ভুল হবে। কারণ প্রেক্ষাপট অনেকটাই আলাদা ছিল। বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালে কলꦅকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে একটি অনুষ্ঠানে সিঙ্গাপুরের অন্যতম বিখ্যাত ইতিহাসবিদ তান তাই ইয়ং জানিয়েছিলেন, ব্রিটিশ-শাসিত অধিকাংশ বন্দর শহরের মতো সিঙ্গাপুরেরও পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। দক্ষ নেতৃত্বের হাতে পড়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে গিয়েছিল সিঙ্গাপুর। কলকাতা যেখানে পশ্চিমবঙ্গের একটি শহর আর পশ্চিমবঙ্গ যেখানে ভারতের একটি রাজ্য, তাই সিঙ্গাপুরের মতো সুবিধা পায়নি। সেখানে দেশ হওয়ায় ছোট্ট সিঙ্গাপুর নিজের ছন্দে চলতে পেরেছিল। নিজের মতো করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। যে কাজটা কলকাতার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কলকাতাকে দেশভাগ, শরণার্থী সংক্রান্ত সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল কলকাতাকে। দিল্লিতে রাজধানী সরিয়ে দেওয়ার সꦑিদ্ধান্তও কলকাতার পক্ষে যায়নি। বরং দিল্লিকে রাজনৈতিক হাব ও মুম্বইকে বাণিজ্যিক হাব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। কলকাতা থেকে ‘লাইমলাইট’ সরে গিয়েছিল।