শহরের পশ এলাকায় গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু। আর তা নিয়ে এখন তদন্তে নেমে নানা সূত্র হাতড়াতে হচ্ছে পুলিশ কর্তাদের। কারণ আলিপুরের অভিজাত পরিবারের বধূ রসিকা জৈনের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে এই নিয়ে কথাও বলেছে পুলিশ। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আলিপুরের ডিএল খান রোডের একটি আবাসনের নীচ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রসিকাকে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল স্বামী কুশলের। তাই রসিকার সঙ্গে নিত্য অশান্তি হত তাঁর। ভ্যালেন্টাইনস ডে–তেও তুমুল ঝামেলা হয় ওই দম্পতির। এমনকী অত্যাচারও চলত রসিকার উপর। ফলে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বধূ।জানা গিয়েছে, যে ফোনটি রসিকা বেশি ব্যবহার করতেন সেটির কোনও হদিস মিলছে না! রসিকার সঙ্গে তাঁর ননদের ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল, তার তথ্য খোঁজা চলছে। রসিকার বাবা, রাজা সন্তোষ রোডের বাসিন্দা মহেন্দ্রকুমার জৈন আলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁদের একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছিল ডিএল খান রোডের ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলের সঙ্গে। কিন্তু মেয়ে সুখী ছিল না। বাবার অভিযোগ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, মায়ের কাছে রসিকা জানিয়েছিলেন, ছোট বিষয়ে স্বামী তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচারের জেরেই মৃত্যু হয়েছে রসিকার। আত্মহত্যার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয় বাপের বাড়ি। আর রসিকার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি।বিয়ের এক বছর সাতদিনের মাথায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শিল্পপতি কুশল আগরওয়ালের স্ত্রী রসিকা জৈন আগরওয়ালের মৃত্যু হয়। মৃত রসিকার মা–বাবার অভিযোগের আঙুল তাঁর জামাই ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই মহেন্দ্রকুমার জৈনের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর জামাই কুশল আগরওয়াল ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, বধূ নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করেছে। সেই তদন্তে উঠে এসেছে কুশলের প্রাক্তন প্রেমিকার তথ্য। ২০২০ সালে ঘটা করে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এক বছরের বিবাহবার্ষিকী। তার পরেই লকডাউন। ঘরবন্দি একান্ত দৈনন্দিন জীবনেই চমক ভাঙল রসিকার। স্বামী মাদকাসক্ত বলে অনুমান এবং পরে এই নিয়ে অভিযোগও দৃঢ় তাঁর। অশান্তি, ঝগড়া লেগেই থাকত। ১৬ ফেব্রুয়ারি শ্বশুরবাড়ির টেরেসের নীচে পাওয়া গিয়েছিল রসিকার দেহ।সংবাদমাধ্যমে রসিকার বাবা বলেন, ‘মেয়ে কিছু দিন ধরেই তাঁর উপর অত্যাচার চলছে বলে জানিয়েছিল। বাড়ি নিয়ে আসার কথাও বলেছিল। কিন্তু বুঝতে পারিনি এমন দিন দেখতে হবে।’ জৈন পরিবারের অভিযোগ, বিভিন্ন ধরনের নেশা করতেন কুশল। তাতে আপত্তি ছিল রসিকার। তাঁর উপর অত্যাচার চালাতেন জামাই। সূত্রের খবর, গত নভেম্বর মাসে অশান্তি মেটাতে রসিকার মা–বাবা ও অন্যরা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যান। কিন্তু আগরওয়াল পরিবার গেট থেকেই তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। অভিযোগ, তারপরই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রসিকা তাঁর মা সঙ্গীতা জৈনের মোবাইলে একটি মেসেজ পাঠান। মেয়ে যে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে পারছেন না, তার ইঙ্গিত মেসেজে ছিল। কয়েক ঘণ্টা পর মেয়ের শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে ফোন করে তাঁদের বলা হয় যে, দুপুরে রসিকা ডি এল খান রোডের বাড়ির চারতলা থেকে পড়ে গিয়েছেন। বাড়ির প্রত্যেকে হাসপাতালে ছুটে যান। চিকিৎসা চলাকালীন হাসপাতালে রসিকার মৃত্যু হয়। তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দারাও।আগরওয়াল–বাড়ির দুই চাকর ও দুই ড্রাইভারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জেরায় এই চারজন জানান, রসিকা কুশলের মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া হতো। দুজনেই মাথা গরম করে ফেলতেন। কুশলের বাবা শিল্পপতি নরেশ আগরওয়াল জানান, ১৬ ফেব্রুয়ারি যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন তিনি ও তাঁর ছেলে কেউই বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে। এখন পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—স্বামীর মাদকাসক্তির প্রতিবাদের জেরে নির্যাতন এবং তার ফলেই রসিকার মৃত্যু? নাকি নেপথ্যে তৃতীয় কোনও পক্ষের প্রবল প্রভাব? লালবাজার সূত্রে খবর, এক মনোবিদের পরামর্শ নিচ্ছিলেন রসিকা। ওই মনোবিদকে পারিবারিক ব্যাপারে কিছু জানিয়েছেন কি না, তা জানতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে পুলিশ।