সম্প্রতি সময় রায়নার ইন্ডিয়াস গট লেটেন্ট শোতে এসে বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন রণবীর আল্লাহবাড়িয়া। বাবা মায়ের যৌনতা নিয়ে প্রতিযোগীকে প্রশ্ন করার ক্লিপ আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ🌳্যাল মিডিয়ায়। ব্যাপারটা গড়িয়েছে মুম্বই কমিশনার, মহারাষ্ট্র ওমেন্স কমিশনের কাছ পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, এদিন জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের বাড়িতে পুলিশ পর্যন্ত আসে। ক্ষমা চাওয়ার পরও ভেজেনি চিঁড়ে, উল্টে ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেꦏন্দ্র ফড়ণবীস সহ কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাথ, প্রমুখ। কিন্তু এই গোটা বিষয় নিয়ে কী ভাবছেন কলকাতার স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ানরা? শুনল হিন্দুস্থান টাইমস বাংলা।
আরও পড়ুন: তসলিম🌜ার বই প্রকাশের 'অপরাধে' স্টল ভাঙচুর বাংলাদেশ বইমেলায়! প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন ‘লজ্জা’ লেখিকা
রণবীর আল্লাহবাড়িয়ার বিতর্ক নিয়ে কী বলছেন কলকাতার স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ানরা?
এই বিষয়ে এদিন নাট্যশিল্পী, অভিনেতা তথা স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান শিলাদিত্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এই যে গোটা ঘটনাটা ঘটেছে, তাতে প্রথম কথাই হল গেস্ট প্যানেলে বিয়ারবাইসেপ্সকে আনা হয়েছে যাঁর সঙ্গে কমেডির দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই। একটা মানুষ যাঁর সেন্স অব হিউমার নেই বা থাকলেও সে কমেডিয়ান নন, তাঁকে যখন সেই চাপটা দেওয়া হয় একটা পাঞ্চ লাইন দেওয়ার জন্য বা বলার জন্য সেটা খুব ডেঞ্জারাস ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তিনি তখন সেটা বিশ্বাস করুন বা না করুন এমন কিছু একটা বলতে চান যেটা তিনি ভাবেন যে এটা বললে আমায় খুব কুল লাগ൩বে। এটা বলে আমি একটা বাহবা পেয়ে যেতে পারি। আর উনি যেটা বলেছেন সেই লাইনটাও তো ধার করা। অন্য একটা শোতে অন্য একজন বলেছেন। ফলে এটা অরিজিন্যাল লাইনও না। উনি নিজেই হয়তো রাতে একদিন এই রিল দেখেছেন, সেটা মাথায় থেকে গেছিল। আর ভেবেছেন এটা বললে বেশ ভালো ব্যাপার হবে একটা। রণবীর ভেবেছিলেন এটা বললে সবাই হাসবে, সেটাও কিন্তু হয়নি। আসলে উনি অতটা ভেবে বলেছেন বলে মনে হয় না। বিষয়টা এভাবে ব্যাকফায়ার করবে সেটাও 🐻আশা করেননি। মানুষ যে এটা উপভোগ করেছে সেটাও নয়। বরং শক পেয়েছে যে এটা কী করে বলে দিল। এটার সঙ্গে কমেডির কোনও সম্পর্ক নেই।' তাঁর বিশ্বাস রণবীর এটা বলেছেন বলেই এত হইচই হচ্ছে। কারণ তিনি নিজের যে ইমেজ বানিয়েছেন সেটার সঙ্গে এটা যায় না। শিলাদিত্যর কথায়, 'প্রথমত এই কথাটা কেউ কেন বলবেন। কিন্তু সেটা ছাড়াও রণবীর নিজের যে ইমেজ তৈরি করেছেন সেটার উল্টো দিকে গিয়ে কথাটা বলেছেন, তাতেই অনেকে বিরক্ত হয়েছেন। তবে গোটা বিষয়ে আমার যেটা ভালো লেগেছে বা ইতিবাচক দিক বলে মনে হয়েছে, যে মানুষ কিন্তু তৎক্ষণাৎ বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এটা তাঁরা মোটেই পছন্দ বা উপভোগ করেননি।'
অন্যদিকে শহরের আরেক জনপ্রিয় কমেডিয়ান স্বর্ণাভ দে বলেন, ‘পরিচিতি, খ্যাতি, ক্ষমতা পেলে তার সঙ্গে কিছু দায়িত্ব আসে। যেখানে গেছিলেন ওটা একটা কমেডি শো, আর উনি কমেডিয়ান নন। কিছু জিনিসপত্র কমেডিয়ানদের মুখ থেকেই শুনতে ভালো লাগে, সাধারণ মানুষের মুখ থেকে নয়। স্ট্যান্ড-আপ কমেডি তো বিদেশি অনুকরণ, খুব ভালো একটা আর্ট ফর্ম। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে এটা ব্যবহার করেন। তবে আবার, ডার্ক কমেডির নাম করে অনেকে যা খুশি বলে দেন। কিন্তু ওঁকে এটা বুঝতে হবে যে এত মানুষ যখন আমায় ফলো করছেন তাহলে আমি একটু দেখে শ💛ুনে কথা বলি।’ স্বর্ণাভর মতে যাঁর যেটা কাজ, তাঁর সেটাই করা উচিত এই ধরনের সমস্যা বা বিতর্ক এড়াতে।
তবে সৌমিত দেবꦇের মতে মজা, মজাই হয়। সেটা কারও ভালো নাই লাগতে পারে। ফলে তিনি খানিকটা অন্য সুরেই এদিন এই বিষয়ে জানান, 'কমেডিতে অফেন্সিভ বলে কিছু হয় না। যদি একটা জোক আপনাকে হাসায় তাহলে সেটা গুড জোক, যদি না হাসায় তাহলে সেটা ব্যাড জোক। এটা আমরা বহুদিন ধরেই বলার চেষ্টা করছি। তবে, শ্রোতাদের তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে পারফর্মারের কিছুটা দায় বর্তায়। বাংলায় স্ট্যান্ড-আপ কমেডি নতুন। এখনই আমি গিয়ে পরপর ডার্ক জোক বলতে পারি না। এটা তৈরি করতে করতে যেতে হবে।' তবে একটা বিষয়ে তিনিও শিলাদিত্যর সঙ্গে এক মত যে, সময় রায়না যদি এই জোক বলতেন তাহলে তিনি সেটা অন্য ভাবে ফ্রেম করতেন। সৌমিতের কথায়, 'সময় রায়না নিজেও অবাক হয়ে গেছেন যে রণবীর এটা এভাবে বলে দিলেন। একজন নন কমিক কমেডি শোতে এসে চাপের মুখে এটা বলে ফেলেছেন। ক্ষমাও চেয়েছেন। যে যেটা করেন না সে সেটা করতে গেলে তো ছড়াবেনই। নিজেকে স্মার্ট প্রমাণ করতে গিয়ে এটা বলে ফেলেছেন।'
কমেডি নিয়ে সৌমিতের🍨 সাফ কথা, 'আমেরিকায় কমেডির একটা ধরণই হল ইনসাল্ট কমেডি। কিন্তু ওখানকার সঙ্গে এখানকার একটা বিস্তর ফারাক আছে বাস্তবতায়। দেশের রিয়েলিটি বুঝে ধীরে ধীরে হ্যামার করা উচিত। প্রথমদিন গিয়েই আমি একটা প্রচন্ড ডার্ক জোক বলতে পারি না। জোক যেভাবে ইচ্ছে বলা যেতে পারে। তাতে যদি কারও খারাপ লাগে তো ঠিক আছে। কিন্তু কারও কোনও জোক বলে যদি মনে হয় বেশ করেছি, তো বেশ করেছে। আমার কোনও কিছু নিয়ে সমস্যা নেই।' এই বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন শিলাদিত্যও। তাঁর মতে, 'সব কিছু নিয়ে জোক করা যায়, কিন্তু আগে জানতে হবে যে একটা জোক কীভাবে লেখা হয়। সবাই কমেডি করছে মানেই যে সবাই কমেডিয়🀅ান সেটা তো নয়। জোক লেখার একটা প্রসেস আছে। সেটা বুঝতে হবে।'