লোপামুদ্রা মিত্র
ꦏপ্রতুলদার সঙ্গে আলাপ বহু বছর আগে। তখনও আমার গানের রেকর্ড বের হয়নি। সবে গান গাই। আলাপ বইমেলার মাঠে। বিজল্প প্রকাশনা সংস্থার একটি অনুষ্ঠান ছিল সেদিন। সেখানেই। প্রতুলদা তখন খালি গলায় গান গাইছেন। আমি তখন খালি গলায় গাইতাম না, কিন্তু গাইতে পারতাম। ধীরে ধীরে প্রতুলদার গানের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। একেবারে অন্যরকম ওই মানুষটির সঙ্গে আমাদের বেশ হৃদ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রচুর অনুষ্ঠান দুজনে একসঙ্গে করেছি। তখন নতুন ধরনের গানের জোয়ার। এমনিতে প্রতুলদা আমাদের থেকে অনেকটাই বড়। বহু আগে থেকেই তিনি গান করছেন। কিন্তু জনপ্রিয়তার নিরিখে যদি দেখি, তাঁর ও আমাদের সময়টা এক।
আরও পড়ুন - ꦉ‘এই শহর তোমার এখনও ভালো লাগে, প্রতুলদা?’, চমকে উঠি স্মৃতির মাঝে হাতড়াতে গিয়ে
ꦅপ্রতুলদা তখনও ব্যাংকে চাকরি করেন। একবার দেখা করতে গিয়ে কথায় কথায় বলেছিলাম, ‘তোমার মতো যদি এমন কারচুপি করতে পারতাম, তাহলে গানকে পেশা না করে নেশা করতাম।’ প্রতুলদার কাছে গান কিন্তু নেশা। তাই প্রতুলদা অত বড় একজন শিল্পী। কিন্তু গানকে আমাদের পেশা করতে হয়েছে। ফলে প্রচারের আলো উপেক্ষা করতে পারি না। আমার জীবনে আমি দুজন প্রচারবিমুখ মানুষকে দেখেছি — সমীর চট্টোপাধ্যায় (আমার গান যিনি তৈরি করতেন) ও প্রতুলদা। প্রচারের আলোয় তাঁদের কিছু যায় আসত না। সৃষ্টির আনন্দে মেতে থাকতেন নিজের মতো। আজ এত বছর পেরিয়ে এসে প্রচারের আলো আর সবসময় ভালো লাগে না। আমাদের মুখ ঢেকে গিয়েছে বিজ্ঞাপনে! এই পরিস্থিতিতে প্রতুলদা এক মস্ত ইন্সপিরেশন।
আরও পড়ুন - 🦄‘ভবঘুরেরাও বিভোর হয়ে শুনত ওঁর গান’ যতটা সম্মান প্রাপ্য, ততটা পাননি প্রতুলবাবু
🧸প্রতুলদা যে সময়ের মানুষ সেই সময়ের নানা উত্তাল টালমাটাল চিত্র তাঁর গানে ফিরে ফিরে এসেছে। এছাড়াও, বহু গান উনি তৈরি করেছেন, যা শুনলে ধরা পড়ে ‘প্রতুলদা’র সাক্ষর। প্রচুর কবিতা গান তৈরি করেছেন। আমি আর প্রতুলদাই বোধহয় সেই অর্থে এত কবিতা গান গেয়েছি। প্রতিবাদের মতো শোনালেও তাঁর বেশ কিছু গানের প্রেক্ষিত ‘প্রতিবাদ’ শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে খারাপই লাগে। বরং আমার মতে, প্রতুলদার গানগুলো তাঁর এক-একটা বিশ্বাস। তিনি যা বিশ্বাস করতেন, তা-ই ফুটে উঠত তাঁর গানে। তা-ই হয়ে উঠত মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের মাধ্যম।
💫প্রতুলদা এমন একজন, যার জন্য আজও এইভাবে গান গাওয়ার সাহস পাই। প্রতুলদা এমন একজন, যিনি বরাবর কোনও ইনস্ট্রুমেন্ট ছাড়াই অন্যরকমভাবে গান করেছেন। খালি গলাতেই শ্রোতাদের আকর্ষণ করেছেন দিনের পর দিন। এমন আর দ্বিতীয় একজন হবেন না, এটাই দুঃখের। বয়সের অমোঘ টান সবাইকেই স্বীকার করতে হয়। তাই প্রতুলদা নেই, কিন্তু তাঁর গান চিরকাল থেকে যাবে।
(অনুলিখন - সংকেত ধর)