'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো'-তে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর গানকে অসম্মান, ব্যাঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গিতে বেজায় ক্ষুব্ধ শ্রীজাত। ফেসবুকের পাতায় ঘটনার তী𝓰ব্র প্রতিবাদ জানিয়ে লম্বা একটা পোস্ট করলেন কবি। শুধু তাই নয় ‘একলা চলো রে’ গানটি নিয়ে অশালীন ঠাট্টা করার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানিয়েছেন শ্রীজাত। আর সেটা না হলে আইনি পথে হাঁটার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
ঠিক কী লিখেছেন শ্রীজাত?
তিনি লেখেন, 'অভিনেতা ও কৌতুকশিল্পী কপিল শর্মা’র আমি একজন অনুরাগী। প্রতিভা, পরিশ্রম, অধ্যবসায়, লড়াই, কোনওটারই অভাব তাঁর ছিল না। সেই কারণেই আজ যশ, খ্যাতি, অর্থ বা প্রতিপত্তিরও অভাব নেই। এমনটা হলেই আমার ভাল লাগে। এই রূপকথার মতো উত্থান, এই রাস্তা থেকে রাজপ্রাসাদের সফর। কৌতুকরসকে টেলিভিশন বা ওটিটি-র পর্দায় অন্য মাত্রায় তুলে নিয়ে যাবার পিছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য, শৈল্পিক ও বাণিজ্যিক, উভয় প্রেক্ষাপটেই। অবশ্য তিনি একা নন, এ-ধরনের বড় অনুষ্ঠান প্রযোজনা করতে গেলে অনেক মাথাকে এক করতে হয়, যাঁরা একটি বিরাট কর্মযজ্ঞকে নানা দিক থেকে আগলে নিয়ে একসঙ্গে এগোতে পারেন। বহু বছর ধরে কপিল নিজস্ব তেমনই একটি দল সংগঠিত করতে পেরেছেন। দেশ-বিদেশের নানা মাধ্যম মিলিয়ে খুব কম তারকাই আছেন, যাঁরা এখনওꦜ ওঁর অনুষ্ঠানে যাননি। এই অনুষ্ঠানকে সফল করে তোলায় সেসব আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের অবদান যেমন আছে, তেমনই আছে কপিল শর্মা’র সহশিল্পীদের অবদানও, প্রতিটি পর্বে যাঁদে🏅র কৌতুক এই অনুষ্ঠানকে আরও রংদার ও জমজমাট করে তোলে।'
ক্ষুব্ধ শ্রীজাত লেখেন, ‘এইবার রংটা একটু বেশি চড়ে গেছে, তাই লিখছি। বহুবার টেলিভিশনের জন্য নানা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছি, তাই জানি, পর্দায় একজন শিল্পী বা সঞ্চালক যা যা বলেন, তার সবটাই যে তাঁর নিজের মস্তিস্কপ্রসূত কথা, এমনটা নয়। একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠানেওꦿ স্ক্রিপ্ট তৈরি ক’রে দেবার জন্য একাধিক লেখকের দল থাকে, সেই চিত্রনাট্য অনুযায়ী অনুষ্ঠানের চলন সাজানো হয়, সঞ্চালক বা শিল্পীদের কথার বেশ কিছু অংশও সেই সাজানো স্ক্রিপ্টের আওতায় পড়ে। টেলিভিশনের পর্দা থেকে কিছুদিন আগে কপিল শর্মা তাঁর শো-টি NETFLIX-এ নিয়ে গেছেন, আপাতত শতাধিক দেশে যার সম্প্রচার হয় এবং ট্রেন্ডিং অনুযায়ী ভারতে প্রযোজিত ১ নম্বর শো এই মুহূর্তে এটিই। এই যখন তার বহর, আমি নিশ্চিত এই শো-এর চিত্রনাট্য লেখার জন্য নির্দিষ্ট লেখকরা আছেন এবং নিঃসন্দেহে কপিল শর্মারও সে-বিষয়ে বক্তব্য, সংযোজন ও সম্মতি আছে। তাই যদি ধ’রে নিই, তাহলে বলতে হয়, এঁরা সম্প্রতি জেনে বা না-জেনে একটি অন্যায় করেছেন। ভুল নয়, অন্যায়। আমি স্পষ্ট ভাষা♈য় তার বিরোধিতা করার জন্য প্রাথমিক ভাবে এই লেখাটি লিখছি।’
ঠিক কোন পর্বে রবীন্দ্রনাথের ‘একলা চলো রে গান’ নিয়ে এধরনের অশালীন ঠাট্ট🧔া করা হয়েছে?
শ্রীজাত লেখেন, ‘দিনপাঁচেক আগে NETFLIX-এ ‘The Great Indian Kapil Show’-এর একটি নতুন পর্ব সংযোজিত হয়, যেখানে অতিথিদের মধ্যে অভিনেত্রী কাজল ও কৃতী স্যানন উপস্থিত থাকেন। সেই পর্বের মাঝামাঝি সময়ে কপিলের এক সহকারী শিল্পী বা কৌতুকাভিনেতা কৃষ্ণ অভিষেক উপস্থিত হন (যিনি নিজের নাম Krushna Abhishek লেখেন), এবং সম্ভবত কাজলকে বাঙালি বংশোদ্ভুত হিসেবে পেয়েই রবীন্দ্রনাথের একটি গানকে মস্করার সরঞ্জাম হিসেবে বেছে নেন। হঠাৎ তো বেছে নেননি, সেভাবেই চিত্রনাট্য সাজানো ছিল। ঠিক কী হয়েছে, কেমনভাবে হয়েছে, এখানে বিস্তারিত বলছি না। কিন্তু ‘একলা চলো রে’ গানটি নিয়ে কৃষ্ণ অভিষেক যে-ব্যাঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তার উদ্রেক করেছেন, তা সম্মান ও শালীনতার মাত্রা ছাড়💃িয়ে বহুদূর চলে গেছে, অন্তত আমার চোখে। পর্বটি যথাস্থানে আছে, কেউ চাইলে দেখে নিতে পারেন, আর যাঁরা ইতিমধ্যেই দেখেছেন, তাঁরা ভালই জানেন। এই কদর্য উপস্থাপনার বিরুদ্ধে আমি আমার লিখিত অভিযোগ ও আপত্তি জানালাম। যে বা যাঁরা ওই কৌতুকদৃশ্য রচনায়, উপস্থাপনায়, অনুমোদনে ও সম্প্রচারে জড়িত থাকলেন, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালাম। স্পষ্ট ভাষায়, দ্ব্যর্থ উচ্চারণে।’
ক্ষুব্ধ শ্রীজাত লেখেন, ‘কৌতুক আর তামাশা’র꧂ মধ্যে একটা সূক্ষ্ম রেখা আছে, সেটা ঝাপসা হয়ে এলেই বিপদ। কী বলছি, কাকে নিয়ে বলছি, কতটুকু বলছি, এসব না-ভেবে কেবল লোক-হাসানো TRP-র জন্য নিবেদিতপ্রাণ হতে হতে মানুষ এক সময়ে নিজের সীমা বিস্মৃত হয়। তখন তাকে মনে করিয়ে দিতে হয়, এই চৌকাঠ পেরনো তোমার উচিত হয়নি। আমি সেটুকুই করছি। বাঙালি মনীষীদের নাম বা কাজ নিয়ে ইচ্ছেমতো হাসিঠাট্টা করাই যায়, ভারতের অন্যান্য অংশের কিছু বাসিন্দাদের এমনটাই ধারণা। বাংলা ভাষা থেকে সংস্কৃতি, সবটাই তাঁদের কাছে খোরাক। ঠিক যে-কারণে অমোঘ লীলা দাস বিবেকানন্দকে নিয়ে মস্করা করার স্পর্ধা পান। পরে বিরোধের স্বর চড়লে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন। কিন্তু ভারতের না𒅌না অংশে ঘুরে দেখেছি, বাঙালিদের সবকিছু নিয়ে একটু ঠাট্টা-ইয়ার্কি অনেকেরই মজ্জাগত।’
শ্রীজাতর কথায়, 'কেউ বলতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভুল করে ফেললে সে একরকম। কিন্তু দেড়েকষে পিছনে লাগব ব’লে বাঙালি আইকনকেই বেছে নেওয়া, এ-জিনিস তো নতুন দেখছি না। আমি নিশ্চিত, গালিব, কবীর বা প্রেমচন্দের লাইন নিয়ে এমন কুৎসিত মস্করা করার সাহস হতো না এঁদের। পরের দিন শো বন্ধ হয়ে যেত। বাঙালি এসব ঠাট্টায় অভ্যস্ত, অতএব বাঙালিকে নিয়ে মস্করা করাই যায়, তাও আবার একজন বাঙালি অভিনেত্রীর সামনে, যিনি এই মস্করায় হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। আমার এহেন লেখায় যদি কারও মনে হয় আমি প্রাদেশিক, তাহলে কিছু করার নেই। আমি তবে গর্বিত প্রাদেশিক। সেইসঙ্গে এটাও বলি, যিনি আমার দেশের জন্য জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছেন (বাকি অন্যান্য অনেক কিছু যা যা করেছেন সেসব আর বললাম না), তাঁর প্রতি পরিকল্পিত অসম্মানে ক্ষুব্ধ হতে গেলে প্র💦াদেশিকতা লাগে না। ‘The Great Indian Kapil Show’-তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর গানের অবমাননা করার পরিপ্রেক্ষিতে একজন ভারতীয় নাগরিক এবং একজন সামান্য অক্ষরকর্মী হিসেবে আমি ༺অসম্মানিত ও আহত বোধ করছি। আমি মনে করছি, এ-অসম্মান রবীন্দ্রনাথের একার প্রতি নয়, বরং সমস্ত ভারতীয় ভাষাভাষী শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতি অসম্মান, বাংলা যার মধ্যে অন্যতম ভাষা।'
বিষয়টি নিয়ে আইনি পথে হাঁটার হুঁশিয়ারি দিয়ে শ্রীজাত লেখেন, ‘আমি জানি না কীসে এর প্রতিকার হবে। যে-বাঙালির কর্ম ও কীর্তি দিয়ে গোটা পৃথিবী এক সময়ে ভারতকে চিনেছে, সুযোগ পেলেই নানা অছিলায় তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা’র এই অলিখিত অধিকার কেড়ে নেওয়া দরকার। আমি জানি না ক’জন আমার সঙ্গে থাকবেন, না-থাকলেও আমি আমার প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ‘The Great Indian Kapil Show’-এর পক্ষꦫ থেকে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা’র দাবিও জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে উল্লিখিত পর্বের ওই অংশটি পুনর্সম্পাদনা করবার দাবিও থাকল। ছেড়ে দিলে দেওয়াই যায়, কিন্তু কতদিন এবং কতদূর ছাড়ব, সেটা ভাবা দরকার। আমি সামান্য লোক, আমার চাওয়ায় কারও কিছু যায় আসে না হয়তো। কিন্তু তবু চাইছি। আজকের দিনে খবর পৌঁছতে সাত সেকেন্ডের বেশি লাগে না। আমি সাতদিন সময়সীমা ধার্য করলাম, বিনীতভাবেই। আর হ্যাঁ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবি’র সঙ্গে পরামর্শ করেই এই পোস্ট লিখছি, এটাও জানিয়ে গেলাম। আজ থেকে এক সপ্তাহ, অর্থাৎ ৭ নভেম্বর, ২০২৪-এরไ মধ্যে আমার দাবিগুলি গৃহীত, বিবেচিত এবং পূর্ণ না-হলে আমি আইনের পথে হাঁটব। বাংলা ভাষার একজন শব্দশ্রমিক হিসেবেই হাঁটব। আর কেউ আমার সঙ্গে না-থাকলেও হাঁটব। কেননা রবীন্দ্রনাথ তো বলেইছেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে!’
শ্রীজাতর এই পোস্টে এবং প্রতিবাদে সহমত প্রকাশ করেছেন বহু নেটিজেন। তাঁরাও এধরনের অপমানের তীব্র বিরꦿোধিতা🤪 করেছেন।