প্রায় দেড় দশক আগের কথা। টাটাদের গাড়ি কারখানা প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছিল সিঙ্গুরে। তবে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ভেঙে ফেলা হয় টাটাদের ফেলে যাওয়া সেই অর্ধনির্মিত কারখানা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে গিয়ে সিঙ্গুরের জমিতে সর্ষের বীজ ফেলে আসেন। তবে এখনও শ'য়ে শ'য়ে একর জমি সেখানে চাষযোগ্য নয়। বেড়াবেড়ি, খাসেরভেড়ি এবং গোপালনগর মৌজাতেই এই সব জমি বেশি। এই সিঙ্গুর হতে পারত বাংলার শিল্পায়নের পথের টিকিট। তবে তা হয়নি। তবে সেই আন্দোলনের ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বাম-বধের' পথ প্রশস্ত হয়েছিল। আরও একটি ভোট চলে এসেছে। হুগলি ও আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের সীমানায় অবস্থিত সিঙ্গুর নিয়ে তরজা শাসক-বিরোধী উভয় পক্ষেরই। গত লোকসভা ভোটে হুগলি কেন্দ্রে জিতেছিলেন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়। আরামবাগে অবশ্য অল্প কিছু ভোটে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। তবে তৃণমূল এবার আরামবাগের বিদায়ী সাংসদকে টিকিট দেয়নি। আর হুগলিতে লড়াইটা লকেট বনাম তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। (আরও পড়ুন: N൩H2 হয়ে ছুটবে স্বপ্ন?𓆏 টাটাকে 'জমি না দেওয়া' সিঙ্গুর তাকিয়ে NHAI'র প্রকল্পের দিকে)
আরও পড়ুন: সিঙ্গুর থেকে টাট𝔉া গিয়েছিল সানন্দে, গুজরাটের সেই জায়গার আজ কဣী হাল?
ভোটের আবহে সিঙ্গুরের হাল হকিকত জানতে সম্প্রতি সেখান থেকে ঘুরে এসেছিল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। হাওড়া-তারকেশ্বর লাইনের তুলনামূলক শান্ত স্টেশন সিঙ্গুর। সেখানে নেমে স্ট্যান্ড থেকে এক টোটো ভাড়া করে সিঙ্গুরের নাড়ি বোঝার চেষ্টায় নেমে পড়ি। সঙ্গে কথা হয় টোটোচালক প্রফুল্লবাবুর সঙ্গেও। নিজেকে তিনি বাম সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেন। হুগলির বাম প্রার্থী মনোদীপ ঘোষের মিছিলের খবর গড়গড় করে বলতে থাকেন প্রফুল্লবাবু। তবে একটা সময় গিয়ে তিনি বলেন, 'ভোটে যেই জিতুক ব্যবধান হয়ত কমবে।' তবে বামেদের হুগলিতে কোনও সম্ভাবনা আছে কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে তাঁর বক্তব্য, 'হয়ত বামেদের ভোট বাড়বে তবে জিততে পারবে কি না, তা বলতে পারব না।' এরপরই তাঁর গলায় 'তৃণমূলের প্রশস্তি' শোনা যায়। তিনি বলেন, 'আদর্শ যাই হোক, সরকার যে এই টাকা দিচ্ছে, তা ভালো। আমি তা সমর্থন করি। তৃণমূল সরকারে আসার পর থেক🌌ে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা তো অস্বীকার করা যায় না।'
আরও পড়ুন: জোড়া ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব বাংলায় হবে ভারী বৃষ্টি, কলকাতায় পারদ চড🦩়বে কবে থেকে?
প্রফুল্লবাবু টোটোতে করে আমাদের সানাপাড়ায় নিয়ে যান। সেখানেই একদিকে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে, অন্যদিকে ঘাসে ভরা 'টাটার মাঠ'। সেখানেই আন্ডারপাসের সামনে একটি চায়ের দোকান। সেখানে তখন গরম চায়ের কাপে রাজনীতির ঝড় উঠেছে। অনেকেই নিজেদের মতামত প্রকাশ করছিলেন। সেই সময় সেখানে উপস্থিত এলআইসি এজেন্ট সিঙ্গুরের তুলনা টানেন কলকাতার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এই যে বৌবাজারের নীচে দিয়ে মেট্রো লাইন তৈরি হচ্ছে। কত লোকের বাড়ি ভেঙেছে। তবে কাজ থামেনি। সেখানে কাজ থামাতে গেলে, আন্দোলন করতে গেলে উন্নয়নের নামে তা থামিয়ে দেওয়া হবে। আর সিঙ্গুরে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। এখানে কারখানা হলে বর্তমান প্রজন্মকে কলকাতায় ছ😼ুটতে হত না কাজের জন্যে।'
আরও পড়ুন: রাজভবনে শ্লীলতাহানির তদন্তে নয়া মোড🌳়, বড় দাবি '১৫ মিনিট' ন♈িয়ে, থানায় তলব ৩ জনকে
সিঙ্গুরের 'মনোভাব' বুঝতে দ্বিতীয় দিন হিন্দুস্তান টাইমস সেখানে পৌঁছায়। এবার বেড়াবেড়িতে গিয়ে সেখানকার মানুষের মনের কথা জানার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। সেই পথে একদম আরামবাগ এবং হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের স𝓀ীমানাবর্তী পাড়ায় বেশ কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা যায়। টাটার কারখানা প্রসঙ্গে তাঁদের প্রশ্ন করতেই এক কথায় তিন-চারজন বলেন, 'জমি ফেরত তো পাওয়া গিয়েছে, তবে তা চাষযোগ্য নয়।' তাঁদের বক্তব্য, কোনও সাধারণ কৃষকের ক্ষেত্রে এই সব জমি চাষযোগ্য করা সম্ভব নয়। অনেক জায়গাতেই চাষ হচ্ছে। তবে বহু জায়গায় করা যাচ্ছে না কৃষিকাজ। এই আবহে সরকারই একমাত্র পারে এই জমি চাষযোগ্য করতে।
আরও পড়ুন: বা꧃ংলায় এসে সরকারি চাকরি, ডিএ নিয়ে☂ তির ছুড়লেন হিমন্ত, বোঝালেন ৩৬-এর ফারাক
২০১৬ সালে জমি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করলেও জমি চাষযোগ্য করার কজ সরকার শুরু করে আরও বেশ কয়েক বছর পরে। তবে ২০২০ সাল থেকে সেই কাজও বাধাপ্রাপ্ত হয় করোনার জন্য। তবে নবান্নের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল, জমিকে চাষযোগ্য করার জন্য সেচ দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে নাকি সমীক্ষাও চালিয়েছে সেচ দফতর। এদিকে সিঙ্গুরে 'টাটার মাঠে'র পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে একটি নীল-সাদা একতলা বিল্ডিং দেখা যায়। পরে জানা যায়, এটি একটি জলের ট্যাঙ্ক। কৃষি জমিতে জল সরবরাহ করার স্বার্থে এই🐟 ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। তবে সেই ট্যাঙ্ক এখনও চালু হয়নি। তবে সেই নীল-সাদা ভবনের সামনেই রাস্তা থেকে পুরনো রড ভ্যানে তুলছিলেন কয়েকজন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঠ খুঁড়ে সেই সব বের করেছে তারা। সেই সব রড এবং নির্মাণবর্জ্য বিক্রি করে কিছুটা বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা করেন তারা।