আরজি কর আন্দোলনের প্রভাব কি উপ-নির্বাচনে পড়বে? শাসক-বিরোধী যে স্বরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য, তার জেরে কি ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে ধাক্কা খাবে তৃণমূল কংগ্রেস? সেই উত্তরটা জানার জন্য মোটামুটি সব রাজনৈতিক দলই অপেক্ষা করছিল। আর শেষপর্যন্ত আরজি কর আন্দোলনের কার্যত কোনও প্রভাবই পড়ল না উপ-নির্বাচনে। সিতাই হোক বা মাদারিহ🔴াট, তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটি বা হাড়োয়া হোক- সব জায়গায় হেসেখেলে জিতেছে তৃণমূল। বিজেপি বা বামেদের অবস্থা রীতিমতো শোচনীয় অবস্থা হয়েছে। আর তারপরই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা বলতে শুরু করেছেন, উপ-নির্বাচনের উপরে আরজি কর আন্দোলনের কোনও প্রভাবই পড়ল না।
কলকাতার শিবনাথ শাস্ত্রী কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী উন্নতি দত্ত বলেছেন, ‘বাংলার নারীরা কতটা সুরক্ষিত, সেটা আজ বাংলার সকল মা-বোনেরা আবারও বুঝিয়ে দিলেন (তথাকথিত) এলিট শ্রেণির মানুষদের!! বিরোধীরা আগস্ট থেকে অভয়াকে (আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক) হাতিয়ার বানিয়ে ভেবেছিল যে সেটার প্রভাব আজকের ফলাফলে ফেলবে। কিন্তু ওরা ভুলে গিয়েছিল যে বাংলার মানু♒ষ ওই হাওয়াই চটি পরা মানুষটাকেই ভালোবাসেন।’
'মানুষকে বোকা বানানোর জন্য ৩ মাস ধরে আন্দোলন'
আরও কড়া ভাষায় তৃণমূলের তথ্যপ্রযুক্তি সেলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন দাসের বলেছেন যে পশ্চিমব🍃ঙ্গের 'সাইলেন্ট' ভোটাররা মুখ খুলেছেন। তাঁরা তৃণমূলকে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন। যে মানুষদের বোকা বানানোর জন্য 'মিথ্যে প্র🐼তিশ্রুতি'-র উপরে দাঁড়িয়ে তিন মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাঁরাই জবাব দিয়েছেন। যাঁরা বাংলাদেশের ধাঁচে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে 'দ্রোহের ভোট' হল।
'মমতা-বিরোধী আন্দোলন ছিল না মোটেও'
যদিও ইভিএমের সঙ্গে আরজি কর আন্দোলনকে মিশিয়ে দিতে রাজি নন তুলিকা 🌳অধিকারী। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে লাগাতার রাস্তায় নামা ‘এয়ারপোর্ট নাগরিক মঞ্চ’-র প্রতিনিধির কথায়, ‘জুনিয়র ডাক্তার এবং সাধারণ মানুষ যে আন্দোলন করেছেন, সেটা সরকার ফেলে দেওয়ার আন্দোলন ছিল না। সিস্টেমের যে গাফিলতি আছে, সিস্টেমের যে ভুলত্রুটি আছে, সেটা শুধরে নেওয়ার জন্যই এই আন্দোলন করা হয়েছে। প্রথম থেকে সেটাই আন্দোলনের মূল্য উদ্দেশ্যে ছিল।’
তবে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের কোনও কোনও নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকে ‘হাইজ্যাক’ করে নিতে চেয়েছিলেন। কথায়, ‘তাঁরা ভেবেছিলেন যে আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে নিলে হয়ত ক্ষমতায় আসা যাবে বা কোনওভাবে কোনও জায়গায় একটা আসন জেতা যাবে। জুনিয়র ডাক্তাররা কখনও বলেননি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করব বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করব। জুনিয়র ডাক্তার বা আমরা বিচারের দাবিতেই রাস্তায় নেমেছিলাম। যদি সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য 📖আন্দোলন করা হত, তাহলে মানুষকে সেই বার্তা দেওয়া হত। সেরকম তো কিছু হয়নি। আমাদের একটাই দাবি - বিচার।’
তাঁর যুক্তি, যাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তাঁরা রাজ্যের শাসক দলের কোনও বিকল্প তৈরি করতে পারেননি। মানুষ তাঁদের উপরে ভরসা করতে পারছে না। এটা নিয়ে তো কোন⭕ও দ্বিমত নেই যে রাজ্যে আপাতত তৃণমূলের কোনও বিকল্প নেই। তাই গাফিলতি বা ত্রুটি থাকলেও তৃণমূলকেই ভোট দিতে হচ্ছে। আর তাছাড়া বাংলার তো ট্রেন্ড এটাই- যে দলকে সরকারে আনে, তাকে অনেকদিন রেখে দেয়।
‘বিকল্প’ তত্ত্বে বিশ্বাস নেই বাম-পদ্ম শিবিরের
বাম ও পদ্মশিবিরের নেতারা অবশ্য সে൲ই ‘বিকল্প’ তত্ত্বে বিশ্বাসী করছেন♏ না। বরং তাঁরা পালটা যুক্তি দিয়েছেন যে উপ-নির্বাচনে তো সরকার পালটানোর ব্যাপার থাকে না। তাই উপ-নির্বাচনে তৃণমূল কত ভোট পেল, তা দিয়ে আরজি আন্দোলনের প্রভাব বিচার করা যাবে না। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তনের ভোটে সেটার প্রভাব দেখা যেতে পারে বলে যুক্তি সাজিয়েছেন বাম ও পদ্মশিবিরের নেতারা।
যদিও প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। সর💜কার-বিরোধী ক্ষোভকে ইভিএমে টেনে আনার মতো সত্যিকারের বিকল্প কি এখনও হয়ে উঠতে পেরেছে সিপিআইএম বা বিজেপি?