নাগাল্যান্ডকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিএসএফকে নিয়ে পুলিশকে ‘সতর্ক’ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে বলেন, ‘(বিএসএফের সঙ্গে) কোনওরকম কোনও দ্বন্দ্ব হোক, সেটা আমি চাই না।’ মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মমতা বলেন, ‘তোমাদের (দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশকে উদ্দেশ্য করে) ওখানে একটা প্রবলেম আছে। বিএসএফ ঢুকে যায় গ্রামে-গ্রামে। গিয়ে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করে বলে অনেক সময় অভিযোগ আসে। এমনকী ভোটের সময় ভোটের লাইনেও তাদের দেখা যায়। তোমরা কি কখনও বিএসএফের ডিজির সঙ্গে কথা বলেছ? এটা ডিজি-টু-ডিজি (রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং বিএসএফের ডিজি) কথা হবে। বিষয়টি বিএসএফের কাছে উত্থাপন করেছ?'ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধির (সীমান্তের ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় প্রবেশের ছাড়পত্র) বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও উত্থাপন করেছেন মমতা। এবার প্রশাসনিক তিনি বলেন, 'কয়েকটি জেলা, বিশেষত মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর - প্রচুর বিএসএফ... ওরা করে কী, ওদের ১৫ কিলোমিটার আসার কথা, সেটাও পুলিশকে জানিয়ে। কিন্তু পুলিশকে না জানিয়ে যেখানে-সেখানে ঢুকে যায়।’তারইমধ্যে নাগাল্যান্ডের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘নাগাল্যান্ডে দেখেছ তো কী প্রবলেম হল? সুতরাং তোমায় জানতে হবে। শীতলকুচিতে তোমরা দেখেছে, কী প্রবলেম হল। কয়েকদিন আগে কোচবিহারে কয়েকজন মারা গিয়েছেন গুলিতে। এরা লোকাল পুলিশকে না জানিয়েই...কোনওরকম কোনও দ্বন্দ্ব হোক, সেটা আমি চাই না। সেজন্য তোমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। আর আমাদের আইসিরা অনেক সময় ভাবেন, না, না, ঠিক আছে। ওদের ছেড়ে দাও। কে কে ছেড়ে দেন? আপনার এলাকায় বাইরের লোক ঢুকলে, মানে যার ঢোকার কথা নয়... আইন-শৃ্ঙ্খলা তো আপনাদের হাতে।’ সঙ্গে বিডিওয়েরও সতর্ক থাকতে বলেন। প্রয়োজনে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিএসএফকে এক্তিয়ার বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। উল্লেখ্য, রবিবার সংবাদসংস্থা পিটিআই জানায়, নাগাল্যান্ডের মনের ওটিঙে নিষিদ্ধ সংগঠন ন্যাশনাল সোশালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ডের (এনএসসিএন) একটি গোষ্ঠীর সদস্য ভেবে 'ভুলবশত' একটি পিক-আপ ভ্যান লক্ষ্য করে গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। মৃত্যু হয় ছ'জনের। কিন্তু পিক-আপ ভ্যানে স্থানীয় বাসিন্দারা ছিলেন। যাঁরা কয়লা খাদান থেকে কাজ করে ফিরছিলেন। বাড়ি না ফেরায় তাঁদের খোঁজ শুরু করেন স্থানীয় যুবক এবং গ্রামবাসীরা। ঘিরে ফেলা হয় সেনার গাড়ি। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মৃত্যু হয় এক জওয়ানের। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সেনার একাধিক গাড়ি। 'আত্মরক্ষায়' গুলি চালায় সেনা। তার জেরে আরও সাত নাগরিকের মৃত্যু হয়। অসম রাইফেলসের শিবিরের এলাকায় হামলা চালান একদল লোক। সেই সময় নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়। আহত হন কমপক্ষে দু'জন।সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে সোমবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন, জঙ্গিদের গতিবিধির বিষয়ে তথ্য মিলেছিল। সেইমতো সন্দেহভাজন এলাকায় তৈরি ছিলেন ২১ প্যারা স্পেশাল ফোর্সের জওয়ানরা। একটি গাড়ি সেখানে আসে। সেটিকে থামতে বলা হয়। কিন্তু সেটি পালানোর চেষ্টা করে। গাড়িতে করে জঙ্গিরা যাচ্ছে সন্দেহে গুলি চালানো হয়।