গ্রেগ চ্যাপেল যখন নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন, তখন তাঁর পতন হয়েছিল। অনিল কুম্বলে আবার বিরাট কোহলিদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির অবসরের পর, বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে গৌতম গম্ভীর সেই বিরল ভারতীয় প্রধান কোচ হতে চলেছেন, যিনি অধিনায়কের চেয়েও বেশি ক্ষমতার অধিকারী হবেন।
ভারতীয় ক্রিকেট এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যখন খেলোয়াড়দের শক্তির সামনে শক্তিশালী কোচকেও পিছু হটতে হয়েছে। বিষেণ সিং বেদী, গ্রেগ চ্যাপেল এবং অনিল কুম্বলে নিজেরাই চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও, বুঝতে পারেননি যে তাঁদের ক্ষমতা দলের মেগাস্টার প্লেয়ারদের পরে। জন রাইট, গ্যারি কার্স্টেন এবং রবি শাস্ত্রী সেটা জানতেন এবং যে কারণে তাঁরা অত্যন্ত সফল হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির ঘোষণা শুনেই বিমান থেকে সটাং নেমে পড়েন রিকি পন্টিং, পুরো দল পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী PBKS-ও
বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবসরের পর, টেস্ট দলে খুব বেশি মেগাস্টার আর নেই। যে কারণে গম্ভীর এখন সুপার পাওয়ারের অধিকারী। বিসিসিআই-এর সূত্রদের দাবি অনুযায়ী, গম্ভীরের মূল লক্ষ্যই ছিল দলে তারকা সংস্কৃতির অবসান করা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসিআই-এর এক সূত্র পিটিআইকে জানিয়েছেন, ‘গৌতম গম্ভীরের যুগ এখন শুরু হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে, পরবর্তী বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রের সময় ভারতের নতুন মুখ থাকা দরকার।’
সঙ্গে সেই সূত্র যোগ করেছেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত সকলেই জানতেন যে, দীর্ঘতম ফরম্যাটে সিনিয়রদের বহন করার ক্ষেত্রে গম্ভীরের অবস্থান ঠিক কী! স্পষ্টতই তাঁর এবং নির্বাচকদের চেয়ারম্যান অজিত আগরকরের চিন্তাভাবনা একই রকম ছিল।’
ভারতীয় ক্রিকেটে অধিনায়ক সব সময়েই সেই কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব, যাঁর ক্ষমতা কোচদের থেকে বেশি থাকত। এমন কী কোচ যতই শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হোন না কেন! সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা- এঁরা অধিনায়ক থাকার সময়ে নিজেদের নেতৃত্বাধীন দল নিয়ে শেষ কথা বলতেন। কিন্তু গম্ভীর সেই পথে হাঁতে রাজি নন। তিনি নিজে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠলেন এবং তাঁর কথাই শেষ।
রাহুল দ্রাবিড়-রোহিত শর্মার জুটির যাত্রা সংক্ষিপ্ত কিন্তু ঘটনাবহুল ছিল, রোহিত শর্মা-গম্ভীরের মতো নয়, যা কখনও-ই সুখী বিবাহ বলে মনে হয়নি। যদিও কোহলির সঙ্গে, গম্ভীর ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।
এই প্রথম বার কোনও কোচ মেগা তারকাদের দ্রুত পর্যায়ক্রমে বাদ দেওয়ার পথে এগিয়ে গেলেন। এটা বোঝা যাচ্ছে যে, গম্ভীর চেয়েছিলেন বিসিসিআই তাঁকে যথাযথ ভাবে ক্ষমতায়িত করুক, যাতে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি এবং ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজের মতো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি আর না হয়।
শুভমন গিলের মতো একজন তরুণ অধিনায়ক তাঁর কাছে থাকবে, যিনি তাঁর কথা শুনবে, অন্তত যতক্ষণ না তিনি তাঁর নিজের জায়গা তৈরি করতে পারছেন। গিল একজন সুপারস্টার, কিন্তু এখনও গম্ভীরের সিদ্ধান্ত এবং কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো পর্যায়ে পৌঁছাননি।
একমাত্র ব্যক্তি যাঁর প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা থাকতে পারত, তিনি হলেন জসপ্রীত বুমরাহ, কিন্তু তাঁর দুর্বল ফিটনেসের কারণে তাঁর নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। অতএব, গম্ভীরের হাতেই অদম্য শক্তি থাকবে, টি-টোয়েন্টি সেট-আপের মতোই তিনি টেস্টে একচ্ছত্র অধিপতি হবেন। একমাত্র যে সেটআপে তাঁকে এখনও সাবধানে পা রাখতে হবে, সেটা হল ওয়ানডে, যেখানে কোহলি এবং রোহিত এখনও ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে লক্ষ্য রাখছেন।