সন্দীপ দে ও প্রিয়দর্শী মজুমদার
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার শেষে এখন শিক্ষার পরবর্তী ধাপ নিয়ে ভাবনাচিন্তা🥀র পালা শুরু। যাঁরা উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছ, তাদের জন্য স্নাতক স্তরে একাধিক বিকল্প আছে🐬| পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত - এই তিনটি প্রথাগত বিষয় নিয়ে যদি পড়াশোনা করে থাকস তবে অবশ্যই কারিগরি-স্নাতক শাখার পাশাপাশি বিজ্ঞান-স্নাতক স্তরেও তোমার প্রবেশ অবাধ|
হাতেকলমে যারা কাজ ভালোবাসো এবং ইলেকট্রনিক্সের টুকিটাকি সার্কিট বানানো যাদের একান্ত শখ, তারা অবশ্যই ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হওয়ার কথা ভাবতেই পার। কারিগরি শাখায় স্নাতক স্তরের পঠনপাঠন চার বছরের হলেও সাম্মানিক শাখায় তা এখনও পর্যন্ত তিন বছরেরই আছে| তবে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী অদূর ভবিষ্যতেই তা চার বছরের হতে চলেছে| সেক্ষেত্রে ধরেই নেওয়া যায় যে শিক্ষা পরবর্তী কর্মক্ষেত্রে একজনཧ ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান এর স্নাতক ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের মধ্যে তেমন কোনও আর পার্থক্য থাকবে না|
আরও পড়ুন: HS Results 20▨22: দিনের দিন পাবেন না উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট, তাহলে কলেজে ভ🦂রতি কীভাবে? জেনে নিন
তবে ইলেকট্রনিক বিজ্ঞানের স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রম শেষে পরবর্তী এক বছর হাতেকলমে কাজ শিখে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেও বর্তমানে এই দুই শাখায় যে এক বছরের অর্থাৎ দুটি সেমেস্টারের তফাৎ রয়েছে, তাকে মুছে ফেলা যেতেই পারে| নতুন যে শিক্ষাবর্ষ আসতে চলেছে, তাতে যদি জাতীয় শিক্ষানীতির কথা আপাতত মাথায় নাও রাখি, তবুও বলব পূর্ববর্তী ꦅ১+১+১ স্নাতক পাঠ্যক্রমের তুলনায় বর্তমান সি.বি.সি.এস. পাঠ্যক্রম অনেকটাই ঢেলে সাজানো হয়েছে|
ইলেকট্রনিক বিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলিতে হাতেকলমে কাজের সুযোগ অর্থাৎ ব্যবহারিক ক্লাসের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়েছে| সঙ্গে শিক্ষামূলক ভ্রমণ বা শিল্পভ্রমণ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যসূচিতে রেখেছে| ছাত্রছাত্রীরা পর্যাপ্ত পরিমাণ সেমিনার, ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়ার 🀅সুযোগ পাচ্ছে| অনেক কলেজেরই নিজস্ব প্লেসমেন্ট সেল আছে| তার মাধ্যমে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় অনেক ছাত্রছাত্রীর চাকরির সুযোগ হচ্ছে|
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের বহু কলেজেই সাম্মানিক স্নাতক স্তরে ইলেকট্রনিক্স/ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ আছে| উচ্চমাধౠ্যমিক/সমতুল্য পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা ও গণিতে প্রাপ্ত নম্বর/গ্রেড এবং সামগ্রিক নম্বর/গ্রেডের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলিতে ভতি হওয়া যায়| তিন বছরে ছ'টি সেমেস্টারে তাত্ত্বিক ইলেকট্রনিক্স, পদার্থবিদ্যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক বিꦆষয়, এই সংক্রান্ত বিবিধ গাণিতিক সমস্যা সমাধান, হাতেকলমে ব্যবহারিক ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রনিক্স সংক্রান্ত বিবিধ সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং শেখার পাশাপাশি শিল্প ভ্রমণ, সেমিনার/ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ, ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে নিজের দক্ষতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছেই|
অনেক কলেজই এর পাশাপাশি সংস্থাপন কেন্দ্রের মাধ্যমে চাকরির পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেয়| স্নাতক পাঠ্যক্রমের শেষে নিজের মেধা/ইচ্ছা/প্রয়োজন অনুযায়ী স্নাতোকত্তর পাঠ্যক্রম෴ (ও তৎপরবর্তী শিক্ষকতা/গবেষণা), কর্মমুখী বিবিধ পাঠ্যক্রম, সরাসরি কর্মজগতে প্রবেশ বা ইলেকট্রনিক্স-ভিত্তিক রকমারি ব্যবসা/স্বনিযুক্তি প্রকল্পে যাওয়ার সুযোগ খোলা থাকছে|
ইলেকট্রনিক্স একটি প্রয়োগমূলক বিষয় বলে এখানে সীমাহীন সুযোগ একথা বলার অপেক্ষা রাখে না| উচ্চমেধা থেকে মাঝারি মেধাসম্পন্ন সব ধরণꦉের ছাত্রছাত্রীরাই ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে সাফল্য লাভ করতেই পারে| ইলেকট্রনিক বিজ্ঞানে সাম্🥂মানিক স্নাতকস্তরে ভিত্তি প্রস্তুত করে পরের ধাপে প্রয়োজন অনুযায়ী স্নাতকোত্তর করে (বা না করে) যে যে দিকে এগোনো যায়, তার কিছু উল্লেখ করা হল।
কোনও শিক্ষামূলক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আণবিক ও ন্যানো ইলেক্ট্রনিক্স, সলিড স্টেট পদার্থবিদ্যা, কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন, রোবোটিক্স ইত্যাদি বিষয়ের উপর গবেষণা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ/বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, বিবিধ সরকারি চাকরি ছাড়াও ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন বহুজাতিক সংস্থার ইলেকট্রনিক্স পরীক্ষাগারে গবেষক বিজ্ঞানীর চাকরি, ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট-ভিত্তিক কোনও ডায়াগনস্টিক ল্যাব, হাসপাতাল, গৃহস্থের বা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিবিধ ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট/যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও তাদের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত চাকরি ও ব্য🧸বসা, ইলেকট্রনিক্স সংক্রান্ত বিবিধ ছোটো-ছোটো প্রজেক্ট/পি.সি.বি. ডিজাইন করা ও তাদের বাজারজাতকরণ, স্কুল কলেজের ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত ইꦇলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ তৈরি ও তাদের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত চাকরি ও ব্যবসা|
তোমরা যারা ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চাও, তারা এই সময়ে নিজের চেষ্টাতেই বেশ কিছুটা ব্যবহারিক ইলেকট্রনিক্স শিখে ফেলতে পার। ইলেকট্রনিক্সে বহুল ব্যবহৃত বর্তনীর উপাদানগুলির (যেমন - রোধ, ধার🦩ক, ডায়োড, ট্রানজিসটর) কার্যকারিতা ও বিবিধ ধর্মগুলি শಞুরুতেই জেনে রাখাটা জরুরি|
তোমরা তোমাদের পদার্থবিদ্যা পাঠ্যপুস্তকের প্রবাহী তড়িৎ, তড়িৎ-চুম্বকত্ব, তড়িৎ-চুম্বকীয় আবেশ, আধুনিক পদার্থবিদ্যার অন্তর্গত অর্ধপরিবাহী-এর বিষয়গুলি একবার ঝালিয়ে নাও| যারা উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়েছ, তাদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের উপর একটি স্বভাব দক্ষতা তৈরি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়| তাদেরকে বলব,𝓀 তোমরা সি, ম্যাথল্যাব, অক্টেভ, স্কাইল্যাব প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলি শেখার চেষ্টা কর| পদার্থবিদ্যা এবং গণিতকে সঠিক রূপে যদি কেউ বোঝে, তবে তার পক্ষে প্রোগ্রামিং শেখা কোনও কঠিন কাজ নয়| প্রযুক্তির হাত ধরে ইলেকট্রনিক বিজ্ঞানের সঙ্গেই শুরু হোক তোমাদের জীবনের নতুন অধ্যায়|