'প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শেখানো উচিত কাশ্মীর বাইবেলের ১০০০ বছরের পুরনো সংঘাত নয়।' ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি।ভারত এবং পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতির পর এবার কাশ্মীর নিয়ে মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, 'আমি আপনাদের সঙ্গে মিলে কাজ করব, যাতে হাজার বছর ধরে চলা কাশ্মীর সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে বের করা যায়। ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বকে এই কাজের জন্য আশীর্বাদ করছি।' ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর-সমস্যার আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিতেই ট্রাম্পকে খোঁচা দিয়েছে কংগ্রেস।
এক্স বার্তায় কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারি বলেন, 'মার্কিন প্রশাসনের কাউকে তাদের প্রেসিডেন্টকে গুরুত্ব সহকারে শিক্ষিত করে তুলতে হবে যে কাশ্মীর বাইবেলের ১০০০ বছরের পুরনো কোনও সংঘাত নয়। এর সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর - ৭৮ বছর আগে যখন পাকিস্তান স্বাধীন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য আক্রমণ করে, যা পরবর্তীতে ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে মহারাজা হরি সিং কর্তৃক পূর্ণাঙ্গভাবে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তান কর্তৃক অবৈধভাবে দখলকৃত অঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সহজ সত্যটি উপলব্ধি করা কতটা কঠিন?'
অন্যদিকে, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, 'মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও-র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘নিরপেক্ষ মঞ্চে’ সংলাপের উল্লেখ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আমরা কি শিমলা চুক্তি পরিত্যাগ করেছি? আমরা কি তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার দরজা খুলে দিয়েছি? ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস জানতে চায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক চ্যানেল কি পুনরায় খোলা হচ্ছে? আমরা পাকিস্তানের কাছে কী প্রতিশ্রুতি চেয়েছি এবং কী পেয়েছি?' তিনি বলেন, 'কংগ্রেস পুনরায় দাবি করছে যে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হোক।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা। এএনআই-কে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,'আপনি কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার? প্রথমত, আপনার সাধারণ জ্ঞান উন্নত করা দরকার, কারণ সেই দেশটি (পাকিস্তান) ৭৮ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছিল এবং আপনি ১,০০০ বছরের রূপক ব্যবহার করছেন। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত।' এদিকে বিজেডির সহ-সভাপতি প্রসন্ন আচার্য বলেন, 'ট্রাম্প কীভাবে একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে পারেন? তিনি কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নাকি রাষ্ট্রপতি? নাকি তিনি পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন? তিনি তৃতীয় পক্ষ... যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা তাঁর জায়গা নয়... চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমাদের, ভারতের। আমাদের কোনও শক্তিশালী দেশের চাপের কাছে মাথা নত করা উচিত নয়, তা সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হোক বা রাশিয়া। আমরা একটি স্বাধীন, গর্বিত দেশ। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত দেশপ্রেমিক... আমাদের কোনও তৃতীয় দেশের দ্বারা প্রভাবিত বা নির্দেশিত হওয়া উচিত নয়।'
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবৃতি
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বন্ধকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, শান্তি চুক্তি না হলে সম্ভাব্য পারমাণবিক সংঘাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হতে পারত। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, 'ভারত ও পাকিস্তানের শক্তিশালী ও অটল নেতৃত্বের জন্য আমি গর্বিত।তাদের জ্ঞান, সাহস এবং দৃঢ়তার কারণে তারা বুঝতে পেরেছেন যে এই সংঘাত বন্ধ করার সময় এসেছে, যা লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষের মৃত্যু ও ধ্বংসের কারণ হতে পারত। আপনাদের এই সাহসী পদক্ষেপ আপনাদের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।' ট্রাম্প আরও বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ঐতিহাসিক ও বীরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করতে পেরে আমি গর্বিত। এছাড়াও, আমি দুই মহান দেশের সঙ্গে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করব।এর পাশাপাশি, আমি আপনাদের সঙ্গে মিলে কাজ করব, যাতে হাজার বছর ধরে চলা কাশ্মীর সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে বের করা যায়। ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বকে এই কাজের জন্য আশীর্বাদ করছি।'