ভাষার জন্যে প্রাণ উৎসর্গ করা সাহসী শহিদদের স্মরণে প্রতিবছর বাংলাদেশে আয়োজিত হয়ে থাকে অমর একুশে বইমেলা। হাসিনার বিদায়, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এবছরও সেই বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এবং সেই বইমেলারই একটি স্টলে ১০ ফেব্রুয়ারি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছে ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই হামলা বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারকে খর্ব করে। এবং এটা দেশের আইনের প্রতি অবজ্ঞার পরিচয় দেয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার সমর্থনে জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহিদদের স্মরণ করে এই অনুষ্ঠান। সেখানে এই ধরনের হামলা বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক উন্মুক্ত মনের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। (আরও পড়ুন: মণিপুরে সময়ের মধ্যে নয়া CM খু♔ঁজে পাবে BJP?🏅 নাকি জারি হবে রাষ্ট্রপতি শাসন?)
এরই 🐼সঙ্গে সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ ও বাংলা অ্যাকাডেমিকে এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মেলায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশে যে কোনও ধরনের গণ সহিংসতার ঘটনা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে।
উল্লেখ্য, বইমেলায় তসলিমা নাসরিনের বই 'চুম্বন' রাখাকে কেন্দ্র করে গোটা সমস্যার সূত্রপাত। তসলিমার বইটি রাখায় 'সব্যসাচীর' স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর নেপথ্যে ছিলেন বাংলাদেশের কট্টর ইসলামপন্থী কয়েকজন। ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন তসলিমা। ফেসবুক তিনি এই নিয়ে লিখেছেন, 'জিহাদিরা বইমেলায় সব্♓যসাচী স্টলটিতে হামলা করেছে। এই হামলা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ফেসবুকেই জিহাদিরা ডাক দেয় স্টল আক্রমণের। দোষ স্টলটি আমার লেখা বই রেখেছে। জিহাদিরা আমার নামটি সহ্য করতে আগেও পারেনি, এখনও পারে না। নতুন জিহাদিদের বাপ দাদারা আমার ফাঁসির দাবিতে নব্বই দশকের শুরুতে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। সব্যসাচী স্টলটিতে তারা প্রকাশক, লেখক এবং সঙ্গীতশিল্পী শতাব্দী ভব'র ওপর আক্রমণ করে। পুলিশ জিহাদিদের গ্রেফতার না করে, গ্রেফতার করে শতাব্দী ভবকে, এমনকী তাঁর স্টল বন্ধ করে দেয়। এরপর জিহাদিরা একরাশ মিথ্যে মিডিয়াকে শোনায়। তারা বলে আমার লেখা চুম্বন গল্পগ্রন্থটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। না, চুম্বন বাংলাদেশে কোনও সরকারই নিষিদ্ধ করেনি। আমি নাকি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। না, আমি নিষিদ্ধ নই। প্রতিটি সরকারই অবৈধভাবে আমাকে বাংলাদেশে ফিরতে বাধা দিচ্ছে। আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউ করছে না, আমার বিদেশি পাসপোর্টে বাংলাদেশের ভিসা দিচ্ছে না। কোনও ভ🍰্যালিড ডকুমেন্ট ছাড়া এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া যায় না। সে কারণে আমি বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করতে পারছি না। জিহাদিরা আরও অভিযোগ করেছে আমি আওয়ামি লিগ করি। এটিও ডাহা মিথ্যে। আমি আওয়ামি লিগ তো করি না। আমি বরং গত পনেরো বছর নয়, তারও আগে থেকে শেখ হাসিনার কড়া সমালোচক। আরও মিথ্যে দাবি করেছে, আমি নাকি জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে ছিলাম। না, আমি জুলাই বিপ্লব সমর্থন করেছিলাম। হাসিনার পদত্যাগ চেয়েছিলাম। কিন্তু ৫ অগস্টের পর বিপ্লবীদের স্বরূপ যখন প্রকাশিত হতে থাকে, যখন মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দিতে থাকে, যখন তাণ্ডব চালাতে থাকে সর্বত্র, যখন বিপ্লবের নেপথ্যে যে জামাত শিবির, হিযবুত তাহরীর আর জঙ্গি জিহাদি রাজাকার ছিল- এই সত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তখন থেকে আমি তাদের আর সমর্থন করিনি। সমর্থন পেতে হলে তাদের ভালো কাজ করে দেখিয়ে দিতে হবে, যে, জুলাই বিপ্লবে তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিল। আজ পর্যন্ত তারা প্রমাণ করতে পারেনি, তারা গণতন্ত্রে, ধর্মনিরপেক্ষতায়, বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।'
তসলিমা আরও লেখেন, 'জিহাদিরা যখন ডাক দিয়েছে সব্যসাচী স্টলের বিরুদ্ধে,যেহেতু সব্যসাচী আমার বই প্রকাশ করেছে, তখন বাংলা অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষের এবং থানার পুলিশের উচিত ছিল সব্যসাচী স্টলে নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা। প্রকাশককে নিরাপত্তা দেওয়া। তা তো করেইনি, বরং প্রকাশক জঙ্গি হামলার শিকার হলেও পুলিশ অন্য কাউকে নয়, প্রকাশককেই তুলে নিয়ে গিয়েছে, এবং জিহাদিদের কথা দিয়েছে, প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলা করবে। এই সমাজে ভিক্টিমের ওপরই নির্যাতন বেশি হয়। জিহাদিরা কি আমার চুম্বন বইটি পড়েছে? না, পড়েনি। স্টলে আমার অন্য বই থাকলেও জিহাদিরা এভাবেই হামলা করত। আসলে বই নয়, আমার নামটিই তাদের মনে এবং শরীরে জ্বালা ধরায়। তারা এও বিশ্বাস করে আমাকে খুন করতে পারলে তারা শর্টকাটে বেহেস্তে যাবে। তাদের আর কষ্ট করে পুলসেরাত পার হতে হবে না। আসলে এই অশিক্ষিতরা কখনও বই পড়েনা। এরা মূলত আরবিতে কোরান পড়ে, যে আরবির অর্থ তারা জানে না, আর শুনেছি মুঠোফোনে তারা খুব পর্নোগ্রাফি দেখে, এসব দেখতে অবশ্য কোনও ভাষা জানতে হয় না। এই অশিক্ষিতরা নবীর গুণ্ডা বাহিনী বা ডাকাত বাহিনীর রোল প্লে করে। জ্ঞান অর্জনের জন্য ইতিহাস ভুগোল, বিজ্ঞান দর্শন, সাহিত্য সংস্কৃতি পড়া তাদের কাজ নয়। যে কবি সাহিত্যিক চিরকাল আমার ওপর জিহাদিদের অত্যাচারকে আমার সমস্যা হিসেবে দেখেছেন, সমাজের সমস্যা হিসেবে দেখেন নি, যারা চিরকাল মুখ বুজে ছিলেন, আমার📖 বই সরকার নিষিদ্ধ করলেও, আমাকে দেশ থেকে অবৈধভাবে নির্বাসনে পাঠালেও, দেশে ফিরে আসতে না দিলেও- আশঙ্কা হয় কোনও একদিন হয়তো তারাও এই নতুন জিহাদিস্তানে নির্যাতিত হবেন। তখন হয়তো তাদের বাঁচাতে কেউ আসবে না, কারণ মৌলবাদী , ধর্মান্ধ আর জিহাদিদের বিরুদ্ধে মুখ বুজে থাকাই তো এখনকার কালচার।'