শুভব্রত মুখার্জি: দীর্ঘদিন জিম্বাবোয়ে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন হেনরি ওলোঙ্গা এবং হিথ স্ট্রিক। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বও রয়েছে এই দুই ক্রিকেটারের। সম্প্রতি হিথ স্ট্রিকের শরীর খারাপের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের খবরের শিꦿরোনামে উঠে এসেছেন ওলোঙ্গা। তবে উঠে এসেছেন একেবারেই নেগেটিভ কারণে। আর সেই কারণেই এখন অনুশোচনায় ভুগছেন হেনরি ওলোঙ্গা। গত বুধবার ক্যানসারে আক্রান্ত প্রাক্তন জিম্বাবোয়ে সতীর্থ হিথ স্ট্রিকের ‘মৃত্যু’তে শোক জানিয়েছিলেন ওলোঙ্গা। পরে মৃত্যুর খবরটা যে সঠিক নয়, সেটি জানিয়ে ক্রিকেট–বিশ্বে একেবারে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন প্রাক্তন এই পেসার। গোটা 📖বিশ্বের নামিদামি সংবাদমাধ্যম স্ট্রিকের বন্ধু ওলোঙ্গার টুইটকে উদ্ধৃত করেই তাঁর মৃত্যুসংবাদকে নিশ্চিত করেছিল। ঘটনায় অনুশোচনার আগুনে এতদিন ধরে পুড়েছেন হেনরি ওলোঙ্গা। আর এবার তা থেকে মুক্ত হতেই ওলোঙ্গা ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্ট করে ক্ষমা চেয়েছেন।
জিম্বাবোয়ের হয়ে ৩০টি টেস্ট এবং ৫০টি ওয়ানডে খেলেছিলেন ওলোঙ্গা। ৪৭ বছর বয়সি ওলোঙ্গা এখন থাকেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে। ২০০৩ বিশ্বকাপ চলাকালীন জিম্বাবোয়ের মুগাবে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ওলোঙ্গা। এবিসি রেডিওকে ওলোঙ্গা জানিয়েছিলেন, ফেসবুকে জিম্বাবোয়ান স্পোর্টিং ফোরাম নামক একটি পেজে স্ট্রিকের মারা যাওয়ার খবর তিনি প্রথম দেখেন। এরপরেই তাঁর আরেক সতী🦄র্থও নাকি জানিয়েছিলেন স্ট্রিক মারা গিয়েছেন। তারপরেই নাকি তিনি এই খবরটি প্রকাশ করেছিলেন। এরপরই টুইটারে স্ট্রিকের মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে ভুলটা করে বসেন ওলোঙ্গা। সেই ভুলের দুঃখবোধ থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেননি তিনি। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া এবং স্ট্রিকের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিশাল একটি লেখা পোস্ট করেছেন ওলোঙ্গা। ৪৯ বছর বয়সি স্♎ট্রিকের মৃত্যুসংবাদ কীভাবে পেলেন, তার ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষমাও চেয়েছেন প্রাক্তন এই ক্রিকেটার।
ওলোঙ্গা তাঁর ফেসবুক পোস্টে ক্ষমা চেয়ে লিখেছেন, ‘আমি মারাত্মক একটা ভুল করেছি। আর সেই কারণে❀ আমি স্ট্রিকের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। তাদের জন্য এটা অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। এই বছরের শুরুতে যখন খবর পেলাম স্ট্রিক ভালো নেই, তখন আমি নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সেই জীবন থেকে উঠে এসে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করেছি আমার বন্ধুর সঙ্গে । স্ট্রিক আমাকে ওঁর চিকিৎসার সমস্ত খোঁজখবর জানাত। আবার সম্পর্কটা ফের আগের মতন হয়ে উঠেছিল। নাদিনের (স্ট্রিকের স্ত্রী) সঙ্গেও আমার সম্পর্কটা আগের মতন হয়। জিম্বাবোয়ে ক্রিকেটে ওরাই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ এখন অনেকটাই কম হয়। যেভাবেই হোক আমি জানতে পেরেছিলাম স্ট্রিকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। এরপরেই হঠাৎ করেই স্ট্রিকের মৃত্যুর খ✃বর পাই। ভেবেছিলাম এই খবর শোনার পরে স্ট্রিককে নিয়ে ভালো ভালো কথা লিখব। তাঁর ভালো দিকগুলো সবার সামনে তুলে ধরব।এই ভুলটা কীভাবে হল, তার বিশদে বর্ণনা আমি দেব না বা দেওয়ার চেষ্টাও করব না। তবে এতটুকু বলতে পারি, বাকিদের মতো আমিও এটা ফেসবুক থেকে জেনেছি। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তৎক্ষণাৎ স্ট্রিক ও নাদিনকে আমি বার্তা পাঠিয়ে ছিলাম। গভীর রাতে আমি ওদেরকে বার্তা পাঠানোর ফলে ওদের উত্তর দিতে দেরি হয়। স্ট্রিকের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে—এমন পরিচিত কয়েকজন (ক্রিকেট) সতীর্থের কাছেও খোঁজ নিয়েছিলাম আমি। তারা ও জানিয়েছিল যে খবরটি (স্ট্রিকের মৃত্যুর) সত্য। সরাসরি প্রশ্ন করেছিলাম তাদের, উত্তরে তারা আশ্বস্ত করেছিল আমাকে । যেহেতু আগের দিন স্ট্রিকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল, তাই ঘটনাটা আমার কাছে আকস্মিক মনে হয়েছিল। আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল এবং স্ট্রিক সত্যিই মারা গিয়েছে বলে আমার বিশ্বাস হয়েছিল। আমার যেমন খারাপ লেগেছে এই খবরটি শুনে ঠিক তেমনি আমার ধারণা বাকিদেরও খবরটি শুনে একই রকম লেগেছে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘অবশ্যই আমি খুব দুঃখিত। কারণ, খবরটিকে ধ্রুব সত্য হিসেবে আমি ধ🐈রে নিয়েছিলাম। এরপর আমি নিজের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেছি। যা আরও অনেকেই করেছ🔴েন। কয়েক ঘন্টা পর স্ট্রিক আমাকে ছোট্ট বার্তা পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বলে (তাঁর রসিকতাজ্ঞান দুর্দান্ত)। এরপর আমি ভুলটা সংশোধন করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ততক্ষণে ওই খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই যুগে কি এত তাড়াতাড়ি এসব ভুল সংশোধন সম্ভব? তাও যতটা পেরেছি করেছি আমি বা অন্য অনেকেই। আশা করি আপনারা বিষয়টি বুঝবেন এবং দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটির জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। এটা নিয়ে আমি খুবই মনঃকষ্টে রয়েছি। তবে আমাদের চ্যাম্পিয়নের (স্ট্রিক) জন্য সকলেই যেভাবে ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছে, সে সব দেখে হৃদয়টা উষ্ণতায় ভরে গিয়েছে। এত কিছুর মধ্যে এটাই সম্ভবত একমাত্র ভালো দিক।’