এবার কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন (সিআইসি) এবং রাজ্য তথ্য কমিশনের (এসআইসি) কাজ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হল সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিকে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ আসলে রাজ্য বিধানসভার ক্ষমতা খর্ব করার প্রয়াস, অভিযোগ তথ্য জানার অধিকার আন্দোলন কর্মীদের।বিধিসম্মত সংগঠন হিসেবে সংসদের বার্ষিক রিপোর্ট জমা দিতে হয় সিআইসি-কে এবং বিধানসভায় বার্ষিক রিপোর্ট জমা দিতে হয় এসআইসিগুলিকে। এই সমস্ত রিপোর্ট নিয়ে সংসদ বা বিধানসভায় ক্কচিৎ বিতর্ক বা আলোচনা হয়। যদিও অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে তথ্য আইনের কার্যকারিতা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক সদস্য। চলতি অর্থবর্ষে মোট ১২টি ইস্যু খতিয়ে দেখার জন্য তালিকাভুক্ত করেছেন রাজ্য সভার সেক্রেটারি জেনারেল উৎপল কুমার সিং। এরই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সিআইসি ও এসআইসি-এর কাজকর্ম খতিয়ে দেখার বিষয়টি। রাজ্য সভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজ্য সভার ১০ জন সাংসদ এবং লোক সভার ২০ জন সাংসদকে নিয়ে গঠিত সিআইসি-র সব সদস্যের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ১২টি ইস্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যথেষ্ট চর্চা হওয়ার কারণেই সেগুলি খতিয়ে দেখার দাবি ওঠে বলে জানা গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তথ্য কমিশনের রিপোর্ট যাচাই করতে যে কোনও পদাধিকারীকে ডাক পাঠাতে এবং প্রয়োজনে এনজিও সংস্থার পরামর্শের ভিত্তিতে কমিশনের কাজ খতিয়ে দেখার ক্ষমতা রয়েছে স্ট্যান্ডিং কমিটির। প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর প্রকাশিত সতর্ক নাগরিক সংগঠনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের তথ্য কমিশনের এক তৃতীয়াংশ নেতৃত্বহীন, এক চতুর্থাংশ তথ্য কমিশনে একাধিক শূন্যপদ রয়েছে এবং ঝাড়খণ্ড ও ত্রিপুরায় তথ্য কমিশন কার্যত অচল। এ ছাড়া বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশ, তেলাঙ্গনা ও রাজস্থানের মতো নয়টি রাজ্যে মুখ্য তথ্য কমিশনার অনুপস্থিত, তথ্য জানার অধিকার আইনে যা আবশ্যিক। ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে রাজস্থানে মুখ্য তথ্য কমিশনার পদে নিয়োগ হয়েছে। এনজিও-টির তরফে অঞ্জলি ভরদ্বাজ জানিয়েছেন, ‘তথ্য কমিশনের রিপোর্ট সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিকে দিয়ে যাচাই করানো নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই, কারণ সেই ক্ষমতা কমিটির রয়েছে। আমরা চাই কমিটি যেন যাচাইয়ের শর্তাবলী প্রয়োগ করে এবং কোনও মতেই তথ্য জানার আইনকে দুর্বল করার চেষ্টা না হয়। এর আগে নতুন পরিষেবা নিয়মাবলী চালু করে ওই আইনকে দুর্বল করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।’অন্য দিকে, ন্যাশনাল ক্যাম্পেন ফর পিপল রাইট টু ইনফর্মেশন সংস্থার কর্তা ভেঙ্কটেশ নায়েকের প্রশ্ন, রাজ্য তথ্য কমিশনের রিপোর্ট কী ভাবে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি যাচাই করতে পারে? তাঁর যুক্তি, ওই কমিশন যে হেতু রাজ্য সরকারের অধীনস্থ, তার উপরে কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থার ক্ষমতা আরোপ করা যায় না। নায়েকের অভিযোগ, ‘রাজ্য বিধানসভার ক্ষমতা লোপ করার আরও এক প্রচেষ্টা এই সিদ্ধান্ত।’