𓆉দুর্গাপুজো মানে কেবল আনন্দ আর উৎসব নয়, বহু মানুষের রোজগারের মাধ্যমও। একজন খাবার বিক্রেতা, বেলুন বিক্রেতার মতো এই সময়টা তারকারাও পুজোর ফোটোশুট থেকে শুরু করে, ফিতে কাটা, পুজো পরিক্রমা এগুলিতে অংশগ্রহনের মাধ্যমে রোজকার করেন। তাছাড়াও বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে বহু বিচিত্রানুষ্ঠানেও তাঁরা অংশগ্রহণ করে সেখান থেকে উপার্জন করেন। কিন্তু এবার নিজকে সেই উপার্জন থেকে বঞ্চিত রাখছেন দেবলীনা দত্ত। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পুজোর সমস্ত রকমের কাজ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অভিনেত্রী। কারণ তিনি ভুলতে পারছেন না এই ঘটনার ভয়াবহতা।
ꦓতবে যাঁরা পুজোর কাজে যুক্ত থাকছেন তাঁদের নিয়ে অভিনেত্রীর কোনও অভিযোগ নেই, কারণ তাঁর মতে এটা অভিনেতাদের পেশারই একটা অঙ্গ। দেবলীনার কথায়, ‘রুজিরুটি আর আন্দোলনকে গুলিয়ে ফেলার কোনও কারণ নেই।’ এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেবলীনা বলেছেন, ‘এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে তার মানে এই নয় যে, পুজোয় যাঁরা শামিল থাকছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমার কোনও বক্তব্য রয়েছে। পুজোর কাজ কিন্তু আমাদের রুজিরুটিও। এর সঙ্গে আন্দোলনকে গুলিয়ে ফেলার কোনও কারণ নেই। আমি থাকছি না কারণ, মানসিক ভাবে আমি পেরে উঠছি না।’
🧔আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন দেবলীনা। এই ঘটনা সহ তাঁর নিজের ইন্ডাস্ট্রিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে সরব দেবলীনা বলেন, ‘হুমকি সংস্কৃতি সব জায়গাতেই চলে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন এক কেশসজ্জা শিল্পীকে মাসের পর মাস কাজ করতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।’ দেবলীনা জানান, তিনি নিজেও অনেক সময় এই কাজ না পাওয়ার মতো সমস্যায় পড়েছেন, কেবল সব ঘটনায় সরব থাকার কারণে।
✅অভিনেত্রীর কথায়, ‘আমি সব সময়ই ইন্ডাস্ট্রির লবিবাজি, হুমকি সংস্কৃতি, কাস্টিং কাউচের বিরুদ্ধে সরব ছিলাম। আমি সব সময় লড়েছি। তার ফলও ভুগেছি। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিষয় হল, ক্ষমতাহীন মানুষ প্রতিবাদ করলে কী পরিণতি হতে পারে, তা দেখলাম। তাঁকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। তাঁকে হয়তো চিকিৎসকই হতে দেওয়া হল না। এমনকি, তাঁকে প্রাণে মেরেও ফেলা যেতে পারে। এ কী ভয়ঙ্কর!’
🌠আরজি কর-কাণ্ডের তদন্ত বর্তমানে সিবিআইয়ের অধীনে, কিন্তু তদন্তের শ্লথ গতি অবাক করেছে দেবলীনাকে। নিহত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের অবস্থা অভিনেত্রীর ভাবনায় গভীর ভাবে প্রভাব ফেলেছে। তাই কিছুতেই পুজোর ছন্দে ফেরার মানসিক তৈরি করতে পারছেন না দেবলীনা। অভিনেত্রী মতে, ‘বাবা-মায়ের একটা মাত্র সন্তান। স্কুলের পোশাক সেলাই করে উপার্জন করে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছিলেন বাবা। কত খরচ হয় এবং কতটা মেধা প্রয়োজন হয়! আর শেষে সেই মেয়ের এই পরিণতি হল। এটার বিচার চাই। আমি প্রতিবাদের উৎসবে আছি। খুঁটিপুজো থেকে শুরু করে ব্র্যান্ডিং, যাবতীয় কাজের সঙ্গে উৎসবমুখর মানসিকতা জড়িয়ে থাকে। আমি সেই মানসিক অবস্থায় কিছুতেই আসতে পারছি না। সেই কারণেই এই উপার্জন থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে হয়েছে।’
🌞দেবলীনার চোখে এবারের পুজো প্রতিবাদের। তাই মহালয়া থেকে শুরু করে পুজোর দিনগুলিতে বিচারের দাবিতে নানা আন্দোলনে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। অভিনেত্রী চোখে এ বার মা দুর্গাও প্রতিবাদী রূপে আসছেন। পাশাপাশি তিনি শিল্পীদের প্রতিবাদের কথাও তুলে ধরেছেন তাঁর বক্তব্যে। দেবলীনার কথায়, ‘শিল্পীরাও তাঁদের শিল্পকে ব্যবহার করছেন প্রতিবাদের জন্য। আমার অত্যন্ত প্রিয় শিল্পী সনাতন দিন্দা এ বার মায়ের হাতে অস্ত্র দিচ্ছেন। কোনও বার ওঁর প্রতিমায় অস্ত্র থাকে না। এই ভাবেই প্রতিবাদ। আর্জি, নির্যাতিতা বিচার পাক ও হুমকি সংস্কৃতি নিপাত যাক।’