করোনার মধ্যে নির্ধারিত সময়ের আগেই এবার ঢাকা-সহ সারাদেশে কোরবানির গরুর হাট বসেছে৷ হাটের জন্য রয়েছে ৪৬টি শর্ত৷ প্রথম শর্ত, ১৭ জুলাইয়ের আগে গরুর হাট বসানো যাবে না৷ কিন্তু হাটে গরু আনা শুরু হয়েছে ১০ দিন আগে থেকেই। শর্তে বলা হয়েছে, হাট বসার দু'দিনের বেশি আগে গরু আনা যাবে না৷আবাসিক এলাকায় গরুর হাট বসানোতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ অথচ রেলওয়ে কলোনির আবাসিক এলাকার মাঠ গরুর হাটের জন্য ইজারা দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন নিজেই৷ সারাদেশে নানা জায়গাতেই যেখানে-সেখানে বসছে হাট৷ এবার ঢাকার দুই সিটিতে ২১টি গরুর হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন৷ ইজারা দেওয়াও শেষ৷ কিন্তু নির্ধারিত সময় ১৭ জুলাইয়ের আগে ঢাকার হাজারিবাগ, জিগাতলা, মেরাদিয়া-সহ আরও অনেক এলাকায় গরুর হাট বসে গেছে৷ ক্রেতারাও যাচ্ছেন কোরবানির জন্য গবাদি পশু কিনতে৷ এই করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গরুর হাটের কথা বলছে সিটি কর্পোরেশন৷ তবে পুরোপুরি হাট শুরু হলে বাস্তব অবস্থা আরেও স্পষ্ট বোঝা যাবে৷বিক্রেতা ও ক্রেতাদের জন্য যে ৪৬টি শর্ত দেওয়া হয়েছে, তার বড় একটি অংশ করোনায় স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক সংক্রান্ত৷ বলা হচ্ছে, গরুর হাটে পুরো স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে ৷ গরুগুলোকে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে ক্রেতারা নিজেদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে হাটে অবস্থান করতে পারেন৷ সেভাবেই হাটে গবাদি পশু তুলতে হবে৷ এর বেশি পশু রাখা যাবে না৷ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে মাস্ক পরতে হবে৷ আর গরু কিনতে দুই জনের বেশি হাটে যেতে পারবেন না৷ হাটের আয়তন অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব রেখে যতজন ক্রেতা এক সঙ্গে প্রবেশ করতে পারেন, ততজন প্রবেশ করবেন৷ বাকিরা বাইরে অপেক্ষা করে পর্যায়ক্রমে প্রবেশ করবেন৷হাটে প্রবেশের পথে শরীরের তাপমাত্রা মাপা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে৷ হাটের ভিতরেও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা৷ হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও রাখতে হবে প্রতিটি হাটে৷ এছাড়া হাটে আইসোলেশন সেন্টার ও মেডিকেল টিম থাকবে৷ তারা প্রয়োজন হলে কাউকে দ্রুত আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাবে৷ থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত, সিটি কর্পোরেশনের টিম এবং জাল টাকা চিহ্নিত করার বুথ৷ কোনও হাটে জোর করে গরু নেয়া যাবে না৷ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘আমরা এই শর্তগুলো পালনে ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়াও আমাদের নিজস্ব টিম নিয়োগ করছি৷ ইজারাদাররা শর্ত না মানলে তাঁদের ইজারা বাতিল করা হবে৷ আর ক্রেতা বা বিক্রেতা যাঁরাই স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না, মাস্ক পরবেন না, তাঁদের জরিমানা-সহ শাস্তির মুখে পড়তে হবে৷’তিনি জনান, নারী, শিশু, বয়স্ক লোক এবং অসুস্থ কাউকে হাটে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ আর সম্ভব হলে অনলাইনে কোরবানির পশু কিনতে বলা হয়েছে৷ এবার করোনার কারণে অনলাইন গরুর হাটকে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷১৩ জুলাই দেশব্যাপী ডিজিটাল কোরবানির পশুর হাট শুরু হয়েছে৷ আইসিটি ডিভিশন ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যৌথ ব্যবস্থাপনায় এই ‘অনলাইন হাট’ পরিচালিত হচ্ছে৷ এক হাজার ৮৪৩ টি অনলাইন শপের মাধ্যমে ২৪১টি হাটকে এই অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত করা হয়েছে৷গত বছর এক কোটি ১৮ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল, কিন্তু করোনার কারণে বিক্রি হয়েছে ৯৪ লাখ পশু৷ এবছর এক কোটি ১৯ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে৷ অনলাইন শপের মাধ্যমে এবার রেকর্ড সংখ্যক কোরবানির পশু বিক্রির আশা করা হচ্ছে৷বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল জানান, গত বছর অনলাইনে ২৭ হাজার কোরবানির গরু বিক্রি হয়েছিল৷ এবার টার্গেট করা হয়েছে এক লাখের মতো৷ তবে পরিস্থিতি দেখে তারা মনে করছেন বিক্রি আরও বেশি হবে৷ করোনা এবং ব্যাপক প্রচারের কারণে অনলাইন হাটের প্রতি আগ্রহ এবার বাড়ছে৷ অনলাইনে ছবি ও ভিডিয়ো দেখেই গরু কিনতে হবে৷ তবে খামার বা হাটের পাশে কারো বাড়ি হলে দেখার সুযোগ থাকবে৷ আর তা না হলে গরুটি সরবরাহের সময়ই দেখা যাবে৷ তবে অনলাইনে দেখা গরু আর বাস্তবের গরুর মিল না থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইন অনুযায়ী সমাধান হবে৷ তমাল বলেন, ‘এজন্য অনলাইনে অভিযোগের ব্যবস্থা আছে৷ ভোক্তা অধিদপ্তরেও অভিযোগ করা যাবে৷ আর এর নিস্পত্তি দ্রুতই হবে, যাতে কোনও ব্যক্তির কোরবানি বাধাগ্রস্ত না হয়৷’ ঢাকায় এবার অনলাইনে গরু কিনে কোরবানির দায়িত্বও দেওয়া যাবে৷ অনলাইন হাট থেকে একদম কোরবানি করে বাড়িতে মাংস পৌঁছে দেওয়া হবে৷