এই কেন্দ্রে এবারের তৃণমূলে✱র তরফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। এই আসনে বিজেপির তরফে দাঁড়াচ্ছেন শ্যামা মজুমদার। বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ꦬান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের প্রবীর গঙ্গোপাধ্যায়।
মধ্যযুগীয় বঙ্গে কাটোয়া শহরকে তৎকালীন বাংলা সুবাহের রাজধানী, মুর্শিদাবাদের প্রবেশপথ বলে মানা হত। বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খান, তাঁর রাজত্বকালে(১১২৩-১১৩৩ বঙ্গাব্দ) প্রথম কাটোয়াতে একটি চৌকি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলার নবাব আলিবর্দী খানের আমলে (১১৪৭—১১৬২ বঙ্গাব্দ) নাগপুরের মারাঠা রাজা প্রথম রঘুজি ভোঁসলের মারাঠা সৈন্যরা (বর্গী) এ অঞ্চলে লুঠপাট শুরু করে। তারা কাটোয়ায় ঘাঁটি তৈরি করেছিল। মারাঠা 'বর্গী'দের প্রধান ভাস্কর পণ্ডিত এখানে দুর্গাপুজো প্রচলন করেছিলেন। ১৭৪২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভাস্কর পণ্ডিত যখন কাটোয়ায় দুর্গাপুজো পালন করছিলেন, সেই সময়ে নবাব আলিবর্দী খান কাটোয়ার এক মাꩵইল উত্তরে উদ্ধারণপুরের কাছে গঙ্গা পার হয়ে অকস্মাৎ হামলা হয়েছিলেন। এই যুদ্ধে মারাঠা দস্যুরা পরাজিত হয়েছিলেন। ১৭৪৫ সালে রঘুজি ভোঁসলের সেনাবাহিনী আবার বঙ্গের ওপরে হামলা করেছিলেন। কাটোয়ার দ্বিতীয় যুদ্ধে নবাব আলিবর্দী খান আবার তাদের হারায়। মারাঠারা এরপর বাংলা থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।
১৭৫৭ সালের ১৯ জুন পলাশির যুদ্ধে যাওয়ার পথে, কাটোয়াতে সর্বশেষ নবাবী গ্যারিসনকে পরাজিত করেছিলেন রবার্ট ক্লাইভের ইংরেজি সৈন্যবাহিনী। তার দু’দিন পরে, কাট൲োয়াতেই রবার্ট ক্লাইভ ও তাঁর সেনাপতি সমূহ একটি পরামর্শসভায় হুগলি নদী পার হয়ে পলাশীর অভিমুখী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৭৬৩ সালের ১৯ জুলাই কাটোয়ার তৃতীয় যুদ্ধে ব্রিটিশ সৈন্যরা মীর কাশেমকে পরাজিত করেছিলেন।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক উইলিয়াম কেরির পুত্র উইলিয়াম কেরি জুনিয়রের উৎসাহে, কাটোয়া একটি শহুরে এলাকায় পরিণত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কাটোয়া একটি সমৃদ্ধশালী শহর হয়ে ওঠে যার প্রধান অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ছিল লবণের নদীমাতৃক বাণিজ্য। ১৮৫০ সালে পৌর আইনের ১০ নম্বর ধারায়, কাটোয়া একটি তেহসিল শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৯ সালের ১ এপ্রিল কাটোয়া পুরসভা সেই শহরের শাসন সত্তা হিসেবে স্থাপিত হয়।বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে রেলওয়ের নির্মাণের সঙ্গে কাটোয়ার নগরীকরণের প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হয়। কাটোয়া-আজিমগঞ্জ (১৯০৩), কাটোয়া-ব্যান্ডেল (১৯১২), কাটোয়া-বর্ধমান (১৯১৫) ও কাটোয়া-আহমেদপ🐬ুর (১৯১৭) সালে নির্মি♈ত হয়। কাটোয়ার গঙ্গা নদী ঘাটের কাছে রয়েছে কিছু ঐতিহাসিক মসজিদ, যা নবাবী আমলে তৈরি। এখানে একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে যা মুর্শিদাবাদের কাঠগোলা বাগানবাড়ির সঙ্গে সংযোগ রয়েছে।।এই পথেই নবাবের সেনারা চলাচল করত। বর্তমানে এই পথ বন্ধ। কাটোয়া পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি মহকুমা শহর ও পুরসভা এলাকা। ভাগীরথী নদী ও অজয় নদের তীরবর্তী একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান। কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্র পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি বিধানসভা কেন্দ্র।
এই কেন্দ্রটি কাটোয়া পৌরসভা, দাঁইহাট পৌরসভা, কাটোয়া-২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্🧔লক ও খাজুরডিহি, সুদপুর, করজগ্রাম ও গোয়াই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কাটোয়া-১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলির অন্তর্গত পড়ছে। কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্রটি বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। আগে এই কেন্দ্রটি কাটোয়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জয়ী হয়েছিলেন৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯১ হাজার ৪৮৯৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামা মজুমদার। তাঁর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার ৫৭৮৷ তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামা মজুমদারকে ৯১১ ভোটে পরাজিত করেছিলেন।
২০০৬, ২০০১ ও ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। যথাক্রমে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইএমের সুদীপ্ত বাগচি, কনককান্তি গোস্বামী ও অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৯১ ও ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে সিপিআইএমের অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, কংগ্রেসের রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছিলেন। তার আগে ১৯৮২ ও ১৯৭৭ সালে সিপিআইএমের হারামোহন সিনহা কংগ্রেসের সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও জনতা পার্টির নিত্যানন্দ ঠাকুরকে এই আসনে পরাজিত করেছিলেন।১৯৭২ সালে কংগ্রেসের সুব্রত মুখোপাধ্যায় কাটোয়া কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন।𓂃 তারও আগে ১৯৭১ সালে সিপিআইএমের হারামোহন সিনহা এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে কংগ্রেসের নিত্যানন্দ ঠাকুর কাটোয়া আসনে জিতেছিলেন।