ফ্যাশন যখন সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিত হয়, এমনই এক-একটি মাস্টারপিস তৈরি হয়। হায়দ্রাবাদে শুরু হয়েছে ৭২তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা। হায়দ্রাবাদের গাছিবাউলি স্টেডিয়ামে এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধনে মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড ২০২৩, নন্দিনী গুপ্তা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। হোস্টের আওয়াজে যখন 'ইন্ডিয়া' শব্দটি প্রতিধ্বনিত হয়, তখনই সকলের দৃষ্টি গিয়ে পড়ে নন্দিনীর দিকে। তাঁর অভূতপূর্ব ট্র্যাডিশনাল পোশাক থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছিল সে মুহূর্তে।
নন্দিনীর পরনের ওই জামদানির নানান কথা
নন্দিনী বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার গৌরাঙ্গ শাহের ডিজাইন করা এই বিশেষ পোশাক পরেছিলেন এদিন। হাতে বুনেই করা হয়েছে এই পোশাক। ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটিয়েছে এটি। এটি অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র দুই রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী বুননের মিশ্রণ ছিল। এই জামদানি মাস্টারপিসটি ছিল শিল্প, ঐতিহ্য এবং দক্ষ কারুশিল্পের এক নিখুঁত মিশ্রণ। জানা গিয়েছে, এই বিশেষ পোশাকটি তৈরি করতে তিন বছর সময় লেগেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের আটজন বিশেষজ্ঞ তাঁতি খুব যত্ন সহকারে হাতে বুনেছেন এই কাপড়।
পোশাকে ফুটে উঠল দুই রাজ্যের গল্প
গৌরঙ্গ শাহের এই ডিজাইনার মাস্টারপিস কেবল একটি পোশাক ছিল না, এটি ছিল টেক্সটাইলের মাধ্যমে বলা দুই রাজ্যের সংস্কৃতির গল্প। দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে গৌরঙ্গ নিজেই জানান, বেস ফ্যাব্রিকটি চরকায় কাটা খাদি সুতো ব্যবহার করে হাতে বোনা হয়। এটি লেহারিয়া প্যাটার্নে সোনার জরি দিয়ে সজ্জিত। পোশাকের সবচেয়ে বিশেষ অংশ হল বিস্তারিত সীমানা এবং আঁচল, যা বাংদি মোড় নামে একটি নকশা সামনে আনে। হাতির দাঁতের রঙের এই পোশাকে সোনার জরি আরও আকর্ষণীয় স্পর্শ যোগ করে। উল্লেখ্য, বাংদি মোড় নকশাটি ভারতীয় লোকশিল্প থেকে এসেছে।
কে এই নন্দিনী গুপ্তা
নন্দিনী গুপ্তা ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাজস্থানের কোটায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি জীবনে অর্থপূর্ণ কিছু করতে চেয়েছিলেন। তিনি কোটার সেন্ট পলস সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল থেকে স্কুল শেষ করেন, তারপর মুম্বাইয়ের লালা লাজপত রাই কলেজে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর ২০২৩ সালের ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া খেতাব জেতার পর জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
বলা বাহুল্য, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, নন্দিনী গর্বের সঙ্গে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। ভারতীয় পতাকা হাতে ধরে ভারতীয় পোশাকে তাঁর উপস্থিতি এদিন বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে। আসলে, মিস ওয়ার্ল্ড ২০২৫-এ নন্দিনীর যাত্রা কেবল সৌন্দর্যের চেয়েও বেশি কিছু। এটি ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি উদযাপনের একটি উপায়। গৌরাঙ্গ শাহের পোশাক পরে, তিনি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় কাপড়কে বিশ্ব মঞ্চে নিয়ে এসেছে। তাঁর পোশাক ভারতীয় তাঁতিদের কঠোর পরিশ্রম এবং তাঁদের শিল্পের প্রতিটি সুতোর মধ্য দিয়ে যে গল্প বলা হয়েছে, তার প্রতি সম্মান জানিয়ে গিয়েছে।