গ্রামীণ পাটনার একটি বিয়েবাড়ি যোগে ১০০-র বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্তের হদিশ মিলল। দিন পনেরো আগের সেই বিয়েবাড়িই এখন বিহারের সবথেকে বড় সংক্রমণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের মতে, বিয়েবাড়ি থেকেই সংক্রমণের শৃ্ঙ্খল ছড়িয়ে পড়েছে।গত কয়েকদিনে পাটনা সাব-ডিভিশনের অন্তর্গত পালিয়াগঞ্জে হুড়মুড়িয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। সেই বিয়েবাড়িতে উপস্থিত যে ১৫ জনের শরীরে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের সংস্পর্শে ৩৫০-র বেশি মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সবমিলিয়ে ১০০ জনের বেশি সংক্রমিত হয়েছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আধিকারিকরা জানান, গুরুগ্রামে একটি সংস্থায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন বর। বিয়ের জন্য গত মাসের শেষের দিকে বিহারে বাড়িতে ফেরেন। তিলক অনুষ্ঠানের পর তাঁর করোনার উপসর্গ ধরা পড়ে। গত ১৫ জুন অর্থাৎ বিয়ের দিন তাঁর ধুম জ্বর আসে। সেজন্য বিয়ে পিছিয়ে দিতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা জোরাজুরি করেন। বাধ্য হয়ে জ্বরের ওষুধ খেয়ে বিয়ে করতে যান। দু'দিন পরই তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। পাটনার এইমসে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান। করোনার উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনকে না জানিয়েই তড়িঘড়ি তাঁর শেষকৃত্য মিটিয়ে ফেলেন পরিবারের লোকজন। এরইমধ্যে কেউ একজন ফোন করে পুলিশ-প্রশাসনকে পুরো বিষয়টি জানান। তারপরই ঘটনাটি সামনে আসে। তারপর ১৯ জুন তড়িঘড়ি বিযেবাড়িতে উপস্থিত বরের সব নিকটাত্মীয়ের করোনা পরীক্ষা হয়। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে গত সপ্তাহে তিনদিন সেই গ্রামে বিশেষ ক্যাম্প খোলা হয়। মোট ৩৬৪ জনের নমুনার সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ৮৬ জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাঁদের বিহতা এবং ফুলওয়াড়ি শরিফের আইসোলেশন কেন্দ্রে ভরতি করা হয়েছে। তার জেরে এলাকায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশের উপসর্গ ছিল না। বিডিও চিরঞ্জীব পাণ্ডে জানিয়েছেন, আপাতত মীথাকুঁয়া, খাগাড়ি মহল্লা এবং পালিয়াগঞ্জ বাজারের একাংশ সিল করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্যানিটাইজেশনের কাজ চলছে। তাতেও অবশ্য দুশ্চিন্তা কাটছে না প্রশাসনের। এমনিতেই বিহারের মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব সবথেকে বেশি পাটনায়। সোমবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯৯। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। তারইমধ্যে কয়েকজনের চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার মাসুল কতজনকে ভুগতে হবে, তা নিয়ে উদ্বেগে আছে প্রশাসন।