সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বাংলা চলচ্চিত্রে একটা যুগের অবসান। সৌমিত্র চলে গেলেন, বাংলা সিনেমায় মহীরূহ পতন….বাঙালির মননে, বাঙালির জীবনের প্রাণের অপু,পছন্দ🌼ের ফেলুদা তিনি।
প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা, বাঙালির প্রিয় সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র। রুপোলি পর্দায় ফেলুদাকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিত্ রায়ের সবচেয়🐟ে পছন্দের অভিনেতা ছিলেন সৌমিত্র, এ কথাটা বললে খুব বেশি অতিশয়োক্তি হয় না। তাই ফেলুদাকে যখন তিনি রুপোলি পর্দায় তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ই ছিলেন তাঁর একমাত্র পছন্দ।
যুগ যুগ ধরে বাঙালির মনে ফেলুদা শব্দটি শুনলে যে মুখটি ভেসে উঠে তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিতের কল্পনায় ফেলুদা ২৭ বছর বয়সী এক যুবক। তাঁর উচ্চতা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি, চোখে-মুখে ঠিকরে বার হচ্ছে বুদ্ধিদীপ্ত আভা। অসম্ভব পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তাঁর। নিজের লেখা অধিকাংশ গল্পের বইয়ের মতই ফেলুদার বইতেও সত্যজিꩵৎ রায় নিজেই প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করতেন। নিজের হাতে ফেলুদার যে স্কেচ সত্যজিত ছবি তৈরির বহু আগেই এঁকেছিলেন তা যেন অবিকল সৌমিত্রের মুখের আদলের ছাಞপ।
১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসের সন্দেশ পত্রিকায় ফেলুদা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ প্রকাশিত হয়। রুপোলি পর্দায় সত্যজিৎ রায় ফেলুদার সোনার কেল্লা ও জয় বাবা▨ ফেলুনাথ উপন্যাসদুটিকে চলচ্চিত্রায়িত করেন। ঠিক যেমনভাবে সৌমিত্র সত্যজিৎ-এ🌃র অপু হয়ে উঠেছিলেন, তেমনই তিনি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন ফেলুদাও। একদম অবলীলায়, এতই গভীর তাঁর অভিনয় দক্ষতা।
সৌমিত্র দাদাগিরির মঞ্চে জানিয়েছিলেন, ‘উনি যখন ফেলুদা লিখতে শুরু করেছিলেন আমিও অসংখ্য বাঙালি পাঠকের মতো মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মনে মনে ভাবতাম যদি উনি কখনও এটা নিয়ে ছবি বানান আর আমি যদি সুযোগ পাই। আমি একবার ওঁনাকে ফেলুদার প্রথম দিকের একটা ইলাস্ট্রেশন দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, মানিকদা এতে কী আপনার নিজের প্রোজেকশন আছে একটু? উনি বলেছিলেন-আমায় তো সবাই বলে আমি তোমাཧর কথা ভেবে আঁকি। সেদিনই বুঝেছিলাম আমি অন্তত আছি ওঁনার মাথার মধ্যে’।
জানা যায়, একদিন হঠাৎই সৌমিত্রকে ডেকে সত্যজিৎ বলেছিলেন, 'সোনার কেল্লা' বানাব। তুমিই হবে ফেলুদা। বাকিটা ইতিহাস, স্বভাবোচিত ভঙ্গিতেই সোনার ইতিহাস রচনা করেছিল এই পরিচালক-অভিনেতা জুটি। এই ছবির প্রতিটি দৃশ্যের মধ্যে যে ম্যাজিক রয়েছে তা কী কোনওদিন বাঙালি ভুলতে পারবে?🔯 ১৯৭৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। সেই সময়কার বক্স অফিসে ১৩ লক্ষ টাকা আয় করে সো༒নার কেল্লা!
ছোটদের জন্য বাংলা ছবি তৈরি হয় না, সেই আক্ষেপ মিটিয়েছিল সোনার কেল্লা। এটাই অভিনেতা হিসাবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, নিজের মুখে এꦉ কথা বলেছিলেন সৌমিত্র। কীভাবে ফেলুদা হিসাবে নিজেকে তৈরি করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ? ফেলুদা একজন চিন্তাশীল মানুষ। চোখ দিয়ে খেলাটা আসল- চোখ দেখে বোঝা যাবে ফেলু কী ভাবছে। সেটা আমি করার চেষ্টা করেছিলাম। জয় বাবা ফেলুনাথ করার সময় আমার এই কথাটাই সবার প্🀅রথম মনে করেছিলাম আগের ছবি থেকে'।
সৌমিত্রর মতে বিশ্লেষণ করলে হয়ত চলচ্চিত্রের বিচারে উনিশ-বিশের ফারাকে এগিয়ে থাকবে জয় বাবা ফেলুনাথ। তবে ‘সোনার কেল্লা চিত্ত-জয়ী, যে এই ছবি দেখেছে সে প্রেমে না পড়ে পারবে না, ওই রাজস্থান, ওই অদ্ভূত রোম্যান্টিসꦦিজম!’
৫ জানুয়ারি ১৯ꦗ৭৯ মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিত-সৌমিত্র জুটির ফেলুদা সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ছবি ‘জয় বা♋বা ফেলুনাথ’।উৎপল দত্ত তথা মগনলাল মেঘরাজের সঙ্গে এই ছবিতে ফেলুদার দ্বৈরথ আজও ভুলতে পারেনি বাঙালি।
ছবির পাশাপাশি টেলিভিশনেও ফেলুদার চরিত্রে দেখা মিলেছে সৌমিত্রর। ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা ও গোলোকধাম রহস্য নিয়ে দুটি টেলিফিল্মে অভিনয় করেছিলেন এই কিংবদন্তী অভিনেতা। যা পরি𒁏চালনা করেছিলেন বিভাস চক্রবর্তী।
সন্দীপ রায় ১৯৮৬ সালে ডিডি ন্যাশান্যালে একটি মিনি হিন্দি টেলি-সিরিজ তৈরি কর🦂েছিলেন ফেলুদাকে নিয়ে। সেখানে ফেলুদার ভূমিকায় ছিলেন শশী কাপুর। তবে সত্যজিৎ রায় পুত্রকে সাবধান বাণী শুনিয়ে বলেছিলেন, সৌমিত্র বা সন্তোষ দত্তকে ছাড়া ফেলুদা হবে না। বাঙালি কোনওদিনও শশী কাপুরকে ফেলুদা বলে মেনে নিতেই পারেনি।
সন্দীপ রায়ের ছবিতে ফেলুদা হি༒সাবে দর্শক দেখেছে সব্যসাচী চক্রবর্তী এবং আবির চট্টোপাধ্যায়কে। সৃজিতের ফেলুদা হিসাবে ওয়েব সিরিজে দর্শক দেখবে টোটা রায়চৌধুরীকে। তবে সৌমিত্রকে টেক্কা দেওয়ার মতো ফেলুদা আজও তৈরি হয়নি ভূ-ভারতে। যত ফেলুদা চরিত্রই পর্দায় আসুক, যাক না কেন সৌমিত্রকে দূর থেকে ছোঁয়ার ক্ষমতাও কারুর হবে না।🎶 কারণ তিনি 'একম অদ্বিতীয়ম'।