মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ ইস্যুতে মুখ খুলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার ট্রাম্পের মন্তব্যের 'ব্যাখ্যা' দিলেন বাংলদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এক ফেসবুক পোস্টে এই ইস্যুতে আসিফ নজরুল লেখেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মোদীর বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ট্রাম্প যা বলেছে, সেটাকে কয়েকটা মিডিয়া ভুল ভেবে প্রচার করছে। ডেইলি স্টারের বাংলা ভার্সনে যেমন হেডিং দিয়েছে - 'বাংলাদেশের বিষয়গুলো মোদীর হাতে ছেড়ে দিচ্ছি : ট্রাম্প'। ডেইলি স্টারকে দেখাদেখি আরও কয়েকটা মিডিয়াও একই টাইপ মিসলিডিং শিরোনাম করেছে। তাদের এসব শিরোনাম দেখে এবং নিউজ দেখে মনে হচ্ছে ট্রাম্প যেন মোদীকে দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশ ইস্যু ডিল করার জন্য। আপনারা যারা এই নিউজটা করবেন, খুব মনোযোগ দিয়ে অনলাইন থেকে ওই ভিডিয়োটা দেখবেন।' (আরও পড়ুন: ♈মোদীর ওপর বাংলাদেশ ইস্যু ছেড়ে দিলেন ট্রাম্প, কী বলছে ওপারের সংবাদমাধ্যম?)
আরও পড়ুন: 🐎মোদী আমেরিকা ছাড়তেই নয়া শুল্ক চাপানোর পথে আমেরিকা, বড় ঘোষণা ট্রাম্পের
এরপর আসিফ নজরুল আরও লেখেন, 'ইংলিশের ওপর মোটামুটি লেভেলের দক্ষতা থাকলেই বুঝবেন সেখানে কোন প্রেক্ষাপটে এবং কীভাবে কনভারসেশন চলছিল। ট্রাম্পকে এক ইন্ডিয়ান সাংবাদিক যে প্রশ্নটা করেছিল, তার সামারি হল - বাইডেন প্রশাসনের সময় বাংলাদেশে রেজিম চেঞ্জ (হাসিনার পতন) ইস্যুতে আমেরিকার ডিপ স্টেটের ভূমিকা আছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? উত্তরে ট্রাম্প বলেছেন - না, আমেরিকার ডিপ স্টেটের কোনোই ভূমিকা নেই। এবং তারপর চোখেমুখে বিরক্তি নিয়ে মোদির দিকে ইঙ্গিত করে (যেহেতু ইন্ডিয়ান সাংবাদিক মনগড়া তত্ত্ব প্রচার করতে চাচ্ছিল, তাই ইন্ডিয়ান প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকে রেফার করে দিয়ে) ট্রাম্প বলেছেন বাংলাদেশ ইস্যুতে ওই প্রশ্নের উত্তরটা মোদির ওপর ছেড়ে দিলাম! মানে, বাংলাদেশ সংক্রান্ত ওই প্রশ্নটার উত্তর মোদিকে দিতে বলেছিলেন ট্রাম্প। এই হলো ঘটনার সামারি।' (আরও পড়ুন: ✃'ভারতের মতো গণতন্ত্রে CJI কীভাবে...', বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ধনখড়ের)
🧸আসিফের পোস্টে আরও লেখা হয়, 'আর এইবার চিন্তা করেন যারা এই হেডলাইন করছে যে– বাংলাদেশের বিষয়গুলো মোদির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি, তারা ঠিক কী বুঝে এই শিরোনাম করছে? অন্যদের কথা বাদ। ডেইলি স্টার ইংলিশ টু বাংলা অনুবাদ পারে না- এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে জনগণকে ম্যানিপুলেট কেন করতে চান আপনারা? আর অন্য যেসব মিডিয়া এই টাইপ কাজ করতেছেন, জাস্ট ধুপধাপ কপি পেস্ট না করে একটু কনভারসেশনটা শুনে আসুন। শুনে তারপর খবর প্রকাশ করুন। এখন কিন্তু আর ওই যুগ নেই যে যেমন খুশি তেমন মিসইন্টারপ্রেট করে জনগণকে যা গেলাইতে চাইবেন, জনগণ সেটাই গিলবে! অনেক সুযোগসন্ধানী লোকজন আছেন, যারা এই খবরটা ম্যানিপুলেট করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করবে। দেশপ্রেমিক সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা সত্যটা প্রচার করুন এবং সঠিক সংবাদ পরিবেশন করে সবার কাছে প্রকৃত সত্যটা উপস্থাপন করুন। এতে করে যারা মিসলিডিং শিরোনাম দেখে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে সবাই সচেতন থাকতে পারবে। আর কী হেডলাইন দিলেন আপনারা? একটা কনভারসেশন এর অনুবাদ কীভাবে করতে হয় এইটুকু বেসিক জ্ঞানটুকুও নাই? নাকি আপনারা মনে করেন যে ইচ্ছাকৃতভাবে ম্যানিপুলেট করে মানুষকে ভুল বার্তা দেবেন?'
𝔍প্রসঙ্গত, আমেরিকা সফরে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগে ইলন মাস্কের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এরপর ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি উত্থাপিত হয়েছিল বাংলাদেশ ইস্যুটিও। পরবর্তীতে এই নিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, 'বাংলাদেশের বিষয়টা প্রধানমন্ত্রী মোদীর ওপরেই ছাড়লাম।' আর ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর আস্থাভাজন মাস্কের সঙ্গে ফোনে কথা হল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের। বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার সময় ফোনে কথা হয় মাস্ক এবং ইউনুসের।
♑উল্লেখ্য, মার্কিন সরকারের খরচ কমাতে বড় ভূমিকা পালন করছেন মাস্ক। এর আগে ইউএস এইডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। এই আবহে সম্প্রতি ইউএস এইডের মাধ্যমে সব সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর জেরে বাংলাদেশে আটকে গিয়েছে বহু প্রকল্প। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনুসের সরকার। এহেন পরিস্থিতিতে মাস্কের সঙ্গে ইউনুসের ফোনালাপ হয়েছে। এই নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টার অফিসের তরফ থেকে ডেপুটি প্রেস সচিব জানিয়েছেন, আলোচনার বিস্তারিত যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে।
♕সম্প্রতি ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা USAID বাংলাদেশে তাদের সব প্রকল্পের কাজ বন্ধের জন্যে নির্দেশিকা জারি করেছে। এরই মাঝে সম্প্রতি আবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে ঢাকায় দেখা করেন মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন। সেখানেই ফের মার্কিন সাহায্য চালুর জন্যে ট্রেসির কাছে আবেদন জানান মহম্মদ ইউনুস। এদিকে সম্প্রতি আবার এনডিটিভির একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই USAID-এর অর্থ ঘুর পথে হাসিনার সরকারকে নাড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে এককালে।
🎐প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের বিদায়ের নেপথ্যে আমেরিকার হাত থাকা নিয়ে চর্চা, তর্ক চলেছে বহুদিন। যদিও সম্প্রতি মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরে ট্রাম্প দাবি করেন, ঢাকায় পালা বদলে মার্কিন ডিপ স্টেটের কোনও ভূমিকা নেই। এরই সঙ্গে তিনি 'বাংলাদেশের বিষয়টি মোদীর ওপর ছেড়ে দেন'। এই নিয়ে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, 'বাংলাদেশ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি নিয়ে তাঁর উদ্বেগ এবং ভারত কীভাবে এই পরিস্থিতি দেখে, তা তিনি ট্রাম্পকে জানিয়েছেন।'