২০১৯ সালের পর ফের ২০২৪ সালে সাধারণ নির্বাচন বা লোকসভা নির্বাচন। দেশজুড়ে মোট ৫৪৩টি আসনে সাংসদ নির্বাচনের জন্য ১৯ এপ্রিল শুরু লোকসভা নির্বাচন। এবার দেশের ১৭তম লোকসভা নির্বাচন৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন দফার সংখ্যা সাতটি। ভোটগণনা ৪ জুন। এই নির্বাচনে প্রায় ৯৭ কোটি মানুষের নাম রয়েছে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায়। বর্তমান লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে ১৬ জুন। তার আগেই নতুন সরকার গঠন করতে হবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দেশজুড়ে বিজেপি মোট ৩০৩ টি আসন জিতেছিল, অন্যদিকে ভারতের কংগ্রেস মাত্র ৫২টি আসন জিতেছিল।
প্রথম দফার নির্বাচন ১৯ এপ্রিল। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষদিন ২৭ মার্চ। ২১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রথম দফার নির্বাচন। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফার নির্বাচন যথাক্রমে ২৬ এপ্রিল এবং ৭ মে'তে। চতুর্থ এবং পঞ্চম দফার নির্বাচন ১৩ মে এবং ২০ মে। সর্বশেষ দুটি দফায় নির্বাচন ২৫ মে এবং ১ জুন। অরুণাচল প্রদেশ, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, অন্ধ্রপ্রদেশ, চণ্ডীগড়, দিল্লি, গুজরাট, গোয়া, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, কেরল, লাক্ষাদ্বীপ, লাদাখ, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, পুদুচেরি, সিকিম, তামিলনাডু, পঞ্জাব, তেলাঙ্গনা, উত্তরাখণ্ড, দাদর ও নগর হাভেলি, দমন ও দিউতে এক দফাতেই নির্বাচন। অন্যদিকে কর্ণাটক, রাজস্থান, ত্রিপুরা, মণিপুরের মতো রাজ্যে দুটি দফায় নির্বাচন। ছত্তিশগড় এবং অসম তিন দফায় লোকসভা নির্বাচন। উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গে সাত দফাতেই লোকসভা নির্বাচন।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে প্রথম দফায় কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে ভোটগ্রহণ। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল দার্জিলিং, রায়গঞ্জ এবং বালুরঘাটে নির্বাচন। মে মাসের ৭ তারিখ তৃতীয় দফায় মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গিপুরে নির্বাচন। চতুর্থ দফার নির্বাচন ১৩ মে। আসনগুলি হল - কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বোলপুর, বীরভূম, বহরমপুর, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর এবং আসানসোল । পঞ্চম দফার নির্বাচনে বনগাঁ, আরামবাগ, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, হুগলি, শ্রীরামপুর এবং ব্যারাকপুর🐠ে ভোটগ্রহণ ২০ মে। লোকসভা নির্বাচনের শেষ দুটি দফার নির্বাচন ২৫ মে এবং ১ জুন। ষষ্ঠ দফায় পুরুলিয়া, বাঁকু🐼ড়া, বিষ্ণুপুর, ঝাড়গ্রাম, কাঁথি, ,তমলুক, ঘাটাল ও মেদিনীপুর কেন্দ্রে ভোট। শেষ দফায় লোকসভা নির্বাচন কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার এবং যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে।
বাংলায় এবার সাত দফায় নির্বাচন। গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে জয়লাভ করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস মোট ২২টি আসনে জয়লাভ করেছিল। অন্যদিকে জাতীয় কংগ্রেস দুটি আসনে জয়লাভ করেছিল। মূলত উত্তরবঙ্গ এবং পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ভালো ফল করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। অন্যদিকে, জাতীয় কংগ্রেস তাদের গড় মালদা দক্ষিণ এবং বহরমপুর আসন দুটিতে জয়লাভ করেছিল। কোচবিহার কেন্দ্র থেকে জিতেছিসেন নিশীথ প্রামাণিক। অন্যদিকে রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। রানাঘাট কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টির জগন্নাথ সরকার, বনগাঁ কেন্দ্রে শান্তনু ঠাকুর এবং ব্যারাকপুর কেন্দ্রে অর্জুন সিং জয়ী হয়েছিলেন। দমদম, বারাসত, বসিরহাট কেন্দ্রে যথাক্রমে সৌগত রায়, ডঃ কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং নুসরত জাহান জয়ী হয়েছিলেন। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হয়েছিলেন। এই নির্বাচনে হুগলি কেন্দ্রটি অবশ্য ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে লকেট চট্টোপাধ্যায় নিজের দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। রত্না দে নাগকে পরাজিত করেন লকেট। কাঁথি এবং তমলুক কেন্দ্র দুটি যথাক্রমে শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারীর দখলে ছিল। তাঁরা দু'জনেই তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন। পরবর্তীতে দিব্যেন্দু বিজেপিতে যোগ দেন। শিশির বিজেপির ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে দিলীপ ঘোষ জয়ী হয়েছিলেন। আসানসোল কেন্দ্র থেকে বাবুল সুপ্রিয় হারিয়ে জয়লাভ করলেও পরবর্তীতে তিনি দলত্যাগ করলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে শত্রুঘ্ন সিনহা জয়লাভ করেন। অন্যদিকে বর্ধমান-পূর্ব আসনে তৃণমূলের টিকিটের জয়ী হওয়ার পরও বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সুনীলকুমার মণ্ডল। ফের তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরেন।
সার্বিকভাবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতে এনডিএ জোট দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। ২০১৪ সালের তুলনায় ১৭টি আসন বেশি পেয়ে ৩৫৩টি আসনে জয়লাভ করেছিল তারা। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট কিছু সিট বৃদ্ধি করতে সক্ষম হলেও ৯০টি আসনে জয়লাভ করেছিল। উত্তরপ্রদেশে ৮০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬৪তেই জয়লাভ করেছিল বিজেপি। ইউপিএ-এর মাত্র একটি আসন এবং মহাগঠবন্ধন ১৫টি আসন পেয়েছিল। মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এনডি ৪১টি এবং ইউপিএর পাঁচটি আসন পেয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এনডিএ অর্থাৎ বিজেপি ১৮টি আসন পায়, তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি এবং জাতীয় কংগ্রেস দুটি আসন পেয়েছিল এই নির্বাচনে। বিহারের ক্ষেত্রেও ৪০টির মধ্যে ৩৯ টি আসন গিয়েছিল এনডিএ জোটের দখলে। মাত্র একটিতে জয়লাভ করেছিল ইউপিএ জোট।
গত নির্বাচনে গান্ধীনগর থেকে অমিত শাহ জয়লাভ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিল🐓েন। রাহুল গান্ধী কেরলের ওয়ানাদ থেকে জয়লাভ করেছিলেন গত নির্বাচনে। নীতীন গডকড়ি মহারাষ্ট্রের নাগপুর থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিজের সংসদীয় ক্ষেত্রে বারাণসী থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। রাহুল গান্ধী আমেঠি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেও জয়লাভ করতে পারেননি। জয়ী হয়েছিলেন স্মৃতি ইরানি। রায়♍বরেলি থেকে সোনিয়া গান্ধী জয়ী হয়েছিলেন।
ভোটের কুইজ
২০২৪ সালে কোন কোন রাজ্যে সাতটি দফাতেই ভোটগ্রহণ হবে?
পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ।
২০১৯ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন। এবারের ভোটের মুখেই বিজেপিতে যোগ। কে তিনি?
দিব্যেন্দু অধিকারী। তিনি তমলুক থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন।
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে হেরেছিলেন। এবারও তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। কে?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অজয় রাইকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস।
২০১৯ সালে বাংলা থেকে ২টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস। কোনগুলি?